একটি ডাকঘরের ভল্ট ভাঙতে গিয়ে বাধা পেয়ে নৈশপ্রহরীকে খুন করে পালাল দুষ্কৃতীরা। বুধবার রাতে ময়নাগুড়ির ঘটনা। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্যই দুষ্কৃতীরা ক্রমশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
পুলিশ জানায়, নিহতের নাম বলেন্দ্রনাথ রায় (৫৮)। পূর্ব দোমহনি এলাকায় তাঁর বাড়ি। ডাকঘর চত্বরের একটি ঘরে বিছানায় লেপ দিয়ে বলেন্দ্রনাথবাবুর রক্তাক্ত দেহটি ঢাকা ছিল। তাঁর কপাল ও মাথার পিছনে গভীর ক্ষত ছিল। পুলিশের সন্দেহ, গভীর রাতে দুষ্কৃতীরা দরজা ভেঙে ডাকঘরে ঢোকে। শব্দ শুনে বলেন্দ্রনাথবাবু বাধা দেওয়ায় তাঁকে শাবল জাতীয় কোনও কিছু দিয়ে খুন করা হয়েছে। পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে শাবল, বল্লম এবং নৈশপ্রহরীর চটি উদ্ধার করেছে। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, “দুষ্কৃতীদের খোঁজ চলছে।” ঘটনার তদন্তে এ দিন শিলিগুড়ি থেকে পুলিশ কুকুরও আনা হয়। |
পুলিশ জানিয়েছে, পুরাতন বাজার লাগোয়া ওই ডাকঘরে বলেন্দ্রনাথবাবু প্রায় ৪০ বছর ধরে কাজ করছিলেন। ডাকঘরে ১০০ দিনের কাজের টাকা-সহ নানা প্রকল্পের টাকা থাকত। রাতে ডাকঘরের একটি ঘরে তিনি থাকতেন। জলপাইগুড়ি ডাক বিভাগের সিনিয়র সুপার বিমলকুমার মণ্ডল জানান, ডাকঘরের কোনও নথিপত্র বা টাকা দুষ্কৃতীরা নিতে পারেনি। নিহতের পরিবারের এক জনের চাকরির দাবিতে এলাকাবাসী ডাক বিভাগের অফিসারদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। ওই দাবিতে তাঁরা একটি আবেদনপত্রও দেন। নিহতের স্ত্রী সুরবালাদেবী বলেন, “স্বামীর রোজগারে সংসার চলত। ছেলে বিয়ে করেছে। দিনমজুরি করে ওরও সংসার চলে না। ছেলের কোনও ব্যবস্থা না-হলে খেতে না-পেয়ে মরে যাব।”
বস্তুত, গত এক বছরে জলপাইগুড়ির অন্তত তিনটি ব্যাঙ্কের শাখায় ভল্ট ভেঙে ডাকাতির চেষ্টা হয়েছে। কোথাও গুলি চলেছে, কোথাও ২০ লক্ষ টাকা লুঠ হয়েছে। গত বছরের গোড়ায় জলপাইগুড়ি শহরের জীবনবিমার ডাকঘরের ভল্ট ভাঙতে না পেরে নদীতে ফেলে দেয় দুষ্কৃতীরা। গত বছরের শেষে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের আশিঘর মোড় শাখায় ভল্ট ভেঙে চুরির চেষ্টা হয়। গুলি চালিয়ে এক যুবককে জখমও
করে দুষ্কৃতীরা। এ বছর জানুয়ারিতে ময়নাগুড়ির চূড়াভান্ডারে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ২০ লক্ষ টাকা লুঠ হয়। পরের মাসে একই ব্যাঙ্কের আমবাড়ি ফালাকাটা শাখায় চুরির চেষ্টা হয়। মার্চ মাসে মৌলানি শাখায় ভল্ট ভেঙে চুরির চেষ্টা হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীদের হদিস মেলেনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “মনে হচ্ছে কোনও একটি দলই পরপর কাজগুলি করছে।” |