|
|
|
|
অনুদান যায় যাক, বলছে অনেক গ্রন্থাগারই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সরকারি নির্দেশ। তাই সরকারি গ্রন্থাগারগুলির হাত-পা বাঁধা। কিন্তু সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অনেক গ্রন্থাগারই আটটি নির্দিষ্ট সংবাদপত্র রাখার ফতোয়া মানতে রাজি নয়। তাদের সাফ কথা, অনুদান বন্ধ হয়, হোক। কিন্তু তারা আগের মতোই বিভিন্ন সংবাদপত্র রাখবে। অনেক গ্রন্থাগার আবার কোন কোন সংবাদপত্র কেনা হবে, সে বিষয়ে পাঠকদের নিয়ে জনমত তৈরির কথাও ভাবছে।
কলকাতা থেকে জেলা সর্বত্রই এই ছবি। আনন্দবাজার, দ্য টেলিগ্রাফের মতো বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র বাদ দিয়ে মাত্র আটটি কাগজ রাখার যে নির্দেশ সম্প্রতি জারি করেছে রাজ্য সরকার, সেটা মানতে রাজি নয় প্রায় কোনও অনুদানপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারই। বাগবাজার রিডিং লাইব্রেরির সম্পাদক দীপক ভট্টাচার্য যেমন বললেন, “আমাদের ১২৯ বছরের পুরনো লাইব্রেরি। এখন বছরে ৪০ হাজার টাকা সরকারি অনুদান পাই। সরকারি নির্দেশ মেনে বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রগুলি রাখা বন্ধ করতে পারব না। তাতে যদি অনুদান আটকে যায়, যাবে।”
একই কথা বলছেন কসবা পাবলিক লাইব্রেরির সম্পাদক রাজপ্রশান্ত মিত্র। বই কেনার জন্য এই গ্রন্থাগারটিকে বছরে ১৫ হাজার টাকা দেয় রাজ্য সরকার। রাজপ্রশান্তবাবুর কথায়, “পাঠকের মতামত না-নিয়ে আমরা কিছু করি না। আগে যা যা সংবাদপত্র রাখতাম, পরেও তা-ই রাখব।” আর খিদিরপুরের মাইকেল লাইব্রেরির সম্পাদক নব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “সরকার জোর খাটালে মিটিং ডেকে পাঠকদের মতামত চাইব।” উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর এবং নদিয়ার কল্যাণী মহকুমার গ্রামীণ পাঠাগারগুলির কর্তারা জানান, সার্কুলার হাতে পাওয়া মাত্রই তাঁরা পাঠক ও পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকবেন।
সরকারি এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনেও যে অসন্তোষ দানা বাঁধছে, সেটাও ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে। হাওড়ার বাগনানের কয়েকটি গ্রন্থাগারের পদাধিকারীরা জানান, ইতিমধ্যেই নিয়মিত পাঠকরা এসে জানিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের পছন্দমতো সংবাদপত্র যদি রাখা না হয়, তা হলে কোনও সংবাদপত্রই আর নেওয়ার দরকার নেই।
এই অবস্থায় সরকারি নির্দেশ অমান্য করার পথে হাঁটতে চাইছে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত বেশ কিছু গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারমন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরী অবশ্য এ দিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সরকারি ও সরকারি অনুদানে চলা সব গ্রন্থাগার শুধু ওই আটটি সংবাদপত্রই কিনতে পারবে। তাঁর কথায়, “ওই আটটি ছাড়া অন্য সব সংবাদপত্রই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে চলে। সে জন্য সরকারি টাকায় ওগুলি কেনা যাবে না। মনে রাখতে হবে, গ্রন্থাগারের যাবতীয় টাকাই সরকারের। সেখানে কোনও খাত থেকে ওই আটটি ছাড়া অন্য সংবাদপত্র কেনা হলে আধিকারিকদের শো-কজ করা হবে।” সরকারের এই অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে শিলিগুড়ির অতিরিক্ত জেলা গ্রন্থাগারের কর্মীদের একাংশের সাফ কথা, তাঁরা নিজেদের টাকায় কয়েকটি সংবাদপত্র কিনে পাঠকদের পড়ার সুযোগ করে দেবেন।
সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারগুলির বেশির ভাগের অবস্থান যা-ই হোক, গ্রন্থাগারমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, “কেউ সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন বলে শোনা
যায়নি।” সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ খোলার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত কোনও গ্রন্থাগার আধিকারিক বা কর্মীকে শো-কজ করা হয়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ঘটনা হল, পুরোদস্তুর সরকারি গ্রন্থাগারগুলির তরফে এই নির্দেশের বিরোধিতা শোনা যায়নি। কারণ, সরকারি নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে না-মেনে তাদের কোনও উপায় নেই। মুর্শিদাবাদের জেলা গ্রন্থাগারিক ছুটিতে। জেলাশাসক রাজীবকুমার বলেন, “সরকারি সিদ্ধান্ত যখন, তখন মানতেই হবে।” নদিয়ার জেলা গ্রন্থাগারিক মৌসুমি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তালিকায় যে সংবাদপত্রগুলির নাম রয়েছে তার মধ্যে দু’টি দৈনিক আমরা নিতাম। অন্যগুলি মঙ্গলবার থেকেই নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।” কিন্তু যে সব গ্রন্থাগার আগাম টাকা জমা দিয়ে কোনও পত্রিকার গ্রাহক হয়েছে, তারা কী করবে, সে নিয়ে ধন্ধে রয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র স্মৃতি গ্রন্থাগারের সম্পাদক প্রবীরবরণ বসু বলেন, “বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র কেনার জন্য আগামী বছর পর্যন্ত টাকা আগাম জমা দেওয়া আছে। তত দিন নিশ্চয় ওই সংবাদপত্রগুলি রাখা যাবে।” |
|
|
|
|
|