নিজস্ব সংবাদদাতা • সিউড়ি |
সিউড়ির সাইবার ক্যাফের মালিক প্রতুল চট্টোপাধ্যায় খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ধৃত স্কুল পড়ুয়াকে বুধবার জুভেনাইল আদালতে হাজির করল পুলিশ। যদিও ওই কিশোরের বাবা-মার দাবি, তাঁদের ছেলে কোনও ভাবেই এমন কাজ করতে পারে না। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তবে প্রতুলবাবুর স্ত্রী ও ছেলের দাবি, যেই খুন করে থাকুক না কেন দোষীর উপযুক্ত শাস্তি হোক। জেলা পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনার দাবি, “তদন্তে ওই কিশোরের নাম জানতে পেরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে প্রথমে আটক করা হয়েছিল। জেরায় সে খুনের কথা স্বীকার করেছে এবং যে ছুরি দিয়ে খুন করা হয়েছে, সেটা সে কোথায় রেখেছিল তাও পুলিশকে দেখায়। সেই মতো ছুরি উদ্ধার করা হয়। তার পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।” সিউড়ির জুভেনাইল আদালতের বিচারক সুজাতা খর্গ ওই কিশোরকে ১৪ দিন বহরমপুর জুভেনাইল সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়র প্রতুলবাবুর স্ত্রী ও ছেলে বছর পাঁচেক আগে আত্মীয়তার সূত্র ধরে সিউড়ির বড়বাগান এলাকার একেরপল্লিতে ঘরভাড়া নেন। বছর খানেকের মধ্যে প্রতুৃলবাবুও চাকরি ছেড়ে দিয়ে সিউড়ি চলে আসেন এবং ইন্দিরাপল্লিতে সাইবার ক্যাফে খোলেন। গত বছর দু’য়েক থেকে সিউড়ির কেন্দুয়া দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা নবম শ্রেণির ওই ছাত্র কম্পিউটারের কাজে প্রতুলবাবুকে সাহায্য করত। প্রতুলবাবুর স্ত্রী কাঞ্চনাদেবী ও ছেলে দীপাঞ্জন বলেন, “ছেলেটি বাবার ক্যাফে খুব আসত। বাবা ওকে বিশ্বাসও করত। মাঝে মধ্যে ওকে রেখে দিয়ে বাবা কিছুক্ষণের জন্য যেখানে সেখানে চলে যেতেন।” দীপাঞ্জনের দাবি, “পরে বাবা বুঝতে পারেন, ছেলেটি মাঝে মধ্যে টাকা-পয়সা সরাচ্ছে। ওই ছেলেকে বাবা এ ব্যাপারে বলেন। তখন ছেলেটি বলে, তার বাড়িতে বা পুলিশকে কিছু বলবেন না। সে টাকা মিটিয়ে দেবে। খুন হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত বাবা তার কাছে টাকা চেয়েছিলেন। তারই মধ্যে চাঁদা নিয়ে বাবার সঙ্গে কয়েক জনের বচসা হয়। তারা খুনের হুমকি দিয়েছিল। তাই প্রথমে ভেবেছিলাম যারা চাঁদা নিতে এসেছিল তারাই বাবাকে খুন করেছে। ওই ছেলেটি এমন করবে ভাবতে পারিনি।” তিনি বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের সময় টাকা চুরির ঘটনার কথা জানাই। পুলিশ বাবার ফোন ও ক্যাফের রেজিস্ট্রার বাজেয়াপ্ত করে। তার পরে যা করার পুলিশ করেছে।”
পুলিশের দাবি, ওই কিশোর জেরায় স্বীকার করেছে, ২১ মার্চ রাতে সাইবার ক্যাফে সে যখন যায়, প্রতুলবাবু তার কাছে ফের টাকা চান। সে জানায়, একটু খেলে টাকা দিচ্ছে। প্রতুলবাবু ক্যাফে বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন সে তাঁর গলায় ছুরি মারে। প্রতুলবাবু পড়ে গেলে সে পেটে ছুরি মারে। তার পরে ছুরিটা একটা খালে ফেলে পালায়। জেরায় সে আরও জানিয়েছে, সিউড়ির নিউ মার্কেটের একটি দোকান থেকে ১৯ মার্চ ছুরিটা কেনে। তার বিরুদ্ধে টাকা চুরির মিথ্যা অভিযোগ করায় রাগে সে খুন করেছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিশির দাস বৈরাগ্য বলেন, “গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ওই ছাত্র খুব একটা স্কুলে আসে না। তবে তার সম্পর্কে কোনও দিন অভিযোগ পাইনি।” সহপাঠীরাও বলে, “সে কোনও দিন কারও কিছু নিয়েছে, জানা নেই।” |