নিয়ম না মেনেই তৈরি হচ্ছে বহুতল। এই নিয়ে একাধিক অভিযোগ আসায় আসানসোল শিল্পাঞ্চলের পঞ্চায়েত এলাকায় বহুতল নির্মাণের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করল মহকুমা প্রশাসন। প্রাথমিক ভাবে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে সালানপুর ব্লকে। পরে সরেজমিনে তদন্ত করে আরও তিনটি ব্লকে একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
আসানসোলের মহকুমাশাসক সন্দীপ দত্ত জানিয়েছেন, ব্লক প্রশাসন সূত্রে এ সব অভিযোগ পেয়ে তিনি নিজের স্তরে তদন্ত করেছেন। সন্দীপবাবুর কথায়, “সাধারণ বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর ফলে পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটছে। এই বিশৃঙ্খলা মহকুমা প্রশাসন মেনে নিতে পারে না। তাই নির্মাণের উপরেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।”
বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম মানার কথা?
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত এলাকায় সাড়ে ছয় মিটারের বেশি উচ্চতায় বহুতল বানানো যাবে না এবং বহুতলগুলি বানাতে হবে ২৮০০ বর্গফুট এলাকার উপরেই। |
কী হচ্ছে বাস্তবে? প্রশাসনিক কর্তারা জানিয়েছেন, দেখা গিয়েছে বহুতলগুলি প্রায় ১৫ মিটার উচ্চতায় বানানো হচ্ছে। একাধিক বহুতলের দমকলের ছাড়পত্র নেই। অনুমতি ছাড়া গভীর নলকূপ বানিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তোলা হচ্ছে। নিকাশি ব্যবস্থার সুবন্দোবস্ত করা হচ্ছে না। এমনকী, পুরনো জলাশয় বুজিয়েও প্রমোটাররা বহুতল বানিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ এসেছে প্রশাসনের কাছে।
আসানসোল মূল শহর ছাড়া আশেপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলেও তৈরি হচ্ছে প্রচুর বহুতল। আসানসোলের পরেই বহুতলের রমরমা শুরু হয়েছে সালানপুর ব্লকে। এই ব্লকের রূপনারায়ণপুর, আছড়া, সামডিহি অঞ্চলে একাধিক বহুতল বানানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় কুড়িটি বহুতল শেষ হয়েছে। আরও কিছুর নির্মাণ কাজ চলছে। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, বহুতলগুলি সরকারি নিয়মনীতি মেনে বানানো হচ্ছে না।
বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে তাঁরা ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করছে না। এই অবস্থায় রূপনারায়ণপুর, আছড়া অঞ্চলে রমরমিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রোমোটার রাজ। অবৈধ নির্মাণের প্রতিবাদ করায় প্রোমোটারেরা তাঁদের প্রাণনাশেরও হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। এর ফলে তাঁরা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন। সালানপুরের বিডিও জয়দীপ দাস বলেন, “আমিও এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে মহকুমাশাসককে বিস্তারিত বলেছি। মহকুমাশাসকের নির্দেশেই আপাতত বহুতল নির্মাণের উপরে স্থগিতাদেশ দিয়েছি।”
মহকুমাশাসক আরও জানিয়েছেন, বহুতল নির্মাতাদের জমির দলিল, দমকলের অনুমতিপত্র, বহুতলের নকশা, গভীর নলকূপ খননের অনুমতিপত্র সব একত্রিত করে ব্লক প্রশাসনকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। সমস্ত নিয়ম মাফিক থাকলে তবেই মিলবে ছাড়পত্র।
সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল মজুমদার বলেন, “পঞ্চায়েত আইনের মধ্যে থেকেই বহুতল বানাতে হবে। এ’বিষয়ে কিছুই বলার নেই। তবে নির্মীয়মান বহুতলগুলির ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেওয়া হোক।”
একই সঙ্গে সালানপুর পঞ্চায়েত এলাকায় গভীর নলকূপ বানাতে হলে স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে অনুমতি নিতে হবে। এই দফতরের অনুমতি ছাড়া গভীর নলকূপ বসালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন সালানপুরের বিডিও জয়দীপ দাস। বস্তুত বহুতল নির্মাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই এই পদক্ষেপ বলে জানা গিয়েছে। |