রাজ্যের নির্দেশে অখুশি অনেকেই
গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির জোর পাঠকের পছন্দে
রাজ্য গ্রন্থাগার দফতরের নির্দেশ কার্যকর করতে শুরু করেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন গ্রন্থাগার। বুধবার থেকেই গ্রন্থাগার দফতরের নির্দেশ মতো সংবাদপত্র কেনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন গ্রন্থাগারে। তা নিয়ে পাহাড় থেকে জঙ্গলমহল, সর্বত্রই পাঠকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত গ্রন্থাগারের পাঠকদের একাংশের পক্ষ থেকে বাড়তি চাঁদা দিয়ে বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রগুলি কেনার প্রস্তাব কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়ায় জেলা গ্রন্থাগার সহ কয়েকটি এলাকায় কয়েকজন ক্ষুব্ধ পাঠক নিজেরাই বাড়তি অন্তত দুটি কাগজ কেনার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। পুরুলিয়া জেলা গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল বৈঠক ডাকা হয়েছে। তত দিন পর্যন্ত আগের মতো সব কাগজই কেনা হবে বলে জেলা গ্রন্থাগার সূত্রের খবর। পাশাপাশি, সরকারি নির্দেশ বাতিলের দাবিতে উত্তর দিনাজপুরে জেলা গ্রন্থাগারিকের দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে এসএফআই ও ডিওয়াইএফ সমর্থকেরা। কোচবিহারে গণসাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে নেমেছে এসএফআই। ‘কনটেম্পোরারি আর্টিস্ট অব নর্থ ইস্ট’ নামে জলপাইগুড়ির চিত্রশিল্পীদের সংস্থার পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে নির্দেশ বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। সংস্থার সভাপতি নীহার মজুমদার বলেন, “বহুল প্রচারিত কয়েকটি সংবাদপত্রের শনিবারের সংস্করণের সাম্প্রতিক শিল্পকর্ম নিয়ে নানা লেখালেখি হয়। সেগুলি গ্রন্থাগারে রাখা বন্ধ হলে দুঃস্থ চিত্রশিল্পীরা সে সব সংবাদ থেকে বঞ্চিত হবেন। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী নিজেও ছবি আঁকেন। আশা করছি তিনি বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবেন।”
রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় জেলা গ্রন্থাগারের সামনে বিক্ষোভ এসএফআইয়ের।
বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন তরুণ দেবনাথ।
সরকারি নির্দেশ মেনে বুধবার থেকেই শিলিগুড়ির বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ মহকুমা গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ বাছাই তিনটি সংবাদপত্র রাখা শুরু করেছেন। গ্রন্থাগারের সদস্য অলক সরকার বলেন, “সংবাদপত্রের খেলাধুলা সংক্রান্ত খবর পড়তেই লাইব্রেরিতে আসি। যে কয়েকটি সংবাদপত্র রাখা হচ্ছে সেগুলো পড়ে শান্তি পাচ্ছি না। এমন সিদ্ধান্তের কারণও আমার কাছে স্পষ্ট নয়।” আর এক সদস্য কৌশিক কুণ্ডু বলেন, “এই এলাকায় অনেকগুলো লাইব্রেরি রয়েছে। সবকটি কাগজ মিলেমিশে সমস্ত লাইব্রেরিতে রাখা যেতে পারত। তা ছাড়া চাকরি সংক্রান্ত ম্যাগাজিনগুলোর ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশ কী সেটাও জানি না। তা হলে আমাদের মতো বেকার ছেলেদের লাইব্রেরিতে আসার প্রয়োজনই ফুরিয়ে যাবে।” একই ক্ষোভ দেখা গিয়েছে শিলিগুড়ির অতিরিক্ত জেলা গ্রন্থাগার, মিলনপল্লি, প্রধাননগর দেওকোটা গ্রামীণ গ্রন্থাগারেও। পাঠকদের ক্ষোভ আঁচ করতে পেরেই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারি নির্দেশ কার্যকর করেননি শিলিগুড়ির রথখোলার জ্ঞানদা সুন্দরী গ্রামীণ গ্রন্থাগারের আধিকারিক তৃণমূল প্রভাবিত বঙ্গীয় সাধারণ গ্রন্থাগার ও কর্মী কল্যাণ সমিতির জেলা সম্পাদক নন্দিতা সিংহ। তিনি অবশ্য বলেন, “সরকারি নির্দেশে আপত্তির কিছু পাইনি। তবে পরিচালন সমিতির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকারি নির্দেশ কার্যকর করার পরিকল্পনা নেব।” গ্রন্থাগারে সংবাদ পত্র নিয়ে রাজ্য সরকারের ফতোয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে জলপাইগুড়ি জেলা গ্রন্থাগারের পরিচালন সমিতিতে। সরকারি এই গ্রন্থাগারের পরিচালন সমিতি আগামী ৫ এপ্রিল এ বিষয়ে আলোচনা করতে