‘রদবদল’ চলছেই জেলার পঞ্চায়েতে। বৃহস্পতিবার জেলার মুরারই ২ ব্লকের রুদ্রনগর ও ইলামবাজার ব্লকের বিলাতি পঞ্চায়েতে বৃহস্পতিবার আস্থা ভোট ছিল। তবে প্রথমটিতে এ দিন ভোট হয়েছে। তাকে সিপিএম সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সিপিএম সদস্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূল সদস্যরা কংগ্রেস প্রধানকে সরান। তাঁদের সঙ্গে নির্দল সদস্যরাও ছিলেন। অন্যটিতে তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন দলের সদস্যরা। তবে বুধবার নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন প্রধান।
মুরারই ২ ব্লকের পঞ্চায়েত উন্নয়ন আধিকারিক বিনয় কিস্কু বলেন, “প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের সভায় এ দিন ১৭ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জন সদস্যের উপস্থিতিতে প্রধান কুদরত-ই-খোদা অপসারিত হয়েছেন।” পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭ সদস্যের ওই পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের ৭ জন, সিপিএমের ৬ জন, তৃণমূলের ২ জন এবং ফরওয়ার্ড ব্লক ও নির্দলের একজন করে সদস্য রয়েছেন। সম্প্রতি দুর্নীতি-সহ একাধিক প্রশ্নে কংগ্রেসের তিনজন, তৃণমূলের ২ জন ও নির্দল সদস্য মিলে মোট ৬ জন প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন। এ দিন কংগ্রেসের ৪, সিপিএমের ২ ও ফরওয়ার্ড ব্লকের ১ সদস্যের অনুপস্থিতিতে আস্থা ভোটে প্রধান হেরে যান।
অনাস্থার পক্ষে ভোট দেওয়া কংগ্রেস সদস্যদের অভিযোগ, “প্রধান একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছিলেন।” দুই তৃণমূল সদস্য রথীন মণ্ডল ও আলি রেজার অভিযোগ, “স্বৈরাচারী প্রধানের বিরুদ্ধে আমরা অনাস্থা এনেছিলাম।” সিপিএমের বক্তব্য, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও দল যদি এসে আমাদের পাশে দাঁড়ায়, তা হলে আমরা কী করব!” যদিও তৃণমূলের মুরারই ২ ব্লক সভাপতি অজিত দত্ত বলেন, “অনাস্থা আনা হবে সেই কথা মৌখিক ভাবে জানতাম। তবে এক্ষেত্রে যে সিপিএমের সাহায্য নেওয়া হবে তা জানতাম না। যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে তা হলে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব।” অপসারিত প্রধান কুদরত-ই-খোদা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,“রাজ্যে সিপিএম ও তৃণমূল একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আর এখানে বিশেষ উদ্দেশ্যে তারাই হাতে হাত মিলিয়ে আমাকে অপসারিত করলেন।” তাঁর অভিযোগ, “কিছু স্বার্থান্বেষী কংগ্রেসী সদস্য এতে মদত দিয়েছেন।” এ দিকে সিপিএমের মুরারই জোনাল সম্পাদক বরকতুল্লাহ বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখব কী হয়েছে। এরকম হলে দলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার বিলাতি পঞ্চায়েতে আস্থা ভোট হওয়ার কথা ছিল। বোলপুরের মহকুমাশাসক প্রবালকান্তি মাইতি বলেন, “ওই পঞ্চায়েতের প্রধান মহম্মদ কামালউদ্দিনের পদত্যাগ গৃহীত হওয়ায় অনাস্থা সভার প্রয়োজন নেই। সাময়িক ভাবে অন্য এক সদস্য একরামুল হক শেখকে ওই পঞ্চায়েতের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিয়ম মত পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে।”
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী ওই পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে ছিল। ভোটে দশ সদস্যের ওই পঞ্চায়েতে ৯ জন সিপিএমের এবং একজন পিডিসিআই সদস্য নির্বাচিত হন। মহম্মদ কামালউদ্দিন তখন থেকেই প্রধান। বিধানসভা ভোটে রাজ্যে পালাবদল হওয়ার পর চারজন সিপিএম সদস্য তাঁদের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন। সেই সঙ্গে একই সময়ে তৎকালীন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের উপস্থিতিতে এক সভায় আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রধান কামালউদ্দিন-সহ ওই পঞ্চায়েতের মোট চারজন সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন বলে জানা গিয়েছে। তখন থেকেই ওই পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে। কিন্তু গত ১৩ মার্চ তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন তৃণমূলেরই চারজন সদস্য। ২৯ মার্চ অনাস্থা সভার জন্য ঠিক করে দেয়। তার এক দিন আগেই ওই প্রধান নিজের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন।
একরামুল হক শেখের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েতের উন্নয়নে গতি আনতে, দুর্নীতিমুক্ত এবং স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ার জন্য আমরা মহম্মদ কামালউদ্দিনের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনি।” তিনি বলেন, “প্রধানের পদত্যাগ গৃহীত হওয়ায় প্রশাসন আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রশাসনের নির্দেশ মেনে আমরা পরের পদক্ষেপ নেব। দুর্নীতিমুক্ত ও উন্নয়নশীল পঞ্চায়েত গড়ে তোলা হবে।”
যদিও সদ্য প্রাক্তন ওই প্রধানের দাবি, “আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ব্লকের অন্যান্য যে কোনও পঞ্চায়েতের তুলনায় উন্নয়নের দিক থেকে আমাদের পঞ্চায়েত এগিয়ে। তবে উন্নয়নের কাজ হওয়া সত্ত্বেও দলের সদস্যরাই অনাস্থা ডাকায় অপমানিত বোধ করছি। তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিই।” যদিও তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফরুল ইসলামের দাবি, “মহম্মদ কামালউদ্দিন সিপিএমের প্রধান ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ আছে।” বামফ্রন্ট নেতৃত্ব অবশ্য পুরো ঘটনার পেছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছেন। |