|
|
|
|
বিধানসভা |
মুখ্যমন্ত্রী ‘ভয়’ পাচ্ছেন, অভিযোগ করলেন সূর্য |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিরোধীদের মুখোমুখি হতে ‘ভয়’ পাচ্ছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নানা ভাবে বিধানসভা এড়িয়ে চলছেন বলে অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। বুধবার পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বিধানসভার ‘রীতি-বহির্ভুত’ ভাবে জবাবি ভাষণ দিয়েছেন দাবি করে এ দিন প্রথমার্ধ্বে অধিবেশন কক্ষ থেকে ‘ওয়াক-আউট’ করেন বিরোধীরা। সভার বাইরে নতুন সরকারের টানা বিধানসভার ভিতরে একতরফা ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ নিয়ে সূর্যবাবু ও বাম শরিকেরা সরব হন।
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সূর্যবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী গত সপ্তাহে তাঁর ব্যস্ততার জন্য সোমবারের বদলে শুক্রবার প্রশ্নের জবাব দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। বাজেটের জন্য সেদিন ওই প্রশ্নোত্তর হয়নি। কিন্তু আগামী শুক্রবারও মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখা হয়নি। তিনি ধারাবাহিক ভাবেই সভাকে এড়িয়ে চলছেন।” সূর্যবাবুর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী সভায় দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাবের জবাব দিচ্ছেন না। বাজেট-বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন না। প্রশ্নের জবাবও দিচ্ছেন না। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এই সরকারের কাছে বিধানসভার গুরুত্ব কতটা।” বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বিরোধীদের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছেন। |
|
সাংবাদিক সম্মেলনে সূর্যকান্ত। নিজস্ব চিত্র |
তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশের পরে তা নিয়ে বিতর্ক চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় ছিলেন না। অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এ দিন যখন বাজেট বিতর্কের উপরে জবাবি বক্তৃতা করছেন, তখনও মুখ্যমন্ত্রীকে অধিবেশনে দেখা যায়নি। বাজেট বিতর্কের জবাবির সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর থাকা কি বাঞ্ছনীয় ছিল? এই প্রশ্নের জবাবে সূর্যবাবু বলেন, “বাজেটের জবাবি ভাষণ মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়ার কথা নয়। শোনার জন্য তাঁর থাকা উচিত ছিল। তবে উনি না-থাকায় অর্থমন্ত্রীর পক্ষে ভালই হয়েছে! মুখ্যমন্ত্রী থাকলে বলতে পারতেন কি না, বা কী বলতেন, কে জানে!” বিরোধী দলনেতার আরও সংযোজন, “ছলে-বলে-কৌশলে বিধানসভার গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা হচ্ছে। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) ঠিক করেছেন, প্রশ্নের কোনও জবাব দেবেন না। মাঝে মাঝে বিধানসভায় এসে তাৎক্ষণিক বক্তৃতা করে চলে যাবেন!”
পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বিরোধী দলনেতার বক্তব্যকে কোনও গুরুত্ব দেননি। তাঁর কথায়, “সূর্যবাবু যত কম কথা বলেন, ততই ভাল! রাজ্য বাজেটকে সরকার পক্ষের সমস্ত সদস্য ঐক্যবদ্ধ ভাবে সমর্থন করেছেন। তার ফলে বিরোধীরা দিশেহারা হয়ে কাগজ ছুড়েছেন, ছিঁড়েছেন। সূর্যবাবু বামফ্রন্টকে রক্ষা করার মতো রসদ পাচ্ছেন না।” বরং পার্থবাবুর পাল্টা কটাক্ষ, “বিধানসভার বাইরে সূর্যবাবুরা জনবলহীনতায় ভুগছেন আর ভিতরে যুক্তিহীনতায় ভুগছেন। আর সেই বিধানসভাকে ব্যবহার করেই সূর্যবাবু শুধু সংবাদমাধ্যমে ভেসে থাকার চেষ্টা করছেন।”
মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি এ দিন অন্য মন্ত্রীদেরও এক হাত নিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। এ দিনই সভায় কয়লা সংবলিত জমির উপর সেস এবং কয়লার রয়্যালটি বাবদ প্রাপ্য রাজস্ব নিয়ে সূর্যবাবুরই একটি পূর্ব নির্ধারিত প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। কিন্তু উত্তর দেওয়ার কথা থাকলেও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু আসেননি। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সভায় জানান, অর্থমন্ত্রী আগেই স্পিকার ও বিরোধী দলনেতাকে তাঁর অনুপস্থিতির কথা জানিয়েছিলেন। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রতবাবুর উদ্দেশে প্রশ্ন উত্থাপনের সময়েও তিনি সভায় ছিলেন না। পরে সুব্রতবাবু সভায় ঢুকে দেরির জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। সূর্যবাবু বলেন, “আমাদের (বাম) আমলে এমন ঘটনা কয়েক বার ঘটেছে। কিন্তু মন্ত্রীরা প্রশ্নোত্তর-পর্বে দেরি করলে স্পিকার তাঁদের তিরস্কার করতেন। এখন সে-সবের বালাই নেই!”
অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে সূর্যবাবু বলেন, “মন্ত্রী সর্বত্র বলে বেড়াচ্ছেন, বাম আমলের অজস্র বকেয়া বিল নিয়ে তাঁরা না কি হিমসিম খাচ্ছেন। আমি এ নিয়ে গত অধিবেশনেই প্রশ্ন তুলেছিলাম। অর্থমন্ত্রী তখন জবাব দিতে সময় চেয়েছিলেন। এই অধিবেশন শেষ হতে চলল। এখনও জবাব পাইনি। কয়লা নিয়ে প্রশ্নের জবাবই বা মন্ত্রী কেন দেবেন না? কেন প্রশ্নের সময় মন্ত্রীরা অনুপস্থিত থাকবেন?” দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাবের জবাবি বক্তৃতার সময় কংগ্রেসের বিধায়ক তথা সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও সভায় ছিলেন না। তিনি কেন নেই, কবেই বা প্রশ্নের উত্তর দেবেন, তা-ও বলতে পারেননি পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থবাবু। ওই বিষয়েও সূর্যবাবু সরব হন। পরে বিরোধী দলনেতা বলেন, “নানা ভাবে প্রশ্নোত্তর-পর্ব ছোট করা হচ্ছে। ছলে-বলে-কৌশলে বিধানসভার গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা করছে সরকার পক্ষ। দুরাত্মার ছলেরও অভাব হয় না!” |
|
|
|
|
|