নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
নতুন বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে লাগু ১ শতাংশ ‘সেস’ প্রত্যাহার করল শিলিগুড়ি পুর কর্তৃপক্ষ। বুধবার শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত ২০১২-২০১৩ সালের যে বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন তাতে বিষয়টি ঘোষণা করা হয়েছে। এ দিন পেশ করা ১ কোটি ২৫ লক্ষ ৫২ হাজার টাকার ঘাটতি বাজেটে ১৪৭ কোটি ৮২ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা ব্যায়ের প্রস্তাব রেখেছেন মেয়র। গরিব পরিবারের বাসিন্দাদের বিশেষ করে মহিলাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বাজেটে জোর দিয়েছেন তিনি। ২০০৭ সালে রাজ্য সরকার বাড়ির নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ‘সেস’ আরোপ করলেও গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শিলিগুড়ি শহরে তা লাগু করেন পুর কর্তৃপক্ষ। তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও সম্প্রতি ওই সেস নেওয়া যুক্তিযুক্ত নয় বলে জানান। এর পরেই বাজেটে তা প্রত্যাহারের বিষয়টি জানানো হয়। ইতিমধ্যেই যাঁরা ওই কর দিয়েছেন তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়াও হবে। নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে এলইউসিসি, বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে সৃষ্টি আবর্জনা সাফাই-সহ কয়েকটি ফি কমিয়ে দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। মেয়র বলেন, “বাসিন্দাদের কথা মাথায় রেখেই সেস তুলে নেওয়া হল। বাড়ির নকশা অনুমোদনের অন্যান্য ‘ফি’ কমিয়ে দেওয়ার হবে। বাজেটে নির্যাতিতা মহিলাদের আইনি সহায়তা দেওয়া, তাঁদের জন্য হোম তৈরি, অনাথ শিশুদের জন্য হোম তৈরি প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বস্তি এলাকার উন্নয়নে, শহরে গরিব বাসিন্দাদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। |
শিলিগুড়ি পুরসভায় বাজেট পেশ করছেন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
পুর এলাকার অন্তত ১৫৫০ জন বেকার তরুণ-তরুণীকে স্বনির্ভর হতে কর্ম সংস্থানমূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।” তিনি জানান, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ এবং একটি বেসরকারি আইন কলেজের সহায়তায় মহিলাদের জন্য ওই আইনি সহায়তা কেন্দ্র চালু করা হবে। মহিলা এবং শিশুদের হোম তৈরির প্রকল্প ইতিমধ্যেই অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে। পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রতিমাসে ৩০০ টাকা করে ১৫০০ জনকে বার্ধক্যভাতা, ৭৫০ জনকে বিধবাভাতা, ৬০০ জনকে প্রতিবন্ধীভাতা দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৫০ টাকা। রয়েছে ৮৫০ জনকে বিধবাভাতা এবং ৬৫০ জনকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব। গরিব প্রসূতি মহিলাদের আর্থিক সাহায্য করা হবে। বস্তি এলাকা উন্নয়ন এবং গরিব পরিবারগুলিকে সাহায্য করতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুষ্ঠু রূপায়ণের দিকে জোর দিতে চান পুর কর্তৃপক্ষ। রেল, সেনাবাহিনী, আরআর দফতরের জমিতে বসবাসকারীদের জমির সত্ত্ব দিতে পুরসভার তরফে উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলামের দাবি, “অফিসের করণীক যেমন দফতরের কেনাকাটার জন্য বাজেট করেন মেয়রের প্রস্তাবিত বাজেট তেমনই। এর কোনও দিশা, লক্ষ্য নেই। গত আড়াই বছর ধরে মেয়র যে ধরনের বাজেট করছেন তাতে শহর আরও ২৫ বছর পিছিয়ে পড়েছে। যেভাবে নগরোন্নয়ন হচ্ছে সেদিকে লক্ষ রেখে পরিকল্পনা নিতে পারছেন না তিনি।” তিনি জানান, আগের আর্থিক বছরের বাজেটে পূর্ত বিভাগের খাতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। অথচ কাজ হয়েছে মাত্র ১৩ কোটি টাকার। মেয়র জানান, সময় মতো অর্থ না মেলায় পূর্ত দফতরের কাজে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। তবে শহরে বাসিন্দাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আধুনিক হাসপাতাল তৈরি প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্প হচ্ছে। তা থেকে পুরসভার আয়ও হবে। শহরে পানীয় জল সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা করতে ইতিমধ্যেই জনস্বাস্থ্য এবং কারিগরি দফতরের সহযোগিতায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। |