জঙ্গলমহলে ‘জনমুখী’ আন্দোলনে সিপিএম
ঙ্গলমহলে ‘কোণঠাসা’ সিপিএম এ বার ‘জনমুখী’ আন্দোলনে নামতে চলেছে। বুধবার ঝাড়গ্রামে দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই আয়োজিত এক সভায় এই বার্তাই দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ডিওয়াইএফ-এর প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক মানব মুখোপাধ্যায়। এ দিন ‘বেকারি-বিরোধী দিবস’-এ ‘সকলের জন্য কর্মসংস্থান ও শিক্ষার দাবিতে’ প্রথমে দুপুর পৌনে ১২টা ঝাড়গ্রাম শহরের বলাকা মঞ্চে আয়োজিত সভার মূল বক্তা ছিলেন মানববাবু। বিকেলে মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর হলে একই দাবিতে আয়োজিত সভাতেও মুখ্য আলোচক ছিলেন তিনি। মানববাবু বলেন, “কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে। আমরা সরকারে নেই। আমাদের হাতে ক্ষমতাও নেই। তাহলে যুব সম্প্রদায় কীসের ভিত্তিতে আমাদের সংগঠনে আসবেন। কেন-ই বা আমাদের সমর্থন করবেন।” এর উপায়ও বাতলে দিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আমাদের স্লোগান আছে। বেকার-যুবদের যন্ত্রণা বোঝার জন্য মন রয়েছে। তাঁদের পাশে আন্তরিক ভাবে দাঁড়াতে হবে। কাজ ও শিক্ষার দাবিতে পাড়ায় পাড়ায় দেওয়াল লিখন করে আন্দোলন করতে হবে। এই দাবিতে পাড়ায় পাড়ায় সম্মেলন করতে হবে।” বস্তুতপক্ষে, মানববাবুর বক্তব্যে সংগঠনের ‘জনমুখী-আন্দোলন’ দিয়েই জঙ্গলমহলে ফের সিপিএমের ভিত শক্ত করতে চাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।
ঝাড়গ্রামে ডিওয়াইএফআইয়ের মিছিল। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
মানববাবুর অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পায়ন ও কর্মস্থানের সুযোগ করতে চাইছেন বটে। কিন্তু একটা সরকার চালানোর মতো ন্যূনতম ধারণাই নেই মমতার। মমতার ‘পরিবর্তন’-এর অর্থ স্রোতের বিপ্রতীপে চলা। তা সে যতই জন বিরোধী হোক না কেন!’’ ঝাড়গ্রামের সভায় মানববাবু বলেন, “৩৪ বছর ধরে রাজ্যের অর্থনীতি যে পথে হেঁটেছে, মমতার-সরকারের অর্থনীতি হাঁটছে তার উল্টো পথে। গরিব মানুষের উন্নয়নের ব্যাপারে সচেতন ভাবে উদাসীন থাকাটাই মমতার রাজ্য সরকারের কৌশল। গ্রামোন্নয়নের কাজ শিকেয় উঠেছে, অথচ অঢেল টাকা খরচ করে কলকাতায় সুদৃশ্য পথবাতি লাগানো হচ্ছে।” কর্মসংস্থান ও শিক্ষা নিয়ে মমতা-সরকারের কড়া সমালোচনা করে মানববাবু বলেন, “প্রতিদিন এ রাজ্যে বহু মানুষ কাজ হারাচ্ছেন। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাসফেল উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাঠ্যবই থেকে সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা বাদ দেওয়া হচ্ছে। সরকারি গ্রন্থাগারে সংবাদপত্র রাখার উপরে বিধি নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে।” মানুষের মোহভঙ্গ হচ্ছে দাবি করে মানববাবুর প্রত্যাশা, “ফের নতুন সকাল আসবে।” ঝাড়গ্রামের সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিওয়াইএফ-এর জেলা সম্পাদক কমল পলমল, সংগঠনের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সুদীপ্ত সরকার। ঝাড়গ্রামে সভা শুরুর আগে সংগঠনের মিছিল হয়।
মেদিনীপুরে ডিওয়াইএফের সভায় মানব মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
মেদিনীপুরের সভায় প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন,“ হিংস- মাওবাদী বাহিনী আমাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হল। নির্বাচনে হেরে গেছি। কিন্তু, আমরা বিনা লড়াইয়ে ময়দান ছেড়ে আসিনি।” রাজ্য সরকার নানা জনবিরোধী নীতি নিয়ে চললেও ‘ছেড়ে যাওয়া’ মানুষ যে দ্রুত দলে ফিরে আসতে পারেন না, বুধবারের সভা থেকে তাও মনে করিয়ে দেন মানববাবু। তাঁর কথায়,“ মুখ্যমন্ত্রীর কাজ দেখে রাজ্যের মানুষ দলে দলে আমাদের কাছে ফিরে আসবেন, এ ধারনা ঠিক নয়। নিশ্চিত ভাবে অনেকে ফিরে আসবেন। কিন্তু, সবাই ফিরে আসবেন না।” এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের কর্মীদেরও কাছে টানার পরামর্শ দেন তিনি। প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন,“ বিরোধী দলে থাকা মানুষকেও আনতে হবে।” পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, “এখন রাইটার্স বিল্ডিং যেন সার্কাসের আদর্শ মঞ্চ! শুধু বলছেন, এত লক্ষ চাকরি দিয়েছে। লক্ষ যেন ওঁর হাতে উড়ছে! আসলে, একজনের হাতে ক্ষমতা চলে গেলে যা হয়, তাই হচ্ছে! সব ক্ষেত্রে স্বৈরাচারী মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটছে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ফের সংগঠন সাজানোর উপরও জোর দেন মানববাবু। জঙ্গলমহল জুড়ে বহু দলীয় কার্যালয় বন্ধ, বামপন্থী মানুষজন ঘরছাড়া। এই পরিস্থিতি কি এখনই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব? উত্তরে প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন, “কেন নয়? আমরা মানুষের সমর্থন নিয়েই বন্ধ থাকা দলীয় কার্যালয় খুলব। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই এই অবস্থা কাটিয়ে উঠব। মানুষ ভুল বুঝতে শুরু করেছেন।” বস্তুত, আন্দোলন ‘জনমুখী’ করতেই তিন দশকেরও বেশি সময় পর বেকারি-বিরোধী দিবস পালন করল সিপিএমের যুব সংগঠন। লক্ষ্য, বেকারির ‘যন্ত্রণায়’ কাতর যুবক-যুবতীদের মুক্তির পথ খোঁজার রাস্তা দেখানো। তারই সঙ্গে সংগঠনের ভিত ফের ধীরে ধীরে মজবুত করে নেওয়া। এ দিন মিছিল করে যুব-কর্মীরা সভায় আসেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পন্ডাও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.