শিক্ষকের শাসনের চোটে কাঁদতে কাঁদতে ক্লাসঘরেই ঘুমিয়ে পড়েছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীটি। ছুটির ঘণ্টা পড়ল। দরজায় তালা মেরে বাড়ি চলে গেলেন পাঁচ শিক্ষক-শিক্ষিকা। ছোট্ট মেয়েটি যে ঘুমিয়ে রয়েছে, কারও নজরেই পড়েনি! সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙলে ভয়ে চিৎকার করে ওঠে সে। গ্রামের লোকজন এসে তালা খুলে তাকে বের করেন।
বর্ধমানের পূর্বস্থলী স্টেশনের কাছেই পলাশপুলি গ্রাম। স্থানীয় থালার মাঠের দিনমজুর দাসু হালদারের মেয়ে চম্পা গ্রামেরই প্রাথমিক স্কুলে পড়তে যায় রোজ। বুধবারও গিয়েছিল। স্কুলে প্রায় দু’শো ছাত্রছাত্রী। ক্লাসঘর চারটি। দুপুর ৩টে নাগাদ স্কুল ছুটি হয়ে যায়। সন্ধ্যায় স্কুল কমিটির সম্পাদক তাপস কর্মকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রধান শিক্ষকের বাড়ি থেকে চাবি এনে তালা খোলেন গ্রামবাসীরা। পূর্বস্থলী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসাও করানো হয়। |
তার পরেও বহু ক্ষণ আতঙ্ক কাটেনি চম্পার। সে জানায়, পেন্সিল নিয়ে এক সহপাঠীর সঙ্গে তার ঝগড়া হয়েছিল। সে কারণে এক শিক্ষক তাকে মারধর করেন। চম্পার কথায়, “মার খেয়ে ক্লাসের মেঝেতেই কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি। যখন ঘুম ভাঙল, দেখি বন্ধুরা কেউ নেই। ঘর অন্ধকার। ভয়ে চিৎকার করে উঠি।” তার মা আহ্লাদী হালদার বলেন, “মেয়ে স্কুল থেকে সোজা খেলতে চলে যায়। ফেরে সন্ধ্যায়। তাই ওর দেরি দেখে চিন্তা করিনি। এমন যে ঘটতে পারে, কল্পনাতেও আসেনি।” রাতেই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পূর্বস্থলী থানায় গাফিলতি ও মারধরের অভিযোগ করেছেন তিনি। তবে প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি দাসের দাবি, “ওই ছাত্রীকে মারধর করা হয়নি। এক শিক্ষিকা তাকে সামান্য বকেছিলেন। ঘর বন্ধ করে চলে যাওয়ার ঘটনাটি নিতান্তই অনিচ্ছাকৃত।” যদিও স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানানো হয়েছে, চম্পার পিঠে মারধরের দাগ ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা নিখিল শীল, ধনপতি পালদের ক্ষোভ, “যে ভাবে মেয়েটিকে ফেলে চলে যাওয়া হয়েছিল, ও খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। বড় ক্ষতি হতে পারত।” কালনার মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “স্কুল বন্ধের আগে ক্লাসে কোনও ছাত্রছাত্রী রয়েছে কি না, তা দেখার কথা স্কুল কর্তৃপক্ষের। এমন গাফিলতি চরম নিন্দনীয়।” তিনি পূর্বস্থলী ২-এর বিডিও অলকা দাসকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন। |