পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক দুরবস্থার পাকাপাকি সমাধানের বিষয়ে চতুর্দশ অর্থ কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বলে আশ্বাস দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। তার আগে আপাতত কী করা যায়, তা তিনি খতিয়ে দেখছেন বলে জানিয়েছেন প্রণব। সংসদে বাজেট বিতর্কের জবাবি বক্তৃতায় প্রণববাবুর বক্তব্যে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি তৃণমূল নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের সমস্যাটি অন্তত সংসদের কক্ষে দাঁড়িয়ে স্বীকার করেছেন। ভবিষ্যতে সেই প্রসঙ্গ টেনেই ফের এ ব্যাপারে দাবি তোলা যাবে।
লোকসভা হোক বা রাজ্যসভা, বাজেট-বিতর্কে তৃণমূলের সাংসদরা বারবার ‘পশ্চিমবঙ্গের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা’ নিয়ে সরব হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মাথার উপরে ঋণের বোঝা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর বাবদ রাজস্ব ক্ষতি সব বিষয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সরব হয়েছেন রত্না দে নাগ, সুখেন্দুশেখর রায় বা ডেরেক ও’ব্রায়েনরা। প্রণববাবু বুধবার রাতের ওই বক্তৃতায় জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে রাজ্য সরকারকে অর্থসাহায্য দিয়েছে। এর আগে বিহারকেও এই তহবিল থেকে সাহায্য করা হয়েছিল। বিহার সেই অর্থ দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়েছে। অক্টোবর-নভেম্বরে পশ্চিমবঙ্গও সেই অর্থ পেয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা তৃণমূল সাংসদদের যুক্তি ছিল, কেন্দ্র এখনও পর্যন্ত যা অর্থ দিয়েছে, তা প্রকল্পভিত্তিক। অন্য কোনও খাতে সেই অর্থ খরচ করা যাবে না। রাজ্যের ঋণের বোঝাও কমবে না। প্রণববাবু বলেন, “যে সব রাজ্য খুব তাড়াতাড়ি আর্থিক দায়বদ্ধতা ও বাজেট ব্যবস্থাপনা আইন চালু করেছিল, দ্বাদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে ঋণের বোঝা কমানোর জন্য তাদের অর্থসাহায্য করা হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রকও ওই সব রাজ্যের ঋণ কিছু পরিমাণে মকুব করেছিল।” পশ্চিমবঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “যে সব রাজ্য এ ব্যাপারে দেরি করেছে এবং ২০১১ সালে ওই আইন চালু করেছে, তারা স্বাভাবিক ভাবেই এই সুবিধা পায়নি।” তবে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও পঞ্জাবের ঋণের সমস্যা সমাধানের বিষয়টি তিনি যে খতিয়ে দেখছেন, তা জানান প্রণব। তাঁর বক্তব্য, এ জন্য অর্থ মন্ত্রকে একটি ছোট গোষ্ঠীও তৈরি করা হয়েছে।
বাজেটে সোনার উপরে আমদানি শুল্ক-সহ একাধিক কর বাড়ানো বা বসানোর ফলে স্বর্ণশিল্পে সঙ্কটের বিষয়টি নিয়েও প্রণববাবুর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন প্রণব।
পণ্য পরিষেবা কর চালু করার জন্য ধাপে ধাপে কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ জন্য রাজ্য সরকারের রাজস্ব বাবদ যে ক্ষতি হবে, কেন্দ্র সেই ক্ষতি পূরণ করে দেবে বলে ঠিক হয়েছিল। তৃণমূল সাংসদদের অভিযোগ, এখন অর্থ মন্ত্রক একতরফা ভাবে আর কোনও ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১,২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে।
প্রণববাবু বলেন, “২০০৭-’০৮ থেকে চার বছরে কেন্দ্রীয় বিক্রয় করের হার ৪% থেকে শূন্যে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। প্রথম দু’বছর করের হার ১% হারে কমানোও হয়। কেন্দ্রও ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেয়। কিন্তু ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বেড়ে চলেছে, অথচ পণ্য-পরিষেবা কর চালু হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না!”
তা সত্ত্বেও তিনি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের ‘এমপাওয়ার্ড কমিটি’র সঙ্গে এ বিষয়ে ফের আলোচনায় বসে সমাধান খুঁজতে রাজি আছেন। |