বর্ধিত যাত্রিভাড়া প্রত্যাহারের পরে এ বার অর্থ মন্ত্রকের কাছে বাতানুকূল শ্রেণিতে পরিষেবা কর প্রত্যাহারের দাবি জানাল রেল।
চলতি বাজেটে রেলের বাতানুকূল শ্রেণির টিকিটে প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ পরিষেবা কর বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। প্রথমে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর সব শ্রেণিতে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত, তার পরে বাতানুকূল শ্রেণির টিকিটে প্রণববাবুর পরিষেবা কর চাপানো এই জোড়া ধাক্কায় টিকিটের দাম অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বর্ধিত যাত্রিভাড়া প্রত্যাহার করে নেওয়ার পরে এ বার উচ্চ শ্রেণিতে পরিষেবা করও মকুব করার জন্য প্রণববাবুকে আবেদন জানালেন মুকুল রায়। মন্ত্রকের যুক্তি, এমনিতেই বাতানুকূল দু’টি শ্রেণিতে যাত্রিভাড়া বেড়েছে। এর পরে ফের পরিষেবা করের নামে এক প্রস্ত ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। বর্ধিত যাত্রিভাড়ার একাংশ প্রত্যাহারের পরে আজ যথাযোগ্য আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে অল ইন্ডিয়া রেলওয়ে ফেডারেশনও। তবে পরিষেবা কর প্রত্যাহারের ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত রেলকে জানায়নি অর্থমন্ত্রক। মে মাসে বাজেট অধিবেশন শেষ হওয়ার পরেই সম্ভবত সিদ্ধান্ত নেবে অর্থ মন্ত্রক। তবে রেলমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, অর্থ মন্ত্রক পরিষেবা কর তুলে দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ করবে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, প্রণববাবু একান্তই যদি পরিষেবা কর প্রত্যাহার করে না নেন, সে ক্ষেত্রে কী হবে? মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, যেহেতু তৃণমূল কংগ্রেস যে কোনও ধরনের যাত্রিভাড়া বৃদ্ধির বিপক্ষে, তাই বাতানুকূল শ্রেণিতে পরিষেবা কর বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া মুকুল রায়ের পক্ষে রাজনৈতিক কারণেই সম্ভব নয়। সেই পরিস্থিতিতে পরিষেবা করের ওই অর্থ রেল মন্ত্রক নিজের কোষাগার থেকেই মিটিয়ে দেবে অর্থ মন্ত্রককে। মন্ত্রক জানিয়েছে যাত্রিভাড়া থেকে এ বার ৩৬ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে মন্ত্রক। যার কুড়ি শতাংশ আসবে রেলের বাতানুকূল শ্রেণির টিকিট বিক্রি করে। সাড়ে তিন শতাংশ হারে পরিষেবা কর দিতে হলে রেলের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রককে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা মিটিয়ে দিতে হবে।
সম্প্রতি পণ্য পরিবহণেও প্রায় ২০ শতাংশ মাসুল বাড়িয়েছে রেল। এর পরে ১ এপ্রিল থেকে পণ্য পরিবহণের উপরেও পরিষেবা কর বসার কথা ছিল। পণ্য মাসুল বাড়ায় রেলের ঘরে প্রায় ১৫-১৬ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত এলেও বেড়েছে পণ্য পরিবহণের খরচ। ফলে ব্যবসায়ীদের একাংশ রেলের দিক থেকে মুখও ফিরিয়েছে। আরও ব্যবসা হারানোর ভয়ে বাড়তি পরিষেবা কর বসানোর ঝুঁকি নিতে নারাজ মন্ত্রক। তাই প্রণববাবুর কাছে পরিষেবা কর মকুবের আবেদন জানানো হয়েছিল। তা আগামী তিন মাসের জন্য পরিষেবা করে ছাড় দিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। রেল জানিয়েছে, গত এক বছরে অর্থ মন্ত্রক পরিষেবা কর না নেওয়ায় প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা রেলের ঘরে এসেছিল। এ বারও সারা বছরের জন্য ওই ছাড় পেতে সক্রিয় রেল মন্ত্রক। |