‘অকেজো’ স্বাস্থ্য দফতরের ছাপাখানা
আট বছর বসেই মাইনে পাচ্ছেন কর্মীরা

ন্ত্রপাতি আছে। কিন্তু কাজ নেই। আক্ষরিক অর্থেই এই সরকারি কর্মচারীরা ‘আসেন-যান মাইনে পান’!
গত আট বছর ধরে এমনই চলছে। কারণ, ভবানী ভবনে স্বাস্থ্য দফতরের নিজস্ব অফসেট ছাপাখানায় বছরের পর বছর কোনও কাজ ছাড়াই বসিয়ে রাখা হচ্ছে কর্মীদের। আর্থিক সঙ্কটের বাজারে যেখানে বেশ কিছু দফতরের কর্মীরা ঠিকঠাক বেতন বা পেনশন পাচ্ছেন না, সেখানে ওই কর্মীরা নিয়মিত বেতন ও পেনশন পাচ্ছেন। তাঁদের অন্যত্র বদলিও হচ্ছে না।
প্রতি বছর স্বাস্থ্য দফতর কয়েক কোটি টাকার পোস্টার, ফোল্ডার, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, ক্যালেন্ডার, বই, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল প্রভৃতি ছাপায়। দ্বিগুণ টাকা দিয়ে কিছু সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন প্রেস-এ সেই সব ছাপানো হয়। অথচ তা হওয়ার কথা নিজস্ব এই ছাপাখানাতেই। যন্ত্রপাতিও মজুত। কিন্তু নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ২০০৪ সাল থেকে সুইডিশ প্রযুক্তির আধুনিক এই ছাপাখানায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
এ ভাবেই পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি। সেই ছাপাখানায়। ছবি: প্রদীপ আদক
স্বাস্থ্য ভবনের একাংশই বলছে, নিজস্ব প্রেস-এ ছাপা হলে এই খাতে বরাদ্দ টাকা দফতরেই থাকত। তা ছাড়া, কোনটা কী ভাবে ছাপা হবে, তার উপরে স্বাস্থ্যকর্তাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণও থাকত। এবং কর্মচারীরাও বসে বসে মাইনে পেতেন না। তা হলে তিন-তিন বার সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে পুরস্কার জেতা এই প্রেস-এ লক্ষ টাকার দামি যন্ত্র ফেলে নষ্ট করা হচ্ছে কেন? স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের বক্তব্য, “এই রকম ‘কেন’ অনেক জায়গাতেই রয়েছে। সবের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। ছাপাখানা এখন স্বাস্থ্য দফতরের কাছে ‘প্রায়োরিটি’ নয়। ফলে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। যেমন চলছে চলুক।”
কিন্তু এর জন্য যে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের জিনিস অন্যত্র ছাপানো হচ্ছে? অসিতবাবু বলেন, “এ নিয়ে মন্তব্য করব না।” এখানকার কর্মীদের বসিয়ে না রেখে কেন অন্য হাসপাতালে, বিশেষত জেলার হাসপাতালে নিয়োগ করা হচ্ছে না? সর্বত্রই তো টেকনিক্যাল কর্মী এবং গ্রুপ ডি কর্মীর অভাব। এই প্রশ্নেরও জবাব মেলেনি।
স্বাস্থ্য দফতর ও ওই ছাপাখানা সূত্রে খবর, ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ওই ছাপাখানায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার কাজ হত। এখন সেই কাজই সরস্বতী প্রেস, শিল্পবার্তা, হুগলি প্রিন্টিংয়ের মধ্যে ভাগ করে করানো হয়। এক-একটি প্রেস স্বাস্থ্য দফতর থেকে ফি বছর ১৫-৩০ লক্ষ টাকার কাজ পায়, যা নিজস্ব ছাপাখানারই পাওয়ার কথা। এ বছরে স্বাস্থ্য দফতরের নিজস্ব রিপোর্ট ‘হেলথ অন মার্চ’ ছাপতেই ২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা লেগেছে। প্রতি বছর ‘ন্যাশনাল রুরাল হেল্থ মিশন’-এর প্রায় ৪ কোটি টাকার কাজ করে অন্য ছাপাখানা।
স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছে। সংগঠনের তরফে মনোজ চক্রবর্তীর অভিযোগ, “নিজস্ব প্রেসে কাজ হলে অনেকের উপরি বন্ধ হবে। টেন্ডারে গরমিল করা যাবে না। তাই ইচ্ছা করে এই প্রেস বন্ধ করা হয়েছে।”
স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে, ২০০৯-১০ সালে শুধু পালস পোলিও কর্মসূচির জন্য স্বাস্থ্য দফতর প্রায় ২ লক্ষ ৪২ হাজার বুথ ব্যানার, ২৩ হাজার স্ট্রিট ব্যানার, ৪ লক্ষ ৩২ হাজার পোস্টার, ৫ হাজার জ্যাকেট এবং ৩৬ হাজার ব্যাজ ছাপিয়েছে। দফতরের ছাপাখানার কর্মীরাই জানিয়েছেন, মজুত থাকা যন্ত্রে এ সবই ছাপা যেত। অনেকবার স্বাস্থ্য ভবনে তা জানানোও হয়েছে। কেউ আগ্রহ দেখাননি।
আপাতত ওই ছাপাখানায় ৪ জন টেকনিক্যাল অফিসার, এক জন দারোয়ান ও ১ জন সাফাইকর্মী আছেন। অফিসারেরাই জানান, তাঁরা ১১টা নাগাদ অফিসে এসে সাড়ে চারটে নাগাদ বাড়ি চলে যান। মাঝে স্রেফ আড্ডা, কাগজ-বইপত্র পড়া, খাওয়াদাওয়া আর ঘুম। এক অফিসারের কথায়, “এ ভাবেই চলছে ২০০৪ সাল থেকে। আগে ১০-১২ জন ছিলাম। কিছু লোক অবসর নেওয়ায় সংখ্যাটা কমেছে। আর কত দিন এ ভাবে কাটবে জানি না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.