‘লো-ভোল্টেজ’, বিপাকে পরীক্ষার্থীরা
লো ভোল্টেজের দাপটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মযূরেশ্বর থানার বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন। বিদ্যুৎ থাকা সত্ত্বেও তা কার্যত কোনও কাজেই লাগছে না। ভোল্টেজের মাত্রা এতটাই কম যে বৈদ্যুতিক আলোর পাশাপাশি হ্যারিকেন-মোমবাতিও ব্যবহার করতে হচ্ছে। বাড়ির পাম্পে উঠছে না জল। এই পরিস্থতিতে সব থেকে বেশি অসুবিধায় পড়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযোগ, বার বার বিদ্যুৎ দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও লাভ হয়নি।
জেলা বিদ্যুৎ দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার কয়েক হাজার গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ময়ূরেশ্বরে স্থিত সাব স্টেশন থেকে। সাধারণত সাব স্টেশনের ট্রান্সফর্মারগুলিতে ৩৩০০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ ঢোকার কথা। বের হওয়ার কথা ১১০০০ ভোল্ট। ওই ১১০০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়ে বিভিন্ন গ্রামের ট্রান্সফর্মারে ঢোকার কথা। সেখান থেকে সর্বনিম্ন ২২০ ভোল্ট বিদ্যুৎ পাওয়া কথা গ্রাহকদের। সাব স্টেশন সূত্রের খবর মাস খানেক ধরে ৩৩০০০-এর পরিবর্তে বিদ্যুৎ মিলছে ২৮০০০-২৯০০০ ভোল্ট। ১১০০০ ভোল্টের পরিবর্তে বের হচ্ছে ৯০০০-১০০০ ভোল্ট। এর ফলে ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়ে গ্রামের ট্রান্সফর্মার থেকে মাত্র ১১০-১৩০ ভোল্ট বিদ্যুৎ মিলছে। এই স্বল্প মাত্রার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কোনও কাজেই আসছে না।
ডাঙাপাড়ার নিতাই কোনাই, লোকপাড়ার তপন রায়দের অভিযোগ, “লো ভোল্টেজের জন্য গরমে পাখা চালিয়ে কোনও লাভ হচ্ছে না। আলোর অবস্থাও একই রকম। অন্যদিকে লো ভোল্টেজে জলের পাম্প না চলায় এলাকায় পানীয় জলের হাহাকার দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়েই ৪-৫ হাজার টাকা খরচ করে ভোল্টেজ স্টেবলাইজার কিনতে হচ্ছে।” কিন্তু সব মানুষের তা কেনার সামর্থ নেই। ফলে অধিকাংশ গ্রাহকই নিরুপায় হয়ে বিদ্যুৎ দফতরের দিকে তাকিয়ে আছেন। এ দিকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ডাঙাপাড়ার সন্তু দাস, বড়ডিবুুরের রিম্পা মণ্ডলদের ক্ষোভ, “এই বিদ্যুতের আলোতে বইয়ের অক্ষর দেখাই যায় না। আজকের যুগেও তাই হ্যারিকেন-মোমবাতির আলোয় বহু কষ্ট করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।” এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিগত কয়েক মাস ধরে এই অবস্থার মধ্যে দিন কাটালেও কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ দফতরের অন্য একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু মূল পরিবাহী লাইনে ভোল্টেজের পরিমাণ কম থাকাই নয়, এই সময় বোরো চাষের জন্য যথেচ্ছ হারে অস্থায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ বাড়ার কারণেও ভোল্টেজের পরিমাণ কমেছে। এ ছাড়া আরও একটি কারণের কথা জানা যাচ্ছে। সাধারণত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য অ্যালুমিনিয়ামের তার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এলাকার বহু জায়গায় অপেক্ষাকৃত কম সুপরিবাহী জিআই অর্থাৎ লোহার তারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে কেটে যাওয়া তার সংযুক্ত রয়েছে আলগা ভাবে। রয়েছে কাপ কিংবা ডিস ভাঙা। ‘আইসুলেটর’ কিংবা পরিবাহী কেবল্ও ঠিকঠাক সংযুক্ত (লুজ কানেকশন) নয়। ওই সব কারণেও ভোল্টেজের পরিমাণ আরও কমে যাচ্ছে বলে বিদ্যুৎকর্মীদের অভিমত। ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি দীর্ঘদিন এই অবস্থা চলছে। কতৃর্পক্ষ বিষয়টিকে পুরোপুরি উপেক্ষা করছে।
কর্তৃপক্ষের ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগটির পরোক্ষ সমর্থন মিলছে ওই সাব স্টেশনের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানালেন, মূল পরিবাহী লাইনে ভোল্টেজের পরিমাণ কম থাকার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাঁর দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও লাভ হয়নি। উল্টোদিক থেকে টেলিফোনে গ্রাহকদের গালাগাল শুনতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা।
সমস্যাটির কথা জানালে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সংশ্লিষ্ট রামপুরহাটের ডিভিশন্যাল ম্যানেজার নারায়ণচন্দ্র রায় অবশ্য বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। কোথাও লোহার তার রয়েছে বলেও জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.