বাজেট পাশ আটকে ছিল দীর্ঘ দিন। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই জেলার ‘উন্নয়ন’ থমকে নেই। জেলা পরিষদের আর্থিক দায় ভার তাঁর হাত থেকে রাতারাতি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলাশাসকের হাতে তুলে দেওয়ার পরে মঙ্গলবার এমনই মন্তব্য মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের সভাধিপতি সিপিএমের পূর্ণিমা দাসের।
তিনি বলেন, “২০১১-১২ আর্থিক বছরের বাজেটে ৬১৯ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়। যার মধ্যে ২৯৬ কোটি ৩৮ লক্ষ আমরা হাতে পেয়েছি। বিআরজিএফ (পিছিয়ে পড়া এলাকা উন্নয়ন তহবিল) খাতে ৪ কোটি টাকা, আরআইডিএফ (গ্রামীণ উন্নয়ন পরিকাঠামো তহবিল) খাতে ২০ কোটি টাকায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ৩৯টি পিচ রাস্তার কাজ চলছে। এ ছাড়া ইন্দিরা আবাস যোজনা খাতে গত আর্থিক বছরে আমরা খরচ করেছি ৭০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্যবিধান কর্মসূচি খাতেও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে উন্নয়ন করা হয়েছে।”
সভাধিপতির অভিযোগ, এত দিন বাজেট পাশ হয়নি ঠিকই। কিন্তু এডিএম (জেলাপরিষদ) বদলি হয়ে যাওয়ার পরে নতুন কাউকে ওই পদে নিয়োগ করা হয়নি। অতিরিক্ত জেলাশাসককে বাড়তি দায়িত্ব দিয়ে জেলাপরিষদের কাজ চালানো হচ্ছিল। জেলাপরিষদের সচিব পদে কেউ নেই। ডেপুটি সচিব পদে রয়েছেন এক জন। পূর্ণিমাদেবী বলেন, “বিভিন্ন শূন্য পদে কর্মী নিয়োগ না করে রাজ্য সরকার জেলাপরিষদকে পঙ্গু করে রেখেছে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন উন্নয়নের কাজ চলছে।”
এই অবস্থায় ২২ মার্চ রাজ্য সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে বামফ্রন্ট ‘সংখ্যালঘিষ্ঠ’ হয়ে পড়ায় জেলাপরিষদে তারা বাজেট পাশ করাতে পারছে না। তাই জেলা পরিষদের ব্যয়ের বহর সামলাবেন জেলাশাসক। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজীবকুমার বলেন, “অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছ থেকে মঙ্গলবার সকালে ওই চিঠি আমি পেয়েছি। জেলাপরিষদে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ায় বিভিন্ন প্রকল্প অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়, তা খরচ করার ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে। সে জন্য ওই আর্থিক ক্ষমতা জেলাশাসকের হাতে দেওয়া হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, জেলা পরিষদকে অন্ধকারে রেখে জেলাশাসক ওই অর্থ খরচ করবে।”
তবে মুর্শিদাবাদে গত ২৩ জুলাই থেকে কংগ্রেস বাজেট পাশ করানোর ব্যাপারে বাধা দিয়ে এলেও গত ১৯ মার্চ দলীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় জেলার উন্নয়নের স্বার্থে বাজেট পাশে সহযোগীতা করা হবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪শে মার্চ বাজেট পাশও হয়ে গিয়েছিল। এর পরেও কী করে উন্নয়ন থমকে যাওার অভিযোগ ওঠে? এ প্রশ্ন তুলেছেন বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদই এক মাত্র জেলা যেখানে তৃণমূলের খবরদারির কাছে মাথা নোয়নি কংগ্রেস। এই বিজ্ঞপ্তি তাই অনৈতিক।” এ ব্যাপারে মহাকরণ অভিযানেরও ডাক দিয়েছে জেলা কংগ্রেস।
এ দিকে, দলত্যাগ বিরোধী আইনে জেলাপরিষদ সদস্য নুরুল ইসলামের সদস্য পদ খারিজ হয়েছে প্রায় পনেরো মাস আগে। কিন্তু সেই পদে নির্বাচন হয়নি আজও। নতুন সরকারও ওই আসনে নির্বাচনের কথা ভাবেনি বলে কংগ্রেসের দাবি। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী শূন্য পদ পূরণের জন্য ৬ মাসের মধ্যে উপ-নির্বাচন করানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু নুরুল ইসলামের বরখাস্ত হওয়া ১৫ মাস পেরিয়ে গেলেও ওই শূন্য পদ পূরণের চেষ্টা করেনি তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। তাঁরা জেলাপরিষদে নিজেদের ক্ষমতা বজায় রাখতেই ওই সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের তিন জন সদস্য বিধায়ক হওয়ায় জেলাপরিষদে মোট ৪টি শূন্য পদ সৃষ্টি হয়েছে।
২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের ৬৩টি স্থায়ী আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৩১টি ও বামফ্রন্ট ৩২টি আসনে জয়ী হয়।
পরে ২০১০ সালে সিপিএমের নুরুল ইসলাম দলত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দেন। এই অবস্থায় সিপিএম দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগ করার ফলে রাজ্য পঞ্চায়েত দফতর থেকে নুরুল ইসলামের সদস্য পদ খারিজ করে দেয়। ফলে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের আসন সংখ্যা হয় ৩১-৩১।
এ দিকে, কংগ্রেসের তিন জন জেলাপরিষদ সদস্য শাওনী সিংহ রায়, হুমায়ুন কবির ও প্রতিমা রজক ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় জেলাপরিষদে স্থায়ী সদস্যপদে ভোটাধিকার হারান। জেলা পরিষদের কংগ্রেসের আসন সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২৮।
জেলাপরিষদের ওই ২৮ জন সদস্যের সঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির ১৪ জন, ৩ জন সাংসদ (প্রণব মুখোপাধ্যায় মন্ত্রী হওয়ায় ভোট দিতে পারবেন না), ১৩ জন বিধায়ক (বিধায়ক আবু হেনা মন্ত্রী হওয়ায় তাঁরও ভোটাধিকার নেই) মিলিয়ে সাধারণ সভায় কংগ্রেসের মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৮ জন। কিন্তু গত ১২ মার্চ দল ত্যাগ করে কংগ্রেসের ৭ জন সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে সাধারণ সভায় কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা কমে ২০ হয়।
এতে সাধারণ সভাতেও কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা কমে ৫১ হয়। অন্য দিকে মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের স্থায়ী সমিতিতেও এই মুহূর্তে ৫১ জন বামফ্রন্ট সদস্য রয়েছেন। ওই ৫১ জনের মধ্যে জেলাপরিষদ সদস্য ৩১ জন, পঞ্চায়েত সমিতির ১২ জন সভাপতি, ৭ জন বিধায়ক এবং ১ জন সাংসদ (রাজ্যসভার সংসদ মইনুল হাসান)। |