বিপিএল তালিকায় নাম নেই। অথচ, ইন্দিরা বিকাশ যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন পাঁচ জন। তাঁদের মধ্যে পঞ্চায়েত সমিতির এক মহিলা তৃণমূল সদস্যও আছেন। আছেন পঞ্চায়েত তৃণমূল সদস্যের স্ত্রী-ও! জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে এই ঘটনাটি ‘জানাজানি’ হওয়ায় ব্লক প্রশাসনের তরফে এঁদের থেকে টাকা ফেরতও নিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং সহ-সভাপতি পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। অন্য দিকে, অভিযোগের ‘উচ্চ পর্যায়’-এর তদন্ত চেয়ে ‘দোষীদের’ শাস্তি চেয়েছে কংগ্রেস।
সরকারি নিয়মে, ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে টাকা পেতে হলে অবশ্যই উপ-ভোক্তার নাম থাকতে হবে বিপিএল তালিকায়। কিন্তু এই নিয়মকে কার্যত ‘বুড়ো আঙুল দেখিয়ে’ পাঁচ জনকে প্রকল্পের প্রথম কিস্তির সাড়ে ২২ হাজার করে টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই পাঁচ জনকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে বলা হয়। গত বছরের ১৮ নভেম্বর ওই পাঁচ জনের নামে চেক দেওয়া হয় ব্লক প্রশাসন থেকে।
ওই পাঁচ জনকে যে নিয়ম মেনে টাকা দেওয়া হয়নি, তা ধরা পড়ে ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পের মাসিক রিপোর্ট তৈরির সময়ে। প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ব্লক আধিকারিক রিপোর্ট তৈরির সময়ে ওই পাঁচ জনের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেন কারও নাম বিপিএল তালিকায় নেই। আরও দেখা যায়, জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলেরই সহ-সভাপতির সুপারিশের ভিত্তিতে পাঁচ জনকে চেক দেওয়া হয়েছে।
চেকে সই করেছেন বিডিও সলমন হুসনি। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরে পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত স্থায়ী সমিতির বৈঠকে বিস্তর হইচই হয়। বৈঠকে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ঘটনার তদন্ত দাবি করেন। পরবর্তীকালে বিডিও পাঁচ জনের কাছ থেকে মোট ১ লক্ষ সাড়ে ১২ হাজার টাকা ফেরত দেন।
বিডিও বলেন, “ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে প্রাপকদের সব নথি আমার দফতরের আধিকারিকেরা পরীক্ষা করে তবে আমার কাছে পাঠান। সে ভাবেই এই পাঁচ জনের কাগজপত্র আমার কাছে এসেছিল। আমিও সরল বিশ্বাসে চেক সই করি। পরে জানাজানি হওয়ার পরে আমি ওই পাঁচ জনের কাছ থেকে টাকা ফেরত নিই।” প্রশ্ন উঠেছে সহ-সভাপতিই তো ওই পাঁচ জনের নাম সুপারিশ করেছিলেন। তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না কেন? বিডিও বলেন, “সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিতে পারি না। এটা করতে পারেন সভাপতি। তিনি কেন সহ-সভাপতির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।?” সভাপতি নাদুচরণ বাগ বলেন, “নেহাত টাকা ফেরত এসে গিয়েছে। তাই এটা নিয়ে আর কড়াকড়ি করলাম না। কিন্তু আইনানুগ ব্যবস্থা যদি নিতে হয় তা-হলে তা আমি নেব বিডিও-র বিরুদ্ধে। আমার সন্দেহ সহ-সভাপতির সঙ্গে যোগসাজস করে তিনি চেক সই করেছেন। এই রকম দুর্নীতি আরও হয়েছে বলে আমার অনুমান। বিষয়টি আমি দলীয় পর্যায়ে জানিয়েছি।” দলের জগৎবল্লভপুরের কার্যকরী সভাপতি বিমান চক্রবর্তী বলেন, “দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। কোনও উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে কেউ যদি দোষী সাব্যস্ত হন দল তাঁর পাশে দাঁড়াবে না।”
অন্য দিকে সহ-সভাপতি মহম্মদ ইব্রাহিম প্রথমে বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।” তাঁরই ‘সুপারিশ’-এর ভিত্তিতে ওই পাঁচ জনকে যে টাকা দেওয়া হয়েছিল এ কথা মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, “জনপ্রতিনিধি হিসাবে আমি অনেকের নাম সুপারিশ করতে পারি। সেটা যাচাই করে দেখার কথা প্রশাসনের। তা-না করে তারা যদি কাউকে টাকা দিয়ে দেয় তার জন্য আমি দায়ী নই।” অন্য দিকে, তৃণমূলের যে পঞ্চায়েত সমিতি সদস্যকে টাকা দেওয়া হয়েছিল সেই বেবি বেগম লস্কর বলেন, “টাকা আমি হাতে পেয়েও গিয়েছিলাম। কিন্তু ব্লক থেকে যখনই আমাকে জানানো হয় আমার নাম বিপিএল তালিকায় নেই আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের কাছে টাকা ফেরত দিয়ে আসি।” এই ঘটনায় তৃণমূলের একাংশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রশাসন গরিবদের টাকা নিয়ে কার্যত ‘লুঠপাট’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস। দলের নেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, “বিপিএল তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও প্রকৃত গরিবেরা বাড়ি তৈরির টাকা পাচ্ছেন না। অথচ তালিকায় নাম না-থাকা সত্ত্বেও তৃণমূল নেতাদের সুপারিশে সরকারি টাকার হরির লুঠ হচ্ছে। সেই কাজে সাহায্য করছেন প্রশাসনের মাথারা। কী ভাবে নিয়ম ভেঙে পাঁচ জনকে টাকা দেওয়া হয়েছিল তার তদন্ত চেয়ে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেব।” |