|
|
|
|
পাঁচ বছর পর মজুরি বাড়ছে কয়েদিদের |
অত্রি মিত্র • কলকাতা |
সারা দিন খাটুনির পরে কারও হাতে আসে ২৫ টাকা, কারও বা ১৮ টাকা। রাজ্যের সাজাপ্রাপ্ত জেলবন্দিদের এখন এটাই মজুরি। এই টাকা এ বার বাড়িয়ে ৫০ পর্যন্ত করতে চলেছে কারা দফতর। প্রস্তাবটি অর্থ দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সরকারি সূত্রের খবর, খাওয়া-পরা বাদ দিয়ে কয়েদিরা এখন দৈনিক মজুরি পান ১৮, ২১ কিংবা ২৫ টাকা। গত পাঁচ বছর ধরে এ রাজ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ বাড়লেও কয়েদিদের মজুরি বাড়েনি। অবশেষে, মাইনে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে এ রাজ্যের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত কয়েদিদের। রাজ্য সংশোধন প্রশাসন বিভাগের (কারা দফতর) তরফে ইতিমধ্যেই জেলের কয়েদিদের মাইনে বাড়ানোর চূড়ান্ত প্রস্তাবটি অর্থ দফতরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের সবুজ সঙ্কেত পেলেই তা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের সংশোধন প্রশাসন বিভাগের মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “ক্ষমতায় আসার পরে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছিল। কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের তরফেও এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা আসে। এর পরেই আমাদের বিভাগে একটি কমিটি বিষয়টি পর্যালোচনা করে ওই মজুরি বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছে।”
সংশোধন প্রশাসন বিভাগের এক কর্তার কথায়, “তিহাড়-সহ কেরল, হিমাচল প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং আরও কয়েকটি রাজ্যে কয়েদিদের মজুরির অঙ্ক অনেকটাই বেশি। সে কারণেই গত ডিসেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাজ্য সরকারের।” এর পরেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব জ্ঞানদত্ত গৌতমের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি হয়। ওই কমিটি গত ২০ ফেব্রুয়ারি কয়েদিদের মজুরি বাড়ানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়।
জেল সূত্রে খবর, জেলের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিরা প্রতিদিনই বিভিন্ন কাজকর্ম করেন। ওয়ার্ড চালানো, রাতে পাহারা, রান্না করা বা জেলের অফিসের বিভিন্ন কাজকর্মে কয়েদিদের লাগানো হয়। অনেক জেলে বিভিন্ন কারখানা আছে। সেখানেও দক্ষ কয়েদিদের কাজে লাগানো হয়। প্রত্যেক কয়েদির নামে ব্যাঙ্কে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়। জেলে কাজ করে কয়েদিরা যে টাকা পান, তা ওই অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ টাকা কয়েদিরা খরচ করতে পারেন না। একে জেলের ভাষায় ‘লাল’ টাকা বলা হয়। মুক্তি পাওয়ার সময়ে বন্দিরা ওই টাকা হাতে পান। রোজগারের বাকি ৫০% টাকা ওই কয়েদিরা নিজেদের প্রয়োজনে খরচ করতে পারেন। জেল দফতরের এক কর্তার কথায়, “সাধারণ ভাবে কয়েদিরা পোশাক ও খাবার কেনার কাজেই ওই টাকা খরচ করেন। অনেকে পরিবারের কাছেও পাঠান।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর পর কয়েদিদের মাইনে বাড়ার কথা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে শেষ বার মাইনে বেড়েছিল ২০০৭ সালের মে মাসে। সেই সময়ে দক্ষ শ্রমিক যে-সব কয়েদি, তাঁদের দৈনিক মজুরি বেড়ে হয় ২৫ টাকা। অদক্ষ ও আংশিক দক্ষ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে তা বেড়ে হয় ১৮ এবং ২১ টাকা। এর সঙ্গে খাওয়া এবং অন্যান্য বিষয়ের জন্য কয়েদি-পিছু জেল প্রশাসনের খরচ হয় ৪৯ টাকা করে। এই অর্থও কয়েদিদের মজুরির মধ্যেই ধরা হয়। সে ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে দক্ষ, অদক্ষ এবং আংশিক দক্ষ কয়েদিদের দৈনিক মজুরি এখন যথাক্রমে ৭৪, ৬৭ এবং ৭০ টাকা। সংশোধন প্রশাসন বিভাগের এক কর্তা জানিয়েছেন, দক্ষ কয়েদিদের মজুরি বেড়ে হবে ৫০ টাকা। অদক্ষ এবং আংশিক দক্ষ কয়েদিদের ক্ষেত্রে তা বেড়ে হচ্ছে ৩০ এবং ৪০ টাকা। মোট মজুরির ক্ষেত্রে যা বেড়ে হতে চলেছে যথাক্রমে ৯৯, ৮৯ এবং ৭৯ টাকা। |
|
|
|
|
|