নিজস্ব সংবাদদাতা • বোলপুর |
জমির আলপথের পাশে পড়েছিল সদ্যোজাত এক শিশু কন্যা। দেখতে পেয়ে পরম মমতায় তাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন এক আদিবাসী বধূ শুকুমনি মুর্মু। বোলপুর থানার মনিকুণ্ডুডাঙা গ্রামের ওই বধূ স্বামীকে নিয়ে অসুস্থ শিশুকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসাও করান। কিন্তু খবর পেয়ে তাঁদের কাছ থেকে সেই শিশুকে বুধবার ফেরত নিয়ে হোমে পাঠাল বীরভূম জেলা শিশু কল্যাণ সমিতি।
খেতমজুর শুকুমনিদেবী বলেন, “১০ মার্চ কাজ থেকে ফেরার পথে প্লাস্টিকের প্যাকেটের ভিতরে ওই শিশুটিকে পড়ে থাকতে দেখি। আমাদের কোনও সন্তান নেই। দেখে মায়া হয়। মেয়েটিকে তুলে বাড়িতে নিয়ে যাই।” তাঁর দাবি, পুলিশ ও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সে কথা জানিয়েছিলেন। শিশুটির মাথায় ক্ষত ছিল বলে ওদের পরামর্শে স্বামী কালী মুর্মুকে নিয়ে প্রথমে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে যান। সেখান থেকে তাঁদের বর্ধমানে যেতে বলা হয়। দিন তিনেক সেখানে তিনি ওই একরত্তি মেয়েকে নিয়ে থাকেন। তারপর বাড়ি ফেরেন। |
ফিরিয়ে দেওয়ার আগে শিশুকে জড়িয়ে কান্না শুকুমণি মুর্মুর।ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। |
ইতিমধ্যে খবর পেয়ে জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির লোকজন শিশুটিকে ফেরত চেয়ে খবর পাঠায়। কিন্তু শুকুমনি মেয়েটিকে ছাড়তে নারাজ ছিলেন। ততদিনে যে তিনি মেয়ের নাম ঠিক করে ফেলেছিলেনমমতাময়ী। কিন্তু প্রশাসনের লোকজন তাঁকে বোঝান, দত্তক না নিয়ে শিশুকে এ ভাবে রাখা যায় না। তাই শিশুটিকে নিজের কাছে রাখতে হলে তাঁদের আপাতত সমিতিকে ফেরত দিতে হবে। তারপর দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। সব দিক খতিয়ে দেখে তারপরেই দত্তক দেওয়ার জন্য প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।
এ দিনও বোলপুর মহকুমা শাসকের দফতরে মেয়েটিকে হস্তান্তর করতে এসে নাছোড় ছিলেন শুকুমনি। কোলছাড়া হওয়ায় ঘণ্টা খানেক ধরে মুর্মু দম্পতি কান্নকাটি করেন। দফতরের কয়েকজন কর্মীর চোখও ছলছল করে ওঠে। শুকুমনি বলেই চলেন, “আগেই যদি পুলিশ বা প্রশাসন আমাদের আইনের কথা জানাত, তা হলে ওকে কোলে নিতাম না। এরকম কষ্টও পেতে হত না।” শেষে বোলপুর থানার আইসি কমল বৈরাগ্য আসার পরে তিনি মেয়েটিকে তুলে দেন। বোলপুরের মহকুমা শাসক প্রবালকান্তি মাইতি বলেন, “শিশুটিকে সিউড়ির একটি হোমে আপাতত মাস দুয়েকের জন্য পাঠানো হচ্ছে। তারপর তাকে দত্তক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।” শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন সংযুক্তা ভট্টাচার্য বলেন, “দত্তক না নিয়ে কেউ অন্যের শিশু নিজের কাছে রাখতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে সবার সচেতনতা প্রয়োজন।” |