যুযুধান দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব, বাদানুবাদই স্বাভাবিক। কিন্তু ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে সেখানকার দুই কর্তার জামিনের আবেদনের শুনানিতে সরকারি আইনজীবী এবং অভিযুক্তদের আইনজীবীর গলায় প্রায় একই সুর শোনা গেল বৃহস্পতিবার!
আমরির ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের জামিনের পরে পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে, অন্যদের জামিনের বিরুদ্ধে আইনগত ভাবে সরকারি আইনজীবীর আর তেমন কিছু বলার সুযোগই ছিল না। আগের দিন, বুধবারেই কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বলে দিয়েছিল, ওই হাসপাতালের ডিরেক্টরদের আর আটকে রাখার কোনও যুক্তি দেখছে না তারা। সব মিলিয়ে এ দিন আমরির দুই ডিরেক্টর রবি তোদি ও মণীশ গোয়েনকার জামিনের আবেদনের কার্যত কোনও বিরোধিতাই করলেন না সরকারি আইনজীবী।
বিচারপতি অসীম রায় ও বিচারপতি অসীম রায় (দু’জনের একই নাম)-এর ডিভিশন বেঞ্চে এ দিন ওই জামিন মামলার শুনানি চলছিল।
অভিযুক্তদের আইনজীবী প্রদীপ ঘোষ বলেন, ধৃতেরা দীর্ঘদিন জেল-হাজতে আছেন। অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে। মামলার চার্জশিটও জমা
পড়েছে। তা ছাড়া হাইকোর্ট ইতিমধ্যেই আমরির তিন কর্তা রাধেশ্যাম অগ্রবাল, রাধেশ্যাম গোয়েনকা ও প্রশান্ত গোয়েনকাকে জামিন দিয়েছে। যে-যুক্তিতে ওই তিন জনের জামিন হয়েছে, সেই একই যুক্তিতে জামিন পেতে পারেন রবি তোদি ও মণীশ গোয়েনকা। এই দু’জনের কেউই ওই হাসপাতালের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নন।
অভিযুক্তদের আইনজীবীর এই সওয়ালের কার্যত কোনও বিরোধিতায় যাননি সরকারি আইনজীবী (পিপি) দেবাশিস রায়। তিনি বলেন, এই মামলায় ইতিমধ্যে জামিন পেয়ে যাওয়া আমরি-কর্তাদের বিরুদ্ধে যে-অভিযোগ ছিল, এই দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সেই একই অভিযোগ রয়েছে। অর্থাৎ রাজ্য সরকার যে রবি ও মণীশের জামিনের বিরোধিতা করছে না, সরকারি আইনজীবীর বয়ানেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যায়।
ডিভিশন বেঞ্চ সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চায়, যে-দু’জনের জামিনের আবেদনের শুনানি চলছে, তাঁরা আমরির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কি না? দেবাশিসবাবু জানিয়ে দেন, ওই দু’জনের কেউই আমরির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নন। আমরির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য চার জন। তাঁদের মধ্যে ম্যানেজিং ডিরেক্টর মণি ছেত্রী, অন্যতম ডিরেক্টর প্রণব দাশগুপ্ত এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট সত্যব্রত উপাধ্যায় ইতিমধ্যেই নিম্ন আদালত থেকে জামিন পেয়ে গিয়েছেন।
বুধবার ডিভিশন বেঞ্চ আমরির দুই কর্তা রাধেশ্যাম গোয়েনকা ও প্রশান্ত গোয়েনকার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে জানায়, আমরির ম্যানেজিং কমিটির তিন সদস্যকে নিম্ন আদালত জামিন দিয়েছে। সরকার সেই জামিনের আবেদন চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে কোনও আপিল মামলা করেনি। তাই ডিরেক্টর বোর্ডের কর্তাদের আর আটকে রাখার কোনও সুযোগ নেই। একই মামলায় অভিযুক্ত রবি তোদি ও মণীশ গোয়েনকার জামিনের ক্ষেত্রে কোনও বৈষম্য করা যায় না বলে এ দিন সওয়াল করেন তাঁদের আইনজীবী। সেই যুক্তি খণ্ডন করতে পারেননি সরকারি আইনজীবী।
আমরির ওই দুই কর্তার জামিনের শুনানি এ দিন শেষ হয়েছে। আজ, শুক্রবার হাইকোর্ট এই জামিন মামলার রায় দেবে বলে আদালত সূত্রের খবর। |