প্রতি বছরের মতো এ বছরেও বাসন্তী পুজোর উৎসবে মেতে উঠেছে খনি ও শিল্পাঞ্চল। প্রাচীন পুজোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাম্প্রতিক পুজোও জায়গা করে নিয়েছে এই উৎসবে। পুজোকে ঘিরে নানা কিংবদন্তীও একেবারে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেনি প্রজন্ম ব্যবধানে।
জামুড়িয়ার ইকড়া গ্রামের চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজো। শুরু হয়েছিল ১৮৯৪ সালে। এত বছরের ব্যবধানে এখন সেই পুজো পরিবারের ‘ব্যক্তিগত’ সীমা পেরিয়ে পরিণত হয়েছে স্থানীয় মানুষের মিলনোৎসবে। পরিবারের প্রবীন সদস্য দেবরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় জানান, ১১৯ বছর আগে তাঁদের পূর্বপুরুষ বিজয় গোবিন্দ স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে শুরু করেছিলেন এই পুজো। কোলিয়ারিতে ম্যানেজারের কাজ করতেন তিনি। বাসন্তী পুজোর ষষ্ঠীর দিন কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাঁর সঙ্গে এক দরিদ্র বালিকার দেখা হয়। সে তাঁর কাছে খেতে চাইলে গোবিন্দবাবু নিজের বাড়িতে নিয়ে যান তাঁকে। বাড়ি ঢুকে তাঁর স্ত্রীকে ডাকতে গেলে বাইরে বেরিয়ে এসে তিনি দেখেন, বালিকা নেই। সেই দিন রাতেই ওই বালিকাকে স্বপ্নে দেখেন তিনি। |
তাঁর ‘নির্দেশ’ পেয়েই তৈরি করেন বাসন্তী দেবীর মন্দির। স্থানীয় মানুষ বলেন, তার পর থেকেই নাকি রাতারাতি ৬টি কোলিয়ারির মালিক হন বিজয়গোবিন্দ। এই পুজোকে কেন্দ্র করে শুরু হয় মেলাও। ইকড়া থেকে সালানপুরের মানুষ সামিল হন সেখানে। প্রবীন বাসিন্দা সুশীল চট্টোপাধ্যায় বলেন, মন্দিরের জায়গায় আগে শ্মশান ছিল। মন্দির তৈরির পাশাপাশি আধ্যাত্মিক চিন্তার বিকাশের জন্য বাসন্তীদেবীর নামাঙ্কিত একটি স্কুলও তৈরি করা হয়েছিল ওই জমিতে।
এরকমই শতাব্দী প্রাচীন বারাবনির রায়বাড়ির পুজো। পাঁচগাছিয়া, লুনি, লালগঞ্জের মানুষের সমাগম হয় ওখানে। স্থানীয় বিধায়ক বিমান উপাধ্যায়ের ভাই পাপ্পু উপাধ্যায় বলেন, “প্রাচীন এই পুজো এলাকার উৎসবে পরিণত হয়েছে।”
নয় নয় করে ৬৪ বছরে পা দিল কুলটির ডিসেরগড় গ্রামের চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজোও। পরিবারের সদস্য বিমান চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁর বাবা অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় নগেন্দ্র ব্রহ্মচারীর নির্দেশে এই পুজো শুরু করেন। অন্যগুলির মতো এই পুজোতেও জড়ো হন এলাকার মানুষ।
আসানসোল বাজার এলাকায় জিটিরোডের ধারে ১২৪ বছরের পুরনো মহাবীরস্থান সেবা সমিতিতে ৮ বছর আগে শুরু হয় পুজো। সংলগ্ন এলাকার প্রায় সব পরিবারই যুক্ত এই পুজোর সঙ্গে। সংস্থার সম্পাদক অরুণ শর্মা জানান, ‘আদি’ বলে পরিচিত এই মন্দিরের দুর্গাপুজো। এলাকার মানুষের চাহিদায় ৮ বছর আগে শুরু হয়েছে বাসন্তী পুজো। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর দিন পংক্তিভোজের আয়োজন করা হয়।
১৯৬৫ সালে পুজো শুরু করেন হিরাপুরের বার্নপুর অ্যাথলেটিক ক্লাব দাতব্য চিকিৎসালয়ের সদস্যরা। পাঁচ বছর আগে তৈরি হয়েছে স্থায়ী মন্দির। আয়োজকদের পক্ষে সংস্থার সম্পাদক শম্ভু দেবনাথ জানান, প্রতি বছর এই সময়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তাঁরা। এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা থাকায় তা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৮ সাল থেকে বাসন্তী পুজো করে আসছে এলাকারই ধ্রুবডাঙার মহারানি স্থান সঙ্ঘ। এই সময়ে ন’দিন ধরে দুর্গার নয় অবতারের পুজো করেন সঙ্ঘের সদস্যেরা।
অন্য দিকে, ৪৭ বছরে পা দিল হিরাপুরেরই রামকৃষ্ণ-পূর্ণানন্দ সঙ্ঘের পুজো। সঙ্ঘের পক্ষে স্বামী শান্তানন্দ জানান, স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে পুজো শুরু করেছিলেন গুরু পূর্ণানন্দ। এখন তা সর্বজনীন। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধ্যায় বসবে বাউল গান ও কীর্তনের আসরও। |