|
|
|
|
তদন্তের নির্দেশ অ্যান্টনির |
গোপন চিঠি ফাঁস দেশদ্রোহের সামিল, বলছেন সেনাপ্রধানও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা তাঁর চিঠি ফাঁস নিয়ে এ বার নিজেই মুখ খুললেন সেনাপ্রধান জেনারেল বিজয়কুমার সিংহ। সেনাবাহিনীর সঙ্গিন অবস্থা খোলসা করে দেওয়া সেই চিঠি নিয়ে সারা দেশ তোলপাড়। চিঠি ফাঁসের জন্য সন্দেহের তিরও সেনাপ্রধানের দিকেই। কিন্তু আজ সেনাপ্রধান নিজেই বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, “চিঠি ফাঁসের বিষয়টি দেশদ্রোহের সামিল। এ ভাবে আমার ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। যে বা যাঁরা এর পিছনে আছেন, তাঁদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার।”
কী ভাবে ‘অতি গোপন’ ওই চিঠি ফাঁস হল, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীকে তা খুঁজে বার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনিও একই সুরে জানিয়েছেন, দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার খুঁটিনাটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা সেনাধ্যক্ষের চিঠি ফাঁস করা
রাষ্ট্রদ্রোহেরই সমান। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বক্তব্য, “আসল দোষীদের খুঁজে পেতে সরকার মরিয়া। দোষীদের কঠিনতম সাজা দেওয়া হবে।”
মুখে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী যা-ই বলুন, গোটা বিষয়ে মনমোহন-সরকারের অস্বস্তি কাটছে না। কেন্দ্রীয় সরকারের দিক
|
যে বা যাঁরা চিঠি ফাঁসের
পিছনে আছেন, তাঁদের
কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার।
বিজয়কুমার সিংহ, সেনাপ্রধান |
থেকে এ নিয়ে বিতর্ক ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিরোধীরা কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আঞ্চলিক দলগুলি আবার সেনাপ্রধান ভি কে সিংহের ইস্তফা চেয়ে সরব হয়েছে। কিন্তু সব মিলিয়ে সিংহ আসলে ‘নায়ক’ না ‘খলনায়ক’, সেটাই কংগ্রেস বা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এখনও অস্পষ্ট। সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, ভি কে সিংহ দুর্নীতিগ্রস্ত সেনা অফিসারদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন বলেই নানা ভাবে তাঁকে সমস্যায় ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। পাল্টা যুক্তি হল, সেনাপ্রধান নিজেই সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতে চাইছেন। সরকারের পক্ষে তাই এক দিকে যেমন বিতর্ক প্রশমিত করার চেষ্টা চলছে, তেমনই সেনাপ্রধানকে সংযত থাকার জন্যও কড়া বার্তা পাঠাতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
সরকারের মনোভাব নিয়ে আজ তাই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। শুধু বলেছেন, “তিন বাহিনীর প্রধানদের উপরই সরকারের আস্থা আছে। তাঁরা নিজেদের কাজ করছেন। না হলে, তাঁরা এই দায়িত্বে থাকতে পারতেন না।” অ্যান্টনি এ কথা বললেও, আজ সেনাপ্রধান ভি কে সিংহের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিতে চেয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেস মুখপাত্র রেণুকা চৌধুরি বলেন, “সরকারের ভদ্রতাকে কেউ যেন দুর্বলতা বলে মনে না করে।” তাঁর কথায়, দেশের প্রতিরক্ষার বিষয়টি সর্বদাই স্পর্শকাতর। এ ব্যাপারে প্রকাশ্য বিতর্ক হওয়া উচিত নয়। সেনাপ্রধানকে কি প্রকাশ্যে মুখ খোলা থেকে বিরত করতে চাইছে কংগ্রেস? রেণুকা বলেন, “উনি যখন সেনাপ্রধানের মতো পদে উন্নীত হয়েছেন, তখন বিষয়টি নিশ্চয় বোঝেন। তাঁকে আর নতুন করে শেখানোর প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না।”
