যন্ত্র পড়ে ছ’মাস, এখনও চালু হল না এমআরআই |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা
|
প্রথমে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। তার ব্যবস্থা হল, তো যন্ত্র চালানোর লোক অমিল হয়ে পড়ল। কোনও মতে জোড়াতালি দিয়ে কর্মীর ব্যবস্থা যা-ও বা হল, স্বাস্থ্য দফতর থেকে ‘রেট চার্ট’ এসে পৌঁছল না। সেই ব্যবস্থার সুরাহা হওয়ার প্রতিশ্রুতি মিলল, তো এ বার যন্ত্র বিগড়োতে শুরু করল। যার নিট ফল হাসপাতালে যন্ত্র পৌঁছনোর ছ’মাস পরেও রোগীদের জন্য এমআরআই চালু হল না এসএসকেএম হাসপাতালে। ‘বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি’ (বিআইএন) পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে এমআরআই-এর জন্য রোগীর উপচে পড়া ভিড় দেখে এসএসকেএমে আধুনিক মানের এমআরআই যন্ত্র বসাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেই যন্ত্রেরই এমন হাল দেখে বিস্মিত স্বাস্থ্যকর্তাদের একটা বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, গয়ংগচ্ছ মনোভাব কোন পর্যায়ে পৌঁছলে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বরাদ্দ করা যন্ত্রের এই পরিণতি হয়, তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসএসকেএম হাসপাতালে এই যন্ত্রটি এখনও চালু না হওয়ায় বিআইএনে অপেক্ষমাণ রোগীদের তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। চার-পাঁচ, এমনকী কখনও ছ’মাসও লেগে যাচ্ছে পরীক্ষার তারিখ পেতে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পরীক্ষার সুযোগ আসার আগেই রোগীর মৃত্যু হচ্ছে, এমন নজিরও রয়েছে।
সাড়ে ন’কোটি টাকা দামের এই উন্নত এমআরআই যন্ত্রটি দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন গত সেপ্টেম্বর মাসে। দ্রুত যন্ত্র চলে আসে। গত ১৭ জানুয়ারি ঘটা করে অনুষ্ঠান করে সেই যন্ত্রের উদ্বোধনও হয়। নিয়ম অনুযায়ী, যন্ত্র বসার পরে ১০০ জন রোগীর পরীক্ষা করে যন্ত্রের ‘ট্রায়াল’ হয়। এ ক্ষেত্রে সেই ‘ট্রায়াল’ পর্বও শেষ। কিন্তু তার পরেও সাধারণ রোগীদের জন্য যন্ত্র চালু করা না-যাওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ।
বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, “যন্ত্র আসার পরে আমরা জানিয়েছিলাম, প্রতি দিন ৫০ জন করে রোগীর এমআরআই করব। অথচ, এখনও কিছুই করতে না পারায় হতাশ লাগছে। আশপাশের বেসরকারি কেন্দ্রগুলিতে ভিড় বেড়ে চলেছে, আর আমরা যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও রোগীদের এই পরিষেবা দিতে পারছি না।”
এসএসকেএম তথা ‘ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (আইপিজিএমইআর)-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, “একটানা বেশি ক্ষণ যন্ত্র চালানো যাচ্ছে না। আচমকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদক সংস্থাকে ইতিমধ্যে চিঠিও দিয়েছি। যন্ত্র ফের ঠিক ভাবে কাজ শুরু করতে না পারলে এমআরআই চালু করব কী ভাবে? এক বার চালু করলে তো আর বন্ধ করে দেওয়া যাবে না।”
সংশ্লিষ্ট সংস্থার তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, যন্ত্র খারাপ হওয়ার পিছনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও গাফিলতি রয়েছে। ওই সংস্থার বক্তব্য, যন্ত্রটি স্রেফ পড়ে থেকে থেকে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া, যন্ত্র চালু হয়নি, অথচ ঘরটি সর্বক্ষণ খুলে রাখা হয়। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না।
কেন এমআরআই চালু করা যাচ্ছে না, তার কারণ জানাতে গিয়ে এসএসকেএম কর্তাদের একাংশ ‘রেট চার্ট’ না আসার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন। যদিও স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “ওটা কোনও বড় সমস্যা নয়। অন্য সরকারি হাসপাতালে এমআরআই-এর জন্য যে টাকা দিতে হয়, এখানেও রোগীদের থেকে সেই টাকা নিয়ে কাজটা শুরু করা যেতে পারত। আসল কথাটা হল সদিচ্ছা। সেটারই অভাব।”
তা হলে কি এ ভাবে চাপান-উতোরের মধ্যেই বেড়ে চলবে রোগীদের ভোগান্তি? স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসকে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তাঁর কাছে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য নেই, খোঁজ নেবেন। |