রক্তাল্পতায় ভুগছে জেলা সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক।
এখনও তেমন গরম পড়েনি। জেলার আনাচে কানাচে প্রায় নিয়ম করেই চলছে রক্তদান শিবির। কিন্তু রক্ত সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় ‘কিট’ কোথায়? ব্লাড ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার তাই শূন্য। বহরমপুর জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে ১৫টি রক্তের ব্যাগ পড়ে থাকলেও ‘কিট’-এর অভাবে তা পরীক্ষা করা যায়নি। গত চার দিন ধরে একই অবস্থা জঙ্গিপুর, লালবাগ এবং কান্দিতেও। কলকাতার স্বাস্থ্যভবনে রক্ত পরীক্ষার কিট-এর জন্য আবেদন জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি। ব্লাড ব্যাঙ্কের এই পরিস্থিতির কথা জানিয়ে সেখানকার ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক প্রভাসচন্দ্র মৃধা চিঠি পাঠিয়েছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে। স্থানীয় বাজার থেকে রক্ত পরীক্ষার কিট কিনে সাময়িক ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকরিক সৈয়দ শাহজাহান সিরাজ বলেন, “জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের কিট সমস্যা রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ওই কিট কেনার জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে ১ লক্ষ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে।”জেলাশাসক রাজীব কুমার জেলা জুড়ে রক্তের অভাবের কথা মেনে নিয়েছেন। |
জঙ্গিপুরের ব্লাড ব্যাঙ্কের নোটিস। নিজস্ব চিত্র। |
তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” বহরমপুর জেলা ব্লাড ব্যাঙ্ক ছাড়াও জঙ্গিপুর, কান্দি ও লালবাগের মহকুমা হাসপাতালগুলিতে ব্লাড ব্যাঙ্ক রয়েছে। চিকিৎসক প্রভাসচন্দ্র মৃধা বলেন, “চার দিন ধরে জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে কোনও রক্তই নেই। রোগীর পরিজনেরা প্রয়োজনে রক্ত দিতে চাইলেও তা নেওয়া যাচ্ছে না। কিট-ই তো নেই, রক্ত পরীক্ষা হবে কী ভাবে? ২৭ মার্চ মঙ্গলবার কলকাতা স্বাস্থ্য ভবনে জরুরি ভিত্তিতে কিট চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। তবে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, কিট কবে পাওয়া যাবে তা অনিশ্চিত।” স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানালেন, “সাময়িক ভাবে রোগী কল্যাণ সমিতির টাকায় স্থানীয় বাজার থেকে রক্ত পরীক্ষার কিট কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সে জন্য জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অনুমতি দরকার। সেই অনুমতি এখনও মেলেনি।” এই মুহূর্তে লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে মাত্র এক ব্যাগ ‘এবি নেগেটিভ’ গ্রুপের রক্ত পড়ে রয়েছে। কান্দি ও জঙ্গিপুরের ব্লাড ব্যাঙ্কে কোনও রক্ত নেই। তবে মহকুমা ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে কয়েকটি পরীক্ষা কিট থাকায় রোগীর আত্মীয়েরা রক্ত দিতে চাইলে তা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।” জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, “জঙ্গিপুর থেকে জেলা হাসপাতালে রক্ত দিতে হচ্ছে। আমাদের ৩০০-র মতো কিট রয়েছে। এখনও চলে যাচ্ছে।” এই পরিস্থিতিতে এ দিন দুপুরে জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বহরমপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাসপাতালের সুপারকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। এর পরেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি রোগী কল্যাণ সমিতির অর্থ তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করে। সেই অর্থে জরুরি ভিত্তিতে ৬০টি কিট কেনা হয়। মুর্শিদাবাদ জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে এলাইজা মেসিন রয়েছে। এলাইজা সেন্টার হওয়ায় বহরমপুর নিউ জেনারেল হাসপাতালের জেলা ব্লাড ব্যাঙ্কে ওই কিট-এর মাধ্যমে এইচসিভি, হেপাটাইটিস-বি, এইচআইভি, ম্যালেরিয়া, রক্তের গ্রুপ এবং ভিডিআরএল পরীক্ষা করা হয়। এখন ওই কিট-এর অভাবের কারণে রক্ত পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে। এর ফলে রক্ত সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। এদিকে জেলা এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার জলঙ্গি থানার নরসিংহপুরের একটি রক্তদান শিবির থেকে ৫৫ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ হয়েছে। কিন্তু কিট-এর অভাবে তা পরীক্ষা করে ওই রক্ত রোগীর বাড়ির লোকজনের হাতে তুলে দেওয়া যাচ্ছে না। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে ৬০টি কিট কেনার পরে ওই সমস্যা কাটানো সম্ভব হয়েছে। এমনিতেই প্রতি বছর জেলা ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে বছরে দেড় হাজার ব্যাগ রক্ত সরবরাহ হয়ে থাকে। হাসপাতাল সূতরে জানা গিয়েছে, রোগী কল্যাণ সমিতির অর্থ তহবিল থেকে মাসে ২০ হাজার টাকা খরচ করার নিয়ম রয়েছে। ফলে স্থানীয় ভাবে ১৫০ কিট কিনলে খরচ পড়ে দেড় হাজার টাকা। কিট কিনতে গিয়ে রোগী কল্যাণ সমিতির অর্থ খরচ করলে তার অনেক জবাবদিহি করতে হয়। ফলে স্বাস্থ্যভবনে চাহিদার কথা জানিয়ে সরকারি কিট আসার অপেক্ষায় দিন গুনতে হয়! তাতে রক্তের অভাবে রোগীর মৃত্যু হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের করণীয় কিছু নেই বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। |