কাঁটা তিস্তা, ছিটমহল
সম্পর্কের অস্বস্তি কাটাতে ঢাকা সফরে প্রণব
তিস্তা চুক্তি থেকে ছিটমহল হস্তান্তর। গত এক বছরে এই বিষয়গুলি নিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক অস্বস্তি ক্রমেই বাড়ছে। এই দ্বিপাক্ষিক প্রেক্ষাপটে, সম্পর্কে গতি আনতে ৬ মে ঢাকা যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। উপলক্ষ, রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবর্ষ উৎসবের সমাপ্তি অনুষ্ঠান। কিন্তু সেই সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করবেন প্রণববাবু।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে যাতে পাকাপাকি কোনও চিড় না ধরে, তার জন্য বরাবরই সচেষ্ট থেকেছে কেন্দ্র। বকেয়া বিষয়গুলির সমাধানে চেষ্টা চালাচ্ছে মনমোহন সরকার। বাংলাদেশ-নীতি নিয়ে শরিক দলগুলির মধ্যে (মূলত তৃণমূল) ঐকমত্য গড়ে তোলারও চেষ্টা চলছে। মাস দেড়েক আগেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাংলাদেশে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ‘খালি হাতে’ তা করতে চায়নি কেন্দ্র। ঢাকার দাবি মেনে সব চুক্তি রূপায়িত হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখন তৈরি হয়ে গিয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। কিন্তু ২০১০-এ হাসিনার ঐতিহাসিক দিল্লি সফরের সময়ে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘকাল পরে যে ইতিবাচক কূটনৈতিক বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল, তার রেশ অক্ষুণ্ণ রাখাটাও ভারতের জন্য জরুরি। তাই আর দেরি না করে প্রণববাবুর ঢাকা সফর চূড়ান্ত করা হয়েছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রণববাবুর ব্যক্তিগত সখ্য এবং সম্পর্কের কথা সুবিদিত। বর্তমান জটিল পরিস্থিতিতে তাই তিনিই প্রধানমন্ত্রীর তরফে বাংলাদেশে সেরা দূত হতে পারেন বলে মনে করছে দিল্লি।
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, মে মাসে প্রণববাবু ঢাকা যাওয়ার আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিস্তা এবং ছিটমহল হস্তান্তর চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবে কেন্দ্র। ছিটমহল হস্তান্তর নিয়ে আপত্তি রয়েছে তৃণমূলের। মমতার বক্তব্য, এই চুক্তি রূপায়ণ হলে পশ্চিমবঙ্গের অনেক বেশি জমি চলে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সেটা তিনি হতে দিতে পারেন না। তা ছাড়া যে সব ছিটমহলবাসী ভারতের নাগরিকত্ব বেছে নেবেন, তাঁদের পুনর্বাসনের দায়-দায়িত্ব যে কেন্দ্রই নেবে, সে বিষয়েও দিল্লির পাকা প্রতিশ্রুতি চান মমতা। সব মিলিয়ে ছিটমহল হস্তান্তর নিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, অবিলম্বে তা কাটানোর দাবিতে টানা লাগাতার অনশন শুরু করেছেন ভারত ও বাংলাদেশের ছিটমহলের বাসিন্দারা।
জট তিস্তা চুক্তি নিয়েও। তিস্তার জল প্রবাহের বিষয়টি সরেজমিন খতিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট তৈরির দায়িত্ব নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেই রিপোর্ট তৈরি হতে এখনও দু’মাস লাগবে। রিপোর্ট পাওয়ার পরই মমতা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এরই মাঝে বরফ গলানোর লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মণি কলকাতায় গিয়ে মমতার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। দীপু মণি সেই বৈঠকে তিস্তার জলে বাংলাদেশের অধিকারের বিষয়টিতে জোর দিয়েছিলেন। তা ভাল ভাবে নেননি মমতা। মমতার বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যেতে চাইলে যাক। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বিপণ্ণ করে তাদের বাড়তি জল দেওয়া যাবে না।
বাংলাদেশও জানে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে গেলে জট দীর্ঘমেয়াদি হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ওই পদক্ষেপ আদৌ কাম্য নয়। এমনিতেই এখন সে দেশে সরকার-বিরোধী হাওয়াকে জোরদার করতে মাঠে নেমে পড়েছে মৌলবাদী শক্তি। হাসিনা সরকারকে সরাতে সক্রিয় সামরিক বাহিনীর একাংশও। পাশাপাশি রাজনৈতিক ভাবে প্রবল চাপ তৈরি করছে বিএনপি। বিএনপি-র বক্তব্য, তিস্তা চুক্তি রূপায়ণ না-করতে পারাটা হাসিনা সরকারের বিদেশনীতির চূড়ান্ত ব্যর্থতা। ভারতের আশঙ্কা, তিস্তা চুক্তি শেষ পর্যন্ত আটকে গেলে, আওয়ামি লিগ যদি ভারত-বিরোধিতার তাস খেলতে শুরু করে, সেটা দিল্লির পক্ষে আরও বিপজ্জনক হবে। এমনিতেই অগ্নিগর্ভ প্রতিবেশী বলয়ের মধ্যে বসে রয়েছে নয়াদিল্লি। বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষাকে তাই বিদেশ মন্ত্রক বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়।
মতবিরোধের ক্ষেত্রগুলির সমাধানের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক মতৈক্যের জায়গাগুলিকে জোরদার করতেও সমান ভাবে সক্রিয় দিল্লি। প্রায় ৮ বছর পর আজ নয়াদিল্লিতে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে। চলবে কাল পর্যন্ত। দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত হাটের সংখ্যা বাড়ানো, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রকে প্রসারিত করার মতো বিষয়গুলি নিয়ে সেখানে আলোচনা হচ্ছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.