|
|
|
|
গড়ছিরৌলিতে হত চন্দ্রকোনার জওয়ান |
শেষ ফোনেও খোঁজ নিয়েছিলেন ছেলের |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • চন্দ্রকোনা |
স্ত্রীর ফোনটা পাওয়ার পরে চাপা স্বরেই কথা বলছিলেন তিনি। সিআরপি জওয়ান অশোককুমার হাজরার স্ত্রী মিতাদেবী বলেন, “তখনই বললেন জঙ্গলে রয়েছি। ছেলের খোঁজ করছিলেন। তারপরেই তিনি ফোন রেখে দেন।” তার দেড় ঘণ্টা পরেই মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের গড়ছিরৌলিতে মাওবাদীদের পাতা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে উড়ে যায় অশোকবাবুদের বাস। ১১ জন সহকর্মীর সঙ্গে মারা যান পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার আগর গ্রামের বাসিন্দা অশোকবাবুও।
যেখানেই থাকুন, প্রায় প্রতিদিনই ছেলের সঙ্গে একবার কথা বলতেন অশোকবাবু। ওই দিন ভোরেও তিনি ফোন করে ছেলে সৌরদীপকে ডেকে দিতে বলেছিলেন। রাত ৯টা নাগাদ সৌরদীপই টিভিতে খবরটি দেখে। বুধবার সে বলে, “তখনও জানি না কী ঘটে গিয়েছে। আমি বাবার বন্ধুদের ফোন করি। তাঁরাও প্রথমে কিছু বলতে পারেননি। পরে জানতে পারি বাবা আর নেই।” সিআরপি’র ১৯২ ব্যাটেলিয়নের ‘ডি’ কোম্পানির ৪০ জন জওয়ানকে নিয়ে পুশতোলা থেকে গাট্টা যাওয়ার পথে বিস্ফোরণের মধ্যে পড়ে বাসটি। |
|
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহত অশোককুমার হাজরার পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র |
অশোকবাবু ছিলেন ওই ব্যাটেলিয়নের সাব-ইন্সপেক্টর। দীর্ঘদিন ধরেই সিআরপিতে কর্মরত ছিলেন অশোকবাবু। গড়ছিরৌলির আগে তাঁর কর্মস্থল ছিল লখনউ। গত অগস্টে তাঁর পদোন্নতি হয়। তারপরই বদলি হন মহারাষ্ট্রের গড়ছিরৌলিতে। প্রতিবেশীরা জানালেন, মিশুকে মানুষ ছিলেন অশোকবাবু। বাড়িতে এলেই পাড়ার সকলের সঙ্গে দেখা করতেন, কর্মস্থলের নানা গল্প বলতেন। এমন মানুষের আকস্মিক মৃত্যু মানতে পারছেন না কেউই।
প্রশাসনিক ভাবে মিতাদেবীদের কাছে খবরটা আসে বুধবার সকালে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে অশোকবাবু মেজ। সেজ ভাই শশাঙ্ক হাজরা বিএসএফ জওয়ান। কর্মসূত্রে এখন কাশ্মীরে। কিছু জমিজমাও রয়েছে অশোকবাবুদের। ছোট ভাই তাপস সে সব দেখাশোনা করেন। অশোকবাবুর স্ত্রী, পুত্র ছাড়াও গ্রামের বাড়িতে থাকেন বিধবা মা, ছোট ভাই ও অন্য দাদা-ভাইদের স্ত্রী, সন্তানেরা। অশোকবাবুর আকস্মিক মৃত্যুর খবরে সকলেই শোকস্তব্ধ। বৃদ্ধা মা উমাদেবী হাউহাউ করে কাঁদছেন। মাস দেড়েক আগে বাড়িতে এসেছিলেন অশোকবাবু। দাদা ললিতমোহনের মেয়ে রুমার বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। আগামী জ্যৈষ্ঠে ভাইঝির বিয়েতে আসবেন বলে কথা দেন অশোকবাবু। রুমার কথায়, “কাকু বলেছিল, দেড় মাস ছুটি নিয়ে আসবে। বিয়ের বেনারসিটাও কিনে দেবে বলেছিল। কিছুতেই মানতে পারছি না কাকু আর কোনও দিন আসবে না।” |
|
|
|
|
|