পুরুলিয়ায় দুর্ঘটনায় মৃত ৬, আহত ৩
তিনটি পৃথক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ছয় জনের। আহত হয়েছেন তিন জন। রবিবার রাতে রঘুনাথপুর থানা ও পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকায় দুর্ঘটনাটিগুলি ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে রঘুনাথপুর-বাঁকুড়া সড়কে রঘুনাথপুর থানার বেড়ো গ্রামের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় ধান বোঝাই একটি ছোট লরি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় লরিটিতে থাকা তিন মজুরের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম যথাক্রমে অর্জুন ওরফে গাজু বাউরি (৪৫), নবনী বাউরি (৩১) ও রবি বাউরি (৩০)। তিনজনেরই বাড়ি বাঁকুড়ার ছাতনা থানার আসরাবাঁধ গ্রামে। দুর্ঘটনায় আরও তিনদন মজুর আহত হন। তাঁদের প্রথমে ভর্তি করা হয় রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে। রাতেই সেখান থেকে বাঁকুডা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানোর সময়ে রাস্তায় মৃত্যু হয় শঙ্কর বাউরি (২৮) নামের আরেক মজুরের। তাঁরও বাড়ি আসরাবাঁধ গ্রামে।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত ধান বোঝাই গাড়ি। ছবি: সুজিত মাহাতো।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, প্রায় ষাট কুইন্টাল ধান নিয়ে লরিটি বর্ধমানের গলসি যাচ্ছিল। বেড়ো গ্রামের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ধান খেতে উল্টে যায় গাড়িটি। গাড়ির নীচে চাপা পড়ে তিনজন। পরে পুলিশ এসে জেসিবি দিয়ে লরিটিকে তুলে ওই তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধআর করে।
পুরুলিয়ার ধান ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিত্যানন্দ গোস্বামী জানান রঘুনাথপুরের তিন চাষির কাছ থেকে ধান কিনে বর্ধমানের একটি চালকলে পাঠাচ্ছিলেন আসরাবাঁধ গ্রামেরই ধান ব্যবসায়ী জীবন আচার্য। ধান কেনার কাজের জন্য নিজের গ্রাম থেকেই তিনি নিয়ে এসেছিলেন ওই মজুরদের। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আসরাবাঁধ গ্রাম থেকে মহকুমা হাসপাতালে এসেছিলেন মৃত মজুরদের আত্মীয়রা। তাঁদের মধ্যে ভীম বাউড়ি, অশোক বাউড়িরা বলেন, “ধান কেনার জন্য ব্যবসায়ীরা সামান্য মজুরির বিনিময়ে ভাইদের মজুর হিসাবে নিয়ে যায়। তাঁদের ঘরে স্ত্রী সন্তানরা আছে। আমরা মৃতদের দুঃস্থ পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ানোর জন্য ধান ব্যবসায়ী সমিতির কাছ থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ দাবি করছি।” ক্ষতিপূরণের দাবি প্রসঙ্গে নিত্যানন্দবাবু বলেন, “গাড়ির মালিক ও চালকলের মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। মৃতদের পরিবারগুলিকে ক্ষতিপুরণ দেওয়া হবে।”
এ দিকে এইভাবে ধান চাষিদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা সরাসরি ধান কেনার ফলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে জেলা তৃণমূল কংগ্রেস। দলের নেতা বিষ্ণু মেহেতা বলেন, “বাইরের জেলার ব্যবসায়ীরা এসে সরাসরি ধান কিনছে। চাষিরা সরকারি মুল্য পাচ্ছে না। পুরুলিয়ার ধান বাইরে চলে যাচ্ছে। খাদ্য দফতর ও পুলিশকে বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়েছে।” পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে খাদ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে কী করণীয় আছে দেখতে হবে। জেলা খাদ্য নিয়ামক সাধন পাঠক বলেন, “সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের সরকার নির্ধারিত হারে বা তার বেশি দামে ধান কিনতেই হবে। এক্ষেত্রে সেই নির্দেশ মানা হয়েছে কিনা দেখা হচ্ছে।” ধান ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিত্যানন্দ গোস্বামীর দাবি, “চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার ক্ষেত্রে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। তাছাড়া সরকার নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে বেশি দামে ধান কিনেছেন তারা।”
অন্য দিকে রবিবার রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে ডাম্পারের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে এক সরকারি কর্মীর। পুলিশ জানিয়েছে, ওই কর্মীর নাম অজিত মুদি (৪৫)। বাড়ি সাঁতুড়ি থানার আটুমাঝিরডি গ্রামে। রাতে গ্রামেরই বাসিন্দা কৃষ্ণপদ মাজির সঙ্গে তিনি রঘুনাথপুর থেকে মোটর বাইকে বাড়ি ফিরছিলেন। পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কে রঘুনাথপুর থানার ঝাড়ুখামার মোড়ের কাছে সামনের দিক থেকে আসা ডাম্পার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁদের ধাক্কা মারলে ঘটনাস্থলেই মারা যান রাজ্য সেচ দফতরের কর্মী আজিতবাবু। আহত কৃষ্ণপদবাবুকে রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ডাম্পারের চালক মন্টু রজককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে এদিন রঘুনাথপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ ছাড়াও দু’টি ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে এক ট্রাক চালকের। রবিবারই রাতে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পুরুলিয়া মফস্বল থানার কাড়ামাড়া গ্রামের অদূরে পুরুলিয়া জামসেদপুর ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কে। মৃত ট্রাক চালকের নাম শেখ আসলাম (২৬)। বাড়ি পুরুলিয়ার জয়পুর থানার রাঙ্গাডি গ্রামে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতে জাতীয় সড়কের পাশে ধাবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা মেরেছিল ওই ট্রাক চালক। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পর সেখানেই তার মৃত্যু হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.