বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা রবিউল হোসেন ও যুব তৃণমূল নেতা শেখ রাজেশ বুধবার দুপুরে ইন্দাস থানায় আত্মসমর্পণ করলেন। দুজনেই সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের মারধর, বাড়ি ভাঙচুর ও লুঠপাটের ঘটনায় অভিযুক্ত। সম্প্রতি বিষ্ণুপুর আদালত প্রায় আড়াই বছর আগের এক মামলায় জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “এ দিন দুপুরে রবিউল হোসেন-সহ দু’জন ইন্দাস থানায় আত্মসমর্পণ করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। কয়েকদিন ধরেই তাঁদের ধরার চেষ্টা চলছিল।”
এ দিন দুপুর তিনটে নাগাদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সহ-সভাপতি তথা পুত্র জামিরুল হোসেন এবং তাঁর কয়েকজন অনুগামীকে নিয়ে থানায় যান রবিউলবাবু।
রবিউল হোসেনের বাড়ি ইন্দাসের শাকরুল গ্রামে। ১৯৯৯ সাল থেকে ইন্দাস ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন তিনি। ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর ইন্দাসের বিধায়ক গুরুপদ মেটের বাড়ি থেকে ত্রাণের কয়েকশো কম্বল লুঠের অভিযোগে দলনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশে দল থেকে বহিষ্কৃত হন রবিউলবাবু। সম্প্রতি দলের জেলা সভাপতি শ্যাম মুখোপাধ্যায় তাঁকে বহিষ্কারের চিঠি দেন। এক আত্মসমর্পণকারী শেখ রাজেশের বাড়ি ইন্দাসের পাহাড়পুর গ্রামে। তিনি যুব তৃণমূলের করিশুণ্ডার অঞ্চল সভাপতি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ইন্দাসের বেতানল গ্রামে সিপিএম কর্মী, সমর্থকদের শতাধিক বাড়িতে ভাঙচুর, লুঠপাট ও মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। তার জেরেই তদানীন্তন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি রবিউল হোসেন, সহ-সভাপতি গৌতম বেরা-সহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। এখনও পর্যন্ত পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টে রবিউল হোসেন ও গৌতম বেরা-সহ ৩১ জনের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। সোমবার বিষ্ণুপুর আদালত ওই ৩১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তার পরেই ‘নড়েচড়ে’ বসে পুলিশ। ওসি তাপস দত্ত বাহিনী নিয়ে অভিযুক্তদের বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেন। ফলে দল থেকে বহিষ্কৃত রবিউলের পক্ষে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা ছিল না বলে মনে করছেন জেলা পুলিশের একাংশ।
রবিউলবাবু বলেন, “রাজনৈতিক কারণে ওই ঘটনায় আমার নাম জড়ানো হয়েছে। আইনের প্রতি আস্থা আছে। সবদিক ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” রাজ্যের শিশুকল্যাণ মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “সিপিএমের অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন আইন আইনের পথে চলুক। তাই এই আত্মসমর্পণ।” তিনি ইন্দাস ও পাত্রসায়রের একাধিক ঘটনায় অভিযুক্ত সিপিএম নেতা ও কর্মীদের গ্রেফতারেরও আবেদন করেছেন। তবে সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সিপিএমের ইন্দাস জোনাল কমিটির সম্পাদক অসীম দাসের পাল্টা জবাব, “ওই দিন রবিউল হোসেনের নেতৃত্বে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিল। পুলিশ এত দিন তাঁদের ধরেনি। বাকি অভিযুক্তেরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন।” |