সরকারি নির্দেশ মেনে অনেক গ্রন্থাগারেই আনন্দবাজার পত্রিকা এবং দ্য টেলিগ্রাফ রাখা বন্ধ হয়েছে। তবে এই ‘বিতর্কিত’ নির্দেশ যাঁর দফতর দিয়েছে, রাজ্যের সেই গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরীর বাড়িতেই ওই দু’টি পত্রিকা বন্ধ হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালেও মন্ত্রীর ইসলামপুরের বাড়ির বৈঠকখানায় পৌঁছেছে দু’টি কাগজই। ভবিষ্যতেও যে আসা বন্ধ হবে না, তা-ও জানিয়েছে ওই পরিবার।
সরকারি গ্রন্থাগারে নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও তাঁদের বাড়িতে যে আনন্দবাজার পত্রিকা বন্ধ করা হবে না, সে কথা হকারকেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রীর বাড়ির লোকজন। মন্ত্রীর ছেলে মেহতাব চৌধুরীর কথাই ধরা যাক। তিরিশোর্ধ্ব মেহতাব গ্রন্থাগার মন্ত্রীরই আপ্ত-সহায়ক হিসেবে সরকারি ভাবে নিযুক্ত। তিনি বললেন, “ছোটবেলা থেকে দেখছি সকালবেলায় আমাদের বাড়ির গোলঘরে ১৫টি সংবাদপত্র আসে। তার মধ্যে আনন্দবাজার থাকে। এখনও আছে।” তিনি জানান, আত্মীয়স্বজন মিলে বাড়িতে ১৫টি পরিবার একসঙ্গে থাকে। বড় পরিবার। তাই এতগুলি সংবাদপত্র রাখা হয়। মেহতাবের কথায়, “আমি যত দূর জানি, গ্রন্থাগারে সংবাদপত্র কেনা নিয়ে নিষেধাজ্ঞার পিছনে আর্থিক কারণও রয়েছে। তাই গ্রন্থাগারের সঙ্গে আমাদের বাড়ির পরিস্থিতি গুলিয়ে ফেললে চলবে না। আমরা আনন্দবাজার পত্রিকা-সহ ১৫টি পত্রিকা আগে রাখতাম। ভবিষ্যতেও রাখব। সবই পড়া দরকার। বাবাও তাই-ই মনে করেন।”
এক সঙ্গে এতগুলি সংবাদপত্র রাখার সামর্থ্য যাঁদের নেই, তাঁদের অনেকেই গ্রন্থাগারে গিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন। এমনকী, উত্তর-পূর্ব ভারতের চিত্রশিল্পীদের সংগঠন ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে অবশ্য মেহতাবের বক্তব্য, “কোনও পত্রিকা কাউকে পড়তে তো নিষেধ করা হয়নি! কে, কী ভাবে কোথায় পড়বেন সেটা তাঁকেই ঠিক করতে হবে। ইচ্ছে হলে স্টলে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে নিতে হবে।”
গ্রন্থাগার মন্ত্রীর বাড়ির লোকজন সব কাগজ পড়াটাই জরুরি বলে মনে করেন। কিন্তু সেই সুযোগ থেকে সরকারি গ্রন্থাগারের পাঠকদের কেন বঞ্চিত করা হবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন ইসলামপুরের পুরপ্রধান, কংগ্রেস নেতা কানাইয়ালাল অগ্রবাল। তিনি বলেন, “বাড়িতে এক নিয়ম আর বাইরে আর এক, তা হতে পারে না। গ্রন্থাগারে কোন সংবাদপত্র কেনা হবে তা নিয়ে, নির্দেশ জারি করা সঠিক নয়। আমরা শহর জুড়ে ধিক্কার মিছিল বের করব।” ইসলামপুরেরই বাসিন্দা, সিপিএমের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য স্বপন গুহ নিয়োগীও গ্রন্থাগার মন্ত্রীর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, “উনি নিজের চাহিদা পূরণ করতে বাড়িতে এতগুলো কাগজ রাখছেন। অথচ গ্রন্থাগারের পাঠকদের চাহিদার কথা মাথায় রাখছেন না। এটা মানুষ মানতে পারবেন না।” |