বরাক উপত্যকার গুরুত্বপূর্ণ শহর শিলচরে জনগণনার ক্ষেত্রেও ‘ইচ্ছাকৃত ভাবে’ ভুল করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। বরাক বিকাশ পরিষদ সরাসরি অভিযোগ করেছে যে, এটা ‘বরাক-বিরোধী ষড়যন্ত্র’। পরিষদের সভাপতি পরিতোষ পালচৌধুরী জানান, শিলচর পুর এলাকার জনগণনায় সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ‘ভুল’ ঘটানো হয়েছে। আর এই ব্যাপারটাকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলেই মন্তব্য করেন তিনি। পরিতোষবাবুর অভিযোগ, ২০০৯ সালের শিলচর পুরসভা নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৬৯২ জন। দেশে মোট জনসংখ্যার ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোটার। সেই হিসাব অনুযায়ী শিলচরের লোকসংখ্যা অবশ্যই দু’লক্ষের বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু ২০১১ সালের জনগণনার রিপোর্টে এই শহরের লোকসংখ্যা ১ লক্ষ ৭২ হাজার ২০৯ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ,“বরাক-বিরোধী ষড়যন্ত্র চালিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে শিলচরের জনসংখ্যা কম করে দেখানো হয়েছে।
পরিতোষবাবু জানান, শিলচর পুরসভা অনেক দিন থেকেই কর্পোরেশন স্তরে উন্নীত হওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। তাঁর সন্দেহ, এই দাবিকে দাবিয়ে রাখা ও বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার মতলবেই ইচ্ছাকৃত ভাবে শিলচর পুর এলাকার জনসংখ্যা কম করে দেখানো হচ্ছে। এমনকী এখনই রেশন দোকানে কার্ডপিছু বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জনগণনা যে সঠিক ভাবে হয়নি, সেই দাবির সমর্থনে জনগণনার বেশ কিছু অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ দেখান পরিতোষবাবু। তাতে দেখা যাচ্ছে, গিরিজা শুক্লবৈদ্য, সাগরিকা দাম, সুব্রত দত্ত, কৃষ্ণ মণ্ডল এমন নামের স্লিপে মোট জনসংখ্যা, প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ক’জন ইত্যাদির ঘরে কোনও সংখ্যারই উল্লেখ নেই। অথচ এই স্লিপগুলিকে রেশন কার্ডের প্রামাণ্য নথি হিসেবে ধরা হচ্ছে। যাদের স্লিপে জনসংখ্যার উল্লেখ নেই, তাঁদের রেশন সংগ্রহে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। তাই এই সব বিষয়গুলিকে সামনে রেখে জনস্বার্থের মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের বক্তব্য কী? জেলাশাসক হরেন্দ্রকুমার দেবমহন্ত জানান, কোন বছরের পুরসভার ভোটার তালিকায় কত ভোটার ছিলেন, তা তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু জনগণনার যে বিশ্লেষণ তিনি দেখেছেন, তাতে কাছাড়ে কোনও অসঙ্গতি তাঁর নজরে আসেনি। ২০০১ সালে কাছাড় জেলার লোকসংখ্যা ছিল ১৪ লক্ষ ৪২ হাজার। এ বার হয়েছে ১৭ লক্ষ ৩৬ হাজার ৩১৯। শিলচর পুর এলাকায় ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৩ জন থেকে এ বার হয়েছে ১ লক্ষ ৭২ হাজার ২০৯। ফলে রাজ্য বা জেলার গড়ের তুলনায় পুর এলাকার লোকসংখ্যা বৃদ্ধির হারের কোনও ফারাক নেই।
লোকসংখ্যা কমেছে বলে কার্ডপিছু রেশনসামগ্রীর বরাদ্দ কমানোর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন গণ সরবরাহ বিভাগের সহকারী অধিকর্তা মনোজকুমার বরা। তিনি জানান, বিষয়টি বরং উল্টো। জনসংখ্যা বেড়েছে বলে কার্ড বেড়েছে। কিন্তু এখনও জেলা বা রাজ্যের বরাদ্দ বাড়েনি। |