|
|
|
|
প্রশ্ন সেই রাজ্যের অধিকারে... |
বিএসএফকে বাড়তি
ক্ষমতার প্রস্তাবে বিতর্ক
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
|
|
জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এনসিটিসি) নিয়ে বিতর্ক মিটতে না মিটতেই ফের রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ উঠল মনমোহন সিংহের সরকারের বিরুদ্ধে। এ বার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-কে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা ছাড়াও গোটা রাজ্যে অভিযান চালানোর ক্ষমতা দেওয়ার বিরুদ্ধে আপত্তি উঠল। আজ রাজ্যসভায় বিএসএফ (সংশোধনী) বিল এনে এই বিষয়টি পাশ করাতে উদ্যোগী হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। কিন্তু বিজেপি, বাম ও অন্য দলগুলির আপত্তিতে তা পিছিয়ে দিতে হয়। তৃণমূলের দাবি, যে হেতু এ ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রশ্ন রয়েছে, তাই ১৬ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনে এ নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীদের বক্তব্য শোনার পরেই কেন্দ্র পরবর্তী পদক্ষেপ করুক।
এনসিটিসি-র হাতে রাজ্য পুলিশকে এড়িয়ে কাউকে গ্রেফতার বা তল্লাশি চালানোর অধিকার দেওয়া নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আপত্তি তুলেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র ১৬ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকলেও তাতে আপত্তি রয়েছে মমতা, নরেন্দ্র মোদীদের। তাঁদের যুক্তি, এনসিটিসি নিয়ে বৈঠকের কথা বললেও আসলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন ডাকা হয়েছে। যা প্রতি বছরই হয়। তাঁদের দাবি, এনসিটিসি নিয়ে পৃথক বৈঠক ডাকা হোক।
এর মধ্যেই আজ রাজ্যসভায় বিএসএফ (সংশোধনী) বিলটি আলোচনার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। অরুণ জেটলি, সীতারাম ইয়েচুরিরা দাবি তোলেন, ১৬ এপ্রিলের সম্মেলন পর্যন্ত এই বিল নিয়ে আলোচনা পিছিয়ে দেওয়া হোক। তাঁদের বক্তব্য, এনসিটিসি-র ক্ষেত্রেও রাজ্য পুলিশের নজরদারি ছাড়াই তল্লাশি বা গ্রেফতারির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও সে পথেই হাঁটছে সরকার। ইয়েচুরির যুক্তি, এত দিন সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিএসএফ-কে অভিযান চালানোর ক্ষমতা দেওয়া ছিল। এখন রাজ্য পুলিশের মত ছাড়াই বিএসএফ-কে গোটা রাজ্যে সেই ক্ষমতা দিতে চাইছে কেন্দ্র। জেটলির বক্তব্য, এই বিলেও যে হেতু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত আসার আশঙ্কা রয়েছে, তাই আগে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ঐকমত্যের চেষ্টা করা উচিত। তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, “আগে এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনে আলোচনা হোক। প্রয়োজনে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় ভাগে বিলটি আনা যেতে পারে।”
বিরোধীদের সমালোচনার মুখে বিলটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চিদম্বরম জানান, এত দিন বিএসএফ-কে শুধু মাত্র সীমান্তেই নিয়োগ করা হত। কিন্তু এখন মাওবাদী দমন অভিযানেও তাদের নিয়োগ করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার অনেক সময়ই রাজ্যের ভিতরে বিএসএফ জওয়ানদের নিয়োগ করতে চায়। কিন্তু রাজ্যের অনুমতি ছাড়া তাদের কোথাও নিয়োগ করা হয় না। কাজেই রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করার কোনও আশঙ্কা থাকা উচিত নয়। চিদম্বরম বলেন, “কোনও রাজ্য যদি না চায়, তা হলে বিএসএফ নিয়োগ করা হবে না। বিষয়টা এর থেকে বেশি কিছু নয়, কমও নয়।” নর্থ ব্লকের এক কর্তার ব্যাখ্যা, “রাজ্য যদি বিএসএফ-কে না-ই নিয়োগ করতে চায়, তা হলে তার ক্ষমতা প্রয়োগের প্রশ্ন উঠছে কোথা থেকে?” সরকার পক্ষের এই বক্তব্যের পরেও অবশ্য বিরোধীদের মন গলেনি।
বিতর্ক সত্ত্বেও এনসিটিসি প্রশ্নে বৈঠকের দিন নিয়ে মমতা বা মোদীর আপত্তিতে এখনই সুর নরম করতে চাইছে না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রশ্ন উঠেছে, এনসিটিসি-র পরে এ বার বিএসএফের ক্ষমতা, ১৬ এপ্রিল এক দিনে এত বিষয়ে কী ভাবে আলোচনা সম্ভব? নর্থ ব্লকের যুক্তি, মাওবাদী সমস্যা, এনসিটিসি বা বিএসএফের ক্ষমতা সবটাই অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। কাজেই এক সঙ্গে এ সব আলোচনায় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তার পরেও যদি মনে হয় এনসিটিসি নিয়ে পৃথক বৈঠক ডাকা প্রয়োজন, তখন ডাকা যেতেই পারে। কিন্তু এখনই কোনও প্রয়োজন নেই। |
|
|
|
|
|