মুর্শিদাবাদের বড়ঞায় কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন এক কৃষক।
হিরন্ময় ঘোষ (৪২) নামে বড়ঞার সাহোড়া পঞ্চায়েতের ঘুনকিয়া গ্রামের ওই কৃষকের আত্মঘাতী হওয়ার পিছনে ঋণের বোঝাই দায়ি বলে মনে করছেন তাঁর পরিবার।
রবিবার রাতে বহরমপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে হিরন্ময়বাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর পারিবারিক সূত্রে দাবি করা হয়েছে, স্থানীয় এক মহাজনের কাছ থেকে মাসিক ৫ শতাংশ হারে সুদে ৮০ হাজার টাকা এবং স্থানীয় কৃষি সমবায় সমিতি থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। সময়ে তা শোধ করতে না পারায় মহাজনেরা তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে নিত্য গালমন্দও করছিল কিছু দিন ধরে। এমন কী সর্ব সমক্ষে তাঁকে হেনস্থাও করা হয় বলে জানা গিয়েছে। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হিরন্ময়বাবু এর পর থেকেই ভেঙে পড়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর এক আত্মীয়।
প্রায় ৬ বিঘা জমি রয়েছে হিরন্ময়বাবুর। গত শীতে ধানের ফলন ভালই হয়েছিল তাঁর। কিন্তু ‘প্রতিশ্রুতি’ সত্ত্বেও সে ধান সরকার কিনতে না পারায় অবিক্রিতই থেকে গিয়েছিল। গোলায় এখনও তাঁর পড়ে রয়েছে প্রায় ৩০ কুইন্ট্যাল ধান। ঋণের টাকা আর শোধ করতে পারেননি তিনি। সেই হতাশাই তাঁকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ। |
স্থানীয় বিডিও সুব্রত মহন্ত বলেন, “প্রশাসনের কাছে স্পষ্ট কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে গোটা বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে বড়ঞা থানার পুলিশকে।”
ওই কৃষকের জেঠতুুতো দাদা দিবাকর ঘোষ। তিনি বলেন, “বস্তায় ৫০ কিলো আলু থাকে। সেই বস্তা, ২৩ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। তার আগে ভাই আমন ধান চাষ করে। কিন্তু ফলন বিক্রিই হয়নি প্রায়। মহাজনের কাছে ঋণ নিয়ে বোরো ধানের চাষ করতেও পারেনি। মানসিক অবসাদে ভুগছিল।