প্রতারণার অভিযোগে হুগলির শ্রীরামপুরের কুখ্যাত এক প্রোমোটারকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ গ্রেফতার করল পুলিশ।
ধৃত বলরাম নাগের ভাই শ্রীরামপুর পুরসভার তৃণমূলের কাউন্সিলর। দাদাকে থানা থেকে ‘ছাড়াতে’ তিনি লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শ্রীরামপুর থানায় আসেন বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় তৃণমূলের একাধিক নেতাও ছিলেন। যদিও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কাউন্সিলর পিন্টু নাগের বক্তব্য, ‘‘জনপ্রতিনিধি হিসাবে অনেক মানুষের বিপদেই যেতে হয়। এ ক্ষেত্রেও সে জন্য এসেছিলাম। প্রভাব খাটানো বা তদবির করার প্রশ্ন নেই। অভিযোগ যদি সত্যি হয় পুলিশ-প্রশাসন আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। আমাদের কিছু বলার নেই।”
পুলিশ জানায়, প্রতারণার নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বলরাম ও তাঁর দুই সাগরেদকে ধরে পুলিশ। উদ্ধার হয় একটি নাইন এমএম পিস্তল এবং ২ রাউন্ড গুলি। এসডিপিও (শ্রীরামপুর) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই ওই প্রোমোটারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২০১০ সালের জুন মাসে চন্দননগরের বাসিন্দা প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায় নামে এক বৃদ্ধের সঙ্গে মাহেশের শশীভূষণ ঘোষ লেনে একটি ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যাপারে চুক্তি হয় বলরামের। দাম ধার্য হয় ১০ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। আগাম হিসেবে ওই বৃদ্ধের কাছ থেকে ৬ লক্ষ টাকা নেন বলরাম।
তাঁর অভিযোগ, টাকা দেওয়ার পর থেকে বলরাম তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেন। বহু অনুরোধ সত্ত্বেও ফ্ল্যাটের মালিকানা দেননি। শেষে প্রণবকুমারবাবু টাকা ফেরত চান। প্রথমে গরিমসি করলেও ওই বৃদ্ধকে ৪টি চেক দেন বলরাম। সব ক’টি চেকই ‘বাউন্স’ করে বলে অভিযোগ। এর পরে বিষয়টি জানিয়ে টাকা চাইতে গেলে প্রণবকুমারবাবুকে ওই প্রোমোটার হুমকি দেন বলে অভিযোগ। পুলিশের দ্বারস্থ হন ওই বৃদ্ধ।
এ দিন দুপুরে শ্রীরামপুর থানার আই সি তথাগত পাণ্ডে শহরের নেতাজি সুভাষ অ্যাভেনিউ থেকে দুই সাগরেদ-সহ ওই প্রোমোটারকে গ্রেফতার করেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ওই প্রমোটারের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে পুলিশের হাতে। মৌখিক ভাবে দীর্ঘদিন ধরেই বহু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রত্যেকটি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
গত কয়েক বছর ধরেই প্রোমোটারি ব্যবসায় বলরামের বাড়বাড়ন্ত শ্রীরামপুরে। অভিযোগ, কাজের ক্ষেত্রে পুরসভা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘যোগসাজস’ কাজে লাগাতেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও তাঁর ‘দহরম-মহরম’ রয়েছে। অভিযোগ, প্রোমোটারি ব্যবসা চালানোর কারণে রীতিমতো ‘দাদাগিরি’ও করতেন বলরাম। দুষ্কৃতীদের নিয়ে তাঁর নিজস্ব ‘বাহিনী’ও ছিল। মজুত থাকত বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র। কিছু দিন আগেই শ্রীরামপুরের নেতাজি সুভাষ অ্যাভেনিউয়ে এক ব্যবসায়ীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, “শ্রীরামপুরের আরও কয়েক জন প্রোমোটারের উপর পুলিশ নজর রাখছে।” পুরনো বাড়ি ভাঙা বা পুকুর ভরাটের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই প্রোমোটাররা দুষ্কৃতীদের নিয়োগ করছে বলে শহরবাসীর অভিযোগ। তবে, ওই সমস্ত প্রোমোটার বা দুষ্কৃতীদের বাহুবলের ভয়ে মুখ বুজে সব সহ্য করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |