দুঃস্থ রোগীদের নিখরচায় ওষুধ সরবরাহের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৫০ লক্ষ টাকা। অথচ তা দিয়ে ওষুধই কিনতে পারল না জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সময় মতো সরকারি নির্দেশ না-পাওয়ায় ওষুধ কেনার এই টাকা ব্যবহার করা যায়নি, লিখিতভাবে দিন কয়েক আগে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে তা জানিয়ে টাকা ফেরত পাঠিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। শুধু তাই নয়, দেরি করে বরাত দেওয়ায় আরও প্রায় ২০ লক্ষেরও বেশি টাকার ওষুধ মার্চের মধ্যে সরবরাহ হবে কি না তা নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাতে ওই টাকাও ফেরৎ যাবে। সব মিলিয়ে ওষুধ কেনার জন্য ১ কোটি টাকার কাছাকাছি বরাদ্দ চলতি আর্থিক বছরের জলপাইগুড়ি জেলা থেকে ফেরৎ যাওয়ার উপক্রম। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আর্থিক বছরের শেষ দিন তথা ৩১ মার্চের মধ্যে ওষুধ কেনার কথা। তা সম্ভব নয় বলে এই টাকা ফেরৎ যাচ্ছে। তাতে আগামী দেড় মাসের মধ্যে জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলিতে ওষুধের সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেন ওষুধ কেনার টাকা ব্যবহার করা গেল না? বিষয়টি নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা মুখ খুলতে চাননি। স্বাস্থ্য দফতর থেকে সংবাদ মাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে বলে তাঁদের একাংশ জানিয়েছেন। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার বলেন, “দফতরের নির্দেশ মেনে আমি কিছু বলতে পারব না।” স্বাস্থ্যকর্তারা মুখ না খুললেও জেলা স্বাস্থ্য দফতরেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, জেলার তরফে ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পাঠানো নির্দেশ দফায় দফায় বদলে যাওয়ার কারণেই বিপত্তি দেখা দেয়। বিগত বাম সরকারের আমলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সরকারি ভাবে ঠিক করা সংস্থা থেকেই জেলাগুলিকে ওষুধ কিনতে হবে। তাতে বরাবরের মতো কাগজে বিজ্ঞাপন দিতে হবে না। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অন-লাইনে নির্দিষ্ট সংস্থাগুলি থেকে ওষুধ কেনা যাবে। তার পরেই গত মে মাসে নতুন সরকার গঠিত হলেও সেই সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। অথচ অন লাইনে ওষুধ কেনার ব্যবস্থা ছিল না। ব্যবস্থা হয় জুলাই মাসে। তাতে ২০১১-২০১২ আর্থিক বছরে জুলাই পর্যন্ত কোনও ওষুধ কিনতে পারেনি জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জুলাইয়ের পর অন লাইনে ওষুধ কেনার ব্যবস্থা হলে গত ডিসেম্বর মাসে ফের রাজ্য সরকার নির্দেশ পাঠায় নির্ধারিত একাধিক সংস্থার পরিবর্তে একটি মাত্র সংস্থা থেকেই ওষুধ কিনতে হবে। নির্দেশেই জানানো হয় কোন সংস্থা থেকে কিনতে হবে তা স্থির করে জানানো হচ্ছে। সেই অপেক্ষায় থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ওষুধ কেনা যায়নি। মার্চের প্রথম সপ্তাহে স্বাস্থ্য দফতর থেকে জানানো হয়, আগের নির্দেশ এখনই কার্যকর হবে না। পুরনো নিয়মেই একাধিক সংস্থা থেকে ওষুধ কিনতে হবে। এ ভাবে সময় নষ্ট হওয়ায় আর্থিক বছর শেষে ওষুধ কেনার জন্য থাকে মাত্র তিন সপ্তাহ। এই সময়ের মধ্যে কোনও সংস্থাই ওষুধ দিতে পারবে না বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়ে দিয়েছে। এর পরেই ওষুধ কেনার জন্য পড়ে থাকা ৫০ লক্ষ টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে বরাত দেওয়া প্রায় ২০ লক্ষেরও বেশি টাকার ওষুধ সরবারহকারী সংস্থা এই মাসের মধ্যে দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। তাতে ওই টাকা ফেরত যাওয়ার উপক্রম। পরিস্থিতি জেনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা। জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ার আসোসিয়েশনের সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের এই তুঘলকি সিদ্ধান্তে আমরা বিস্মিত। কেন টাকা বরাদ্দ করার পরেও গরিব বাসিন্দারা ওষুধ পাওয়া থেকে এ ভাবে বঞ্চিত হবেন?” অপর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার সুব্রত সরকার বলেন, “যে টাকা ফেরত যাচ্ছে তা দিয়ে হাজারেরও বেশি দুঃস্থ বাসিন্দা ওষুধ পেতে পারতেন।” |