প্রমীলাদেবীদের ঘিরে রেখেছেন প্রতিবেশীরাই
রাতে বাড়ির চালে ঢিল পড়ছে। গভীর রাতে বাড়ির সামনে থামছে মোটরবাইক। আবার কখনও ভোরবেলায় জানালার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে কেউ। চাপা গলায় বলে যাচ্ছে, মামলা না তুললে বাড়ির অন্য দু’টি শিশুকেও খুন করা হবে।
আতঙ্কে সিঁটিয়ে রয়েছেন উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখর থানার মালকুণ্ডা গ্রামের ওই পরিবারের কর্তা গণেশ রায় এবং তাঁর স্ত্রী প্রমীলাদেবী। ওই দুই শিশু ৫ বছরের মৌসুমী ও ৩ বছরের ঝর্নার কথা ভেবেই ভিটে ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা পর্যন্ত ভাবছিলেন তাঁরা। কিন্তু ভরসা জুগিয়েছেন কয়েকজন প্রতিবেশীই। যাঁরা জানাচ্ছেন, প্রমীলাদেবীরা যদি সত্যিই ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান, তা হলে দুষ্কৃতীদেরই প্রতাপ বাড়বে। প্রতিবেশী বর্ষাতু রায় বলেন, “ওই পরিবার খুবই ভয়ে আছে। কোথাও যেতে পারছেন না তাঁরা। রোজগার বন্ধ। আমরাই তাই পালা করে সাহায্য করছি। রাত নামলেই তাঁদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গণেশবাবুরা গ্রাম ছেড়ে চলে গেলে অভিযুক্তদের সাহস আরও বেড়ে যাবে। এটা হতে দেওয়া যায় না।” তাঁর প্রশ্ন, “দেশে কি আইনকানুন বলে কিছু নেই?”
গত নভেম্বর থেকে এই হুমকি আর ভয়ের পরিবেশে বাস করছেন প্রমীলাদেবীরা। পাশেই থাকেন তাঁর বিবাহিত ননদ। নভেম্বরে তাঁর ওই ননদকে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত পরশ রায় এলাকার পরিচিত কংগ্রেস কর্মী। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তারপরে জামিনে মুক্তি পান। তিনি এরপরে গ্রামে ফিরে আসার পর থেকে প্রমীলাদেবী ও তাঁর ননদের পরিবারের উপরে ধর্ষণের মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া শুরু হয়। শুরু হয় হুমকিও।
শিশুহত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের বন্ধ বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু বহু চাপাচাপিতেও প্রমীলাদেবীরা অনড় থাকায় ১১ মার্চ তাঁদের বাড়িতে গিয়ে ওই মামলা তুলে নিতে বলেন পরশবাবু সহ কয়েকজন। রুখে দাঁড়ান গণেশবাবু। শুরু হয় সংঘর্ষ। তখনই ঘরের দাওয়া থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় প্রমীলাদেবীর দেড় বছরের ছেলে বিক্রমকে। গত মঙ্গলবার বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে বিক্রমের দেহ উদ্ধার হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় গণেশবাবুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কিন্তু পরশবাবু এখনও অধরা।
প্রমীলাদেবীর কথায়, “রাত নামলেই ঢিল পড়ছে। আমার আরও দু’টি বাচ্চাকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবেশীরা পুলিশকে সে কথা জানিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন কাউকে ধরতে পারে না কেন? আমাদের কী সুস্থ ভাবে বাঁচার অধিকার নেই?”
এই প্রশ্নের উত্তরে ইসলামপুরের এসডিপিও নীলকান্ত সুধীর কুমারের দাবি, “ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। শিশু খুনের মামলাতেও দু’জনকে ধরা হয়েছে। বাকি ৯ জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” এসডিপিও-র বক্তব্য, এলাকায় নজরদারি জারি রয়েছে।
কিন্তু, নজরদারি থাকলে এখনও কেন হুমকি শুনতে হচ্ছে ওই পরিবারকে? রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের আইজি সঞ্জয় সিংহ বলেন, “ওই পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে জেলার পুলিশ সুপারকে বলেছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতেও বলেছি। কোনও গাফিলতি হলে কড়া ব্যবস্থা নেব।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছিল, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে পুলিশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। গোয়ালপোখর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা কংগ্রেস নেত্রী অনিতা পাল বুধবারও দাবি করেছিলেন, প্রমীলাদেবীরা ষড়যন্ত্র করে পরশবাবুকে ‘ফাঁসিয়েছেন’। তবে এদিন তিনি বলেন, “আমাদের দলকে এ সবের সঙ্গে জড়ানো ঠিক নয়। আমরা গোড়ায় বলেছিলাম, পরশবাবুকে ধর্ষণের মামলায় জড়ানো ঠিক হয়নি। কিন্তু, ঘটনা মারাত্মক পর্যায়ে গিয়েছে। ওই পরিবারকে কে বা কারা ভয় দেখাচ্ছে, তা পুলিশকে দেখতে হবে। দোষীদের খুঁজে বার করা উচিত।” ছেলের অন্ত্যেষ্টি করার জন্য ৩ দিনের জন্য অন্তর্বর্তী জামিনে গণেশবাবু ছাড়া পেয়েছেন। তাঁর একটি হাত ভেঙে গিয়েছে। তাঁকে ফের জেলে যেতে হলে দু’টি ছোট মেয়েকে নিয়ে প্রমীলাদেবীকে থাকতে হবে। গণেশবাবু বলেন, “এলাকার কিছু মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাতেই এখনও বেঁচে রয়েছি। বোন ও ভগ্নিপতিও বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছে। লোকজনের দয়ায় খাবার জুটছে। কিন্তু এ ভাবে কদিন চলবে কে জানে?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.