|
|
|
|
জমি-জটে আটকে স্কুল তৈরির কাজ, হাটচালাতেই চলছে পড়া |
অমিত কর মহাপাত্র • মোহনপুর |
জমি-সমস্যায় স্কুলঘর তৈরি করা যায়নি। অগত্যা গ্রামের হাটচালাতেই চলছে পঠন-পাঠন। কয়েকটা খুঁটি আর মাথার উপরে একটুকরো চাল। বাকি চার দিক ফাঁকা। তারই মধ্যে মেঝেয় ত্রিপল পেতে বসে কচিকাঁচারা। বর্ষায় বৃষ্টির ছাঁট বা শীতের কনকনে হাওয়া থেকে রেহাই নেই পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর ‘কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে’র পড়ুয়াদের।
মোহনপুর পঞ্চায়েত এলাকায় এই স্কুলটির উদ্বোধন হয় ২০১০ সালের ২৭ মার্চ। স্কুলের জন্য কোনও খাসজমি মেলেনি। গ্রামবাসীরাও কেউ জমি দান করতে এগিয়ে আসেননি। অগত্যা রামকৃষ্ণ মাইতি নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে ক্লাস নেওয়া শুরু হয়। ছাত্রছাত্রী সংখ্যা তখন ৪৭ (এখনও তাই)। পরে সেখানে নানা সমস্যা হতে থাকে। ইতিমধ্যে স্কুলের জন্য পশ্চিম মোহনপুর গ্রামসংসদ ৭ ডেসিমেল জমি কেনে স্থানীয় বাসিন্দা শেখ দিলজানের কাছ থেকে। স্কুলঘর তৈরির জন্য সরকারি ভাবে ৪ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা বরাদ্দ হলে কাজ শুরু হয়। কিন্তু ওই জমি ও জমিতে পৌঁছনোর রাস্তা নিয়ে বিবাদ শুরু হলে সেই কাজও বন্ধ হয়ে যায় অচিরে। শেষমেশ স্থানীয় হাটচালায় ক্লাস করার অনুমতি দেয় মোহনপুর জগন্নাথ মন্দির হাটকমিটি। |
|
ছবি: কৌশিক মিশ্র। |
তারপর থেকেই হাটের হই-হট্টগোল আর ধূলোবালিময় পরিবেশে চলছে পঠন-পাঠন। লাগোয়া মন্দিরে বছরভর বাজে মাইক। মিড-ডে মিল রান্নার জায়গা নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা বাড়ি থেকে রেঁধে আনেন। মেঝেয় বসে তা-ই খেয়ে নেয় খুদেরা। হাটচালার বহু-ব্যবহৃত শৌচাগার শিক্ষক-পড়ুয়াদের একমাত্র ভরসা। স্কুলের প্রধানশিক্ষক প্রকাশ দে বলেন, “সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের স্কুলমুখী করতে এই স্কুল খোলা হয়েছিল। কিন্তু ন্যূনতম পরিকাঠামোও না থাকায় স্কুলে ছেলে-মেয়েদের পাঠাতেও ভরসা পান না অভিভাবকেরা।” অন্য দুই শিক্ষক মদনমোহন দাস ও রঞ্জিতকুমার শীট বলেন, “খোলা জায়গা। তাই প্রতিদিন স্কুল শেষে আমাদের চেয়ার-টেবিল-খাতা-নথিপত্র, এমনকী ত্রিপল পর্যন্ত বয়ে নিয়ে গিয়ে শ’পাঁচেক মিটার দূরে মোহনপুর সমবায় কৃষি-উন্নয়ন সমিতির ঘরে রেখে আসতে হয়। পর দিন স্কুল শুরুর সময়ে আবার সেগুলো বয়ে নিয়ে আসি। এত অব্যবস্থার মধ্যে পড়াশোনায় মন দেওয়া সম্ভব নয় ছাত্র-ছাত্রীদের।”
সম্প্রতি অবশ্য গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে জমি-জট কেটেছে বলে জানান মোহনপুরের বিডিও সুনীতিকুমার মুখোপাধ্যায় ও মোহনপুর চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক পিয়ালি চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা জানান, স্কুলে যাওয়ার জন্য সামান্য জমি দান করতে সম্মত হয়েছেন শেখ দিলজান। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে স্কুলঘর তৈরি করে ফেলার চেষ্টা চলছে। তবে, ওই কাজ না হওয়া পর্যন্ত হাটচালাতেই পড়াশোনা করতে হবে।
যদিও আদপে জমি মিলবে কি না বা মিললেও এত দিন পরে আগের বরাদ্দ টাকায় স্কুলঘর নির্মাণ সম্ভব হবে কি নাতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পঞ্চায়েত ও গ্রামবাসীদের থেকে অর্থসাহায্য নিয়ে কাজ হয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করছেন বিডিও। কিন্তু গত দু’বছরের ইতিবৃত্তই এই আশ্বাস নিয়েও সংশয়ী করছে। |
|
|
|
|
|