বৈঠকে বসতে চলেছেন। গ্রন্থাগারের সহ সম্পাদক গৌতম গুহরায় বলেন, “সংবাদপত্র নিয়ে সরকারের নির্দেশ পেয়েছি। সরকারি সিদ্ধান্তে আমরা বিস্মিত। এই নির্দেশ কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৫ এপ্রিল বৈঠকে বসব।” পরিচালন সমিতির সদস্যরা নিজেরা অর্থ দিয়েই বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র গ্রন্থাগারে রাখবেন বলে প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরিচালন সমিতির এক সদস্যের কথায়, “কোনও পরিস্থিতেই পাঠককে বঞ্চিত করতে পারব না।” জলপাইগুড়ি পাবলিক লাইব্রেরি এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক শ্যামাপদ সাধ্য জানান, জেলায় ১১০টি গ্রন্থাগার রয়েছে। গ্রন্থাগারগুলিতে কোন কোন খবরের কাগজ থাকবে তা পাঠকদের সঙ্গে কথা বলে রাখেন গ্রন্থাগারিকরা। সংবাদপত্র কেনা নিয়ে সরকারি নির্দেশের জেরে পাঠকদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “কয়েক দিনের মধ্যে সংগঠনের মিটিং ডেকে সরকারি নির্দেশের প্রতিবাদ জানিয়ে তা প্রত্যাহার করার জন্য বলব।” আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত জেলা গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক জীবন কুমার রক্ষিত বলেন, “পছন্দের সংবাদপত্র না-পেয়ে পাঠকরা অভিযোগ জানিয়েছেন।” কালচিনি ব্লকের রাজাভাতখাওয়া মিলন মন্দির ক্লাবের পাঠাগারের সম্পাদক গৌরাঙ্গ ভট্টাচার্য সাফ জানান, সরকারি ওই নির্দেশ তাঁরা মানবেন না। অনুদান বন্ধ করা হলে আন্দোলনে নামবেন। হ্যামিলটনগঞ্জের অগ্রদূত পাঠাগার এবং আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের সোনাপুর ক্লাব কাম লাইব্রেরির কর্মীরাও এই নির্দেশে উদ্বিগ্ন। মালবাজার মহকুমা শহরের প্রগতি সংঘ পাঠাগারের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সুরজিত ভাওয়াল বলেন, “সরকারি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অন্য সংবাদপত্র রাখব বলে ঠিক করেছি।” গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরীর জেলা উত্তর দিনাজপুরে ৫৫ টি গ্রন্থাগার রয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজ্য গ্রন্থাগার দফতরের ওই নির্দেশিকা জেলা গ্রন্থাগারে পৌঁছয়। গ্রন্থাগারগুলিতে কোন কোন সংবাদপত্র রাখা যাবে তা নিয়ে সরকারি নির্দেশের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছে সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠন এসএফআই এবং ডিওয়াইএফের উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটি। এদিন দুপুর দেড়টা থেকে দুটি সংগঠনের শতাধিক সদস্য প্রায় দুঘন্টা রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় জেলা গ্রন্থাগারের সামনে বিক্ষোভ দেখান। বহুল প্রচারিত যে সমস্ত বাংলা ও ইংরেজি সংবাদপত্র গ্রন্থাগারগুলির নাম সরকারি তালিকায় নেই সেগুলি গায়ে সাঁটিয়ে আন্দোলনকারী বিক্ষোভ দেখান। জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক মনোঞ্জয় রায় জানান, আন্দোলনকারীদের দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” সরকারি নির্দেশিকা ঘিরে কোচবিহারের বিভিন্ন মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবিতে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পাঠায় নিখিল ভারত ন্যায়বাদী ছাত্রসমাজ। তাঁদের অভিযোগ, ওই সরকারি নির্দেশিকা অগণতান্ত্রিক। সংগঠনের সম্পাদক তাপস বর্মন বলেন, “ওই নির্দেশিকা স্বাধীনতার আর্দশ বিরোধী। তাই ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে ফ্যাক্স করেছি।’’ সরকারি নির্দেশিকাকে ঘিরে পাঠকদের ক্ষোভ সামাল দিতে মেখলিগঞ্জের ভোটবাড়ি প্রগতি সঙ্ঘ ও লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ রবিবার পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকেছেন। ওই পরিচালন সমিতির সম্পাদক দীপক অধিকারী বলেন, “পাঠকের পছন্দ মেনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র রাখি। পাঠকদের চাহিদাকেই গুরুত্ব দিতে চাইছি। রবিবার পরিচালন সমিতির বৈঠকে আলোচনা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.