ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখছে রাজ্য বিধানসভা!
কখনও মন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করে, কখনও মুলতবি প্রস্তাব আনতে চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বাজেট অধিবেশনে বারবার বিধানসভার কক্ষ থেকে ওয়াক-আউট করছে বিরোধী বামফ্রন্ট। পরিস্থিতি ‘সামাল’ দিতে বৃহস্পতিবার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে নিজের ঘরে ডেকে দীর্ঘ ক্ষণ আলোচনা করলেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যিনি বিরোধী দলনেতা থাকাকালীন বামফ্রন্ট জমানায় ২০০৬ থেকে ২০১১, নানা প্রশ্নে টানা বিধানসভা বয়কট করত তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল!
অধুনা শাসক তৃণমূল অবশ্য বুঝতে পারছে, বিধানসভা চালাতে গেলে বিরোধীদের ‘সহযোগিতা’ প্রয়োজন। সেজন্যই এ দিন বিরোধী দলনেতার সঙ্গে পরিষদীয় মন্ত্রীর বৈঠক বলে সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা। পার্থবাবু পরে বলেছেন, “বিধানসভায় যে ভাল বিতর্ক হওয়া উচিত, সেই ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি। বিরোধী দল যাতে অধিবেশনে অন্দরে থাকে এবং গঠনমূলক বিতর্কে অংশগ্রহণ করে, তা নিয়ে কথা হয়েছে।” ওয়াক-আউট ছেড়ে সভায় থাকার জন্য পার্থবাবু বিরোধীদের অনুরোধও করেছেন। তবে এই ব্যাপারে প্রকাশ্যে এর বেশি কিছু আর কিছু বলতে চাননি পার্থবাবু। দু’জনের বৈঠক নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুও। |
সংসদীয় এবং পরিষদীয় রাজনীতিতে বরাবরই সংসদীয় বা পরিষদীয় মন্ত্রীর ভূমিকা থাকে বিরোধীদের ‘সহযোগিতা’য় অধিবেশন চালু রাখা। নচেৎ বিভিন্ন সরকারি কাজকর্ম ব্যাহত হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ইউপিএ-১ সরকারে যে কাজ করতেন তৎকালীন সংসদীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। ইউপিএ-১ সরকারে যে দায়িত্ব পবন বনশলের। রাজ্য স্তরে সেই দায়িত্বই বর্তেছে পার্থবাবুর উপর। রোজ রোজ বিরোধীরা কক্ষ-ত্যাগ করলে প্রশাসনিক দিক দিয়ে তা যে সরকারের পক্ষে ‘ইতিবাচক’ বার্তা দেবে না, পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু তা সম্যক জানেন। সে জন্যই তাঁর এদিনের উদ্যোগ।
তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, শেষ আট মাসের মধ্যে অন্তত তিন বার বিরোধীরা ওয়াক আউট করেছে। অনেক ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিষয় ছেড়ে বিরোধীরা ‘তাৎপর্যহীন’ নানা প্রশ্ন তুলে সভা কার্যত অচল করে দিচ্ছে। এই ঘটনাপ্রবাহে শাসক শিবির কিছুটা ‘বিব্রত’। পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ করতেই বিরোধী দলনেতাকে ডেকে আলোচনা করেছেন পরিষদীয় মন্ত্রী। চলতি বাজেট অধিবেশন দু-এক দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এর পরে দফাওয়াড়ি বাজেট আলোচনার সময়েও বিরোধীরা এই পরিস্থিতি তৈরি করলে সভার কাজ চালানো মুশকিল হবে বুঝেই আসরে নেমেছে প্রধান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।
বিরোধী শিবির অবশ্য দাবি করছে, তাদের বিধানসভা ‘ব্যাহত’ করার কোনও উদ্দেশ্য নেই। বরং, শাসক পক্ষই বিধানসভার ‘গুরুত্ব’ খর্ব করার চেষ্টা চালাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানার গোড়া থেকেই তারা যে বিধানসভার ভিতরে-বাইরে সরকারের সঙ্গে ‘সহযোগিতা’র কথা বলে আসছে, নীতিগত ভাবে তা থেকে সরে আসা হয়নি বলেই বামেদের বক্তব্য। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ এমন দিকে মোড় নিচ্ছে, যেখানে বিরোধীদের সরব হওয়া ছাড়া উপায় থাকছে না। সিপিএমের এক বর্ষীয়ান বিধায়কের কথায়, “বিধানসভা চলাকালীন নানা সিদ্ধান্ত বাইরে ঘোষণা করে দেওয়া হচ্ছে। নীতিগত বিষয়ে বিধানসভায় আলোচনা করতে দেওয়া হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্নোত্তর এড়িয়ে যাচ্ছেন। এটা কি সুষ্ঠু ভাবে বিধানসভা চালানোর পদ্ধতি?”
বাম শিবিরের আরও বক্তব্য, বিরোধী হিসাবে তৃণমূলের ‘বয়কটের রাজনীতি’র সঙ্গে তাদের কৌশলের ফারাক আছে। প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সিপিএমের এক বিধায়কের বক্তব্য, “ওঁরা যে কোনও অছিলায় অধিবেশন টানা বয়কট করতেন। সরকার পক্ষ বারবার অনুরোধ জানালেও সভায় ফিরতেন না। বিরোধী হিসাবে আমরা কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ে হয়তো ওয়াক আউট করছি। কিন্তু পরে আবার ফিরে এসে বিতর্কে যোগ দিচ্ছি।” |