তবে মনমোহন-সরকারের বিড়ম্বনা বাড়িয়ে আরও একটি বিষয় সামনে এসেছে। উচ্চপদস্থ এক সেনা অফিসারের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সেনাপ্রধান দু’দিন আগেই সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। ডিমাপুরের কোর ৩-এর কম্যান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল দলবীর সিংহ সুহাগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর মে মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে এ বিষয়ে একটি চিঠিও লেখেন অম্বিকা। সেই চিঠির সূত্র ধরেই বিষয়টির তদন্ত চেয়ে সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহ। সিবিআই সূত্রের বক্তব্য, দলবীর সিংহের বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে সেনাপ্রধানের চিঠি তারা পেয়েছে। অম্বিকাবাবুর অভিযোগ ছিল, স্পেশ্যাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের (এসএফএফ)
প্যারাস্যুট ও রাতে যুদ্ধ করার সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে ঘুষ নিয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার। যে সময় এই টাকার লেনদেন হয়েছিল, তখন এসএফএফ-এর ইন্সপেক্টর ছিলেন দলবীর সিংহ সুহাগ। দলবীর আবার ভবিষ্যতে সেনাপ্রধান হওয়ার দৌড়েও আছেন। অম্বিকাবাবু আজ জানিয়েছেন, চিঠি লিখলেও কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা তাঁকে জানানো হয়নি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কিন্তু এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেছেন। আজ অ্যান্টনি জানান, অভিযুক্ত ওই সেনা অফিসারের পদোন্নতি আসন্ন। অ্যান্টনি বলেছেন, “কিছু দিন আগে একটি বৈঠকে জেনারেল ভি কে সিংহ এক জন সেনা অফিসার সম্পর্কে আমার কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। আমি তখন বলেছিলাম, কেউ যদি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হন, অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন। কিন্তু পরে সেনা সদর দফতর থেকে ওই অফিসারকে একটি সেক্টরের কম্যান্ডার করার প্রস্তাব আসে। মনে হয় সেটি ২২ মার্চের ঘটনা। প্রতিরক্ষা সচিব বিষয়টি পাশ করে দেন। সেটি এখন আমার দফতরে আটকে রয়েছে। আমি এটুকু তথ্যই আপানাদের দিতে পারি। বাকিটা (সিবিআইয়ের তদন্ত) আমার জানা নেই।”
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, আসলে ইউপিএ-সরকার ও কংগ্রেস ভারসাম্যের রাজনীতি করতে চাইছে। সেনাপ্রধানের প্রতি আস্থা জানিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি এক দিকে বিতর্ক প্রশমিত করতে চাইছেন। আর কংগ্রেস কঠোর মন্তব্য করছে রাজনৈতিক কারণে। এ দেশে সেনাবাহিনী বরাবর রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে কাজ করেছে। কিন্তু বয়স বিতর্ক, ঘুষের অভিযোগ ও প্রধানমন্ত্রীকে লেখা সেনাপ্রধানের চিঠি ফাঁসের ঘটনায় গোটা দেশে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে তাও প্রশমিত করা জরুরি বলে মনে করছে কংগ্রেস। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “সেনাপ্রধানের আচরণ নিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যেও ক্ষোভ রয়েছে। বর্তমান ও প্রাক্তন সেনা কর্তাদের অনেকেই এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ। তা ছাড়া রাজনৈতিক স্তর থেকেও সেনাপ্রধানের বরখাস্তের দাবি উঠছে। তাঁদের মনোভাবকে গুরুত্ব দিয়েই আজ সাংবাদিক বৈঠক থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে ভি কে সিংহকে।” বিরোধী দলের নেতারা কিন্তু মনে করছেন, আসলে কংগ্রেস দোলাচলে রয়েছে। সেনাপ্রধানের মেয়াদ শেষ হতে আর দু’মাস বাকি। তার আগে সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করা ঠিক হবে না বলে কংগ্রেসের বহু নেতা মনে করেন। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই দুইয়ের মাঝে ভারসাম্য রেখেই চলতে চাইছে কংগ্রেস ও সরকার। |
|
|
|
|
|