|
|
|
|
আয় বৃদ্ধির ব্যাখ্যা নেই অমিতের জবাবি ভাষণে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তাঁর বাজেটকে কর্মবিমুখ, দিশাহীন এবং অনিশ্চিত বলে সমালোচনা করেছিলেন বিরোধীরা। আগামী অর্থবর্ষে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির যে ‘সংকল্প’ তিনি বাজেটে রেখেছেন, তা কোন পথে, কী ভাবে বাস্তবায়িত করা যাবে, বিশেষজ্ঞদের একাংশ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। গত কয়েক দিন ধরে বিধানসভায় প্রশ্ন তুলেছেন বাম বিধায়করাও। তা সত্ত্বেও রাজ্যে টাকার সংস্থান নিয়ে বিরোধীদের এবং জোটসঙ্গী কংগ্রেসের প্রশ্নের উত্তরে কোনও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিলেন না রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। বুধবার বাজেট বিতর্কের শেষে নিজের জবাবি ভাষণে বরং তিনি দাবি করলেন, ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষের জন্য তাঁর প্রস্তাবিত বাজেটের মাধ্যমে রাজ্যে উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা তৈরি হবে। আগামী বাজেট পেশের সময়েই তার প্রতিফলন দেখা যাবে।
তিন দশক পর এ বছর প্রথম অ-বাম বাজেট দেখেছেন রাজ্যবাসী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত নীতি মেনে আমজনতার উপর করের বোঝা না চাপিয়ে বিলাসদ্রব্যে কর বসিয়েছেন অথর্মন্ত্রী। এতে বিরোধীদেরও খানিকটা সমর্থন আদায় করেছেন তিনি। কিন্তু ওই পথে যে টাকা আসবে, তাতে রাজ্যের চাহিদা মিটবে না বলেই অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিকদের একাংশের মত। ফলে কোষাগারের ঘাটতি মিটিয়ে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি কী ভাবে হবে, বারবার সে উত্তরই জানতে চেয়ে বিধানসভায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা। টাকার সংস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেসও। ফলে গত কয়েক দিনের বাজেট বিতর্ক ঘোরাফেরা করেছে কৃষির উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও গ্রামোন্নয়নের দিশা এবং অর্থের সংস্থানের প্রশ্নে।
রাজ্য বাজেট পেশের পর প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তও বাজেটের সমালোচনা করে জানিয়েছিলেন, বাজেটে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির কোনও দিশা তো নেই-ই, উল্টে ক্ষুদ্রসেচ, ক্ষুদ্রশিল্প, গ্রামোন্নয়নের মতো অনেক ক্ষেত্রেই আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। বহু ক্ষেত্রে তা কমিয়েও দেওয়া হয়েছে। এর ফলে রাজ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা বাধা পাবে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। এ দিন বিধানসভায় একই সুরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, চলতি আর্থিক বছরে (২০১১-’১২) রাজ্য সরকার যে ৩০ শতাংশ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিল, তা বাস্তবে হয়েছে ১৮ শতাংশ। কাজেই, এ বছরের বাজেটে ফের যে ২৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে, তা বাস্তবায়িত করা যাবে কি? তা যদি হয়, তা হলে কোন পথে হবে, তার উত্তর অর্থমন্ত্রীর কাছে দাবি করেন সূর্যবাবু। প্রশ্ন করেন প্রবেশ কর নিয়েও। অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “সব দোষ ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের উপর না চাপিয়ে নিজে কিছু দায়িত্ব নিন। সত্যি সত্যিই বামফ্রন্ট সরকার কি কিছুই করে যায়নি? আপনার কাছে সঠিক এবং সত্য উত্তর আমরা চাইছি।”
বিতর্কের শেষ পর্বে নিজের জবাবি ভাষণে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, কৃষির উন্নতি, শিল্পের অগ্রগতি এবং দারিদ্র দূরীকরণই হল তাঁর সরকারের লক্ষ্য। সে কথা মাথায় রেখেই বাজেটের রূপরেখা ঠিক করা হয়েছে। তিনি যেমন রাজ্যে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে বাজেটে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের উপরে জোর দিয়েছেন, একই ভাবে অসংগঠিত শিল্পের শ্রমিকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথাও ভাবছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বামফ্রন্টের ‘ব্যর্থতা’র পরিসংখ্যান তুলে ধরে এবং বাজেটের পক্ষে নানা তথ্য জানিয়ে বিরোধীদের অমিতবাবু বলেন, “আপনারা বলছেন দিশাহীন বাজেট। কিন্তু বাজেটে যথেষ্ট দিশা রয়েছে। রাজ্যকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাবই।” |
|
|
|
|
|