স্কুল থেকে অপহৃত শিশু, হদিস মিলল মোবাইলের ছবি দেখে
ন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিন তরুণী। বন্ধুর এক প্রতিবেশীর কোলে ফুটফুটে একটি শিশুকে দেখে মোবাইলে ছবিও তোলেন তাঁরা। আর সেই ছবির সূত্র ধরেই নিখোঁজ শিশুর সন্ধান পেলেন তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবার সালকিয়ার ওই শিশু নিখোঁজ ও উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়।
পুলিশ জানায়, সালকিয়ার শম্ভু হালদার লেনের সোনাপট্টির বাসিন্দা রাম সাউ ও রিনা সাউয়ের ছেলে শিবম (৩) নামে ওই শিশু। স্থানীয় সালকিয়া শ্রী মিশ্র বিদ্যালয়ে নার্সারিতে পড়ে সে। প্রতিদিনের মতো এ দিনও সকাল সাড়ে ৭টার সময়ে শিবমকে স্কুলে দিয়ে আসেন রিনাদেবী। এর পরে সকাল সাড়ে ১০টায়, স্কুল ছুটির সময়ে ছেলেকে আনতে গিয়ে দেখেন শিবমের সহপাঠীরা বেরিয়ে গেলেও ছেলে বেরোচ্ছে না। স্কুলে ঢুকে রিনাদেবীর সঙ্গে শিবমের শ্রেণিশিক্ষিকা নমিতা পালের দেখা হয়। ওই শিক্ষিকা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘ছেলে আজ স্কুলে আসেনি কেন?’ এ কথা শুনে রিনাদেবী চেঁচামেচি জুড়লে ছুটে আসেন স্কুলের অন্য শিক্ষিকারা। রিনাদেবী তাঁদের জানান, শিবমকে তিনি নিজে স্কুলে ঢুকিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন।
এর পরে রিনাদেবী স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখেন তাঁর টেবিলে ছেলের স্কুলব্যাগ ও জলের বোতল পরে রয়েছে। সেগুলি কী ভাবে সেখানে এল, তা নিয়ে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা কোনও সদুত্তর দিতে না পারলে রিনাদেবী বাড়িতে খবর দেন। খবর পেয়েই রামবাবু ও তাঁর প্রতিবেশীরা স্কুলে ছুটে যান। খবর যায় স্থানীয় গোলাবাড়ি থানাতেও। স্কুলে পৌঁছে যান হাওড়া সিটি পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা।
উদ্ধারের পরে শিবম। নিজস্ব চিত্র
স্কুলে জিজ্ঞাসাবাদ চলার সময়েই কয়েক জন যুবক এসে পুলিশকর্তাদের জানান, পিলখানার কাছে ১/১ শ্রীমানি বাগান লেনের একটি ফ্ল্যাটে ওই শিশুটি আছে। আরও জানান, তাঁদের কয়েক জন বান্ধবী সকালের দিকে ওই ফ্ল্যাটে শিশুটিকে দেখেছিলেন। মোবাইলে তার ছবিও তুলেছিলেন। পরে ওই যুবকদের ছবিটি দেখান তাঁরা।
পুলিশ জানতে পারে, ওই যুবকেরা শিবমদের পাড়াতেই থাকেন। তাই মোবাইলে ছবি দেখেই শিবমকে চিনতে পারেন। পরে শিশুটি নিখোঁজ হয়েছে শুনেই তাঁরা ছুটে আসেন স্কুলে।
ওই যুবকদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ খুশবু সিংহ, পুনম সিংহ, স্বপ্না সিংহ নামে ওই তিন তরুণীর সঙ্গে দেখা করে। মোবাইলের ছবিটি রামবাবুকে দিয়ে শনাক্তও করায়। তিন তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, সকালে তাঁরা শ্রীমানি বাগানের একটি ফ্ল্যাটে এক বন্ধুর বাড়িতে যান। সেখানে প্রতিবেশী রীতেশ ভারুতা ওরফে ভিকির ফ্ল্যাটে তাঁর স্ত্রী মমতা গুপ্তার কোলে শিবমকে দেখেছিলেন তাঁরা। এর পরে শ্রীমানি বাগানের ওই ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ রীতেশ ও মমতাকে আটক করে। কিন্তু ফ্ল্যাটে শিশুটির সন্ধান মেলেনি। রীতেশরাও শিশুটিকে চেনেন না বলেই দাবি করেন। শেষে গোলাবাড়ি থানায় নিয়ে গিয়ে ওই দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন পুলিশকর্তারা।
পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের সময়েই বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ মমতার মোবাইলে একটি ফোন আসে। সেই ফোনে জানানো হয়, ‘সব টিভিতে দেখাচ্ছে। বাচ্চাটাকে নিয়ে যাও।’ মমতা, রীতেশ তখন স্বীকার করেন তাঁরাই শিবমকে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের নিয়ে ২৯ নম্বর পিলখানা ফার্স্ট লেনের একটি বাড়ির পাঁচতলায় হানা দেয় পুলিশ।
দেখা যায়, মুস্তারি বেগম নামে এক মহিলার কাছে রয়েছে শিবম। স্কুলের পোশাক খুলিয়ে তাকে গেঞ্জি পরানো হয়েছে। শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ রীতেশ, মমতা ও মুস্তারিকে গ্রেফতার করে। তদন্তে জানা যায়, ওই ফ্ল্যাটটিরও মালিক রীতেশ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, রীতেশের ৮ বছরের মেয়ে শিবমদের স্কুলেই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। এ দিন মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে বেরিয়ে আসার সময়ে শিবমকে গেটের সামনে দেখেন মমতা। শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। এই ঘটনার পরে সালকিয়ার ওই স্কুলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনও কথা বলা যায়নি।
হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান অখিলেশ চর্তুবেদী বলেন, “এখনও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কেন শিশুটিকে অপহরণ করা হল, তা স্পষ্ট নয়। তবে মমতা তন্ত্রসাধনা করেন বলে জানা গিয়েছে। তিনি প্রথমে ওই শিশুটিকে সালকিয়ার সুরেশচন্দ্র গাঙ্গুলি লেনের কিছু পরিচিতের বাড়িতে রাখতে গিয়েছিলেন। তা অবশ্য সম্ভব হয়নি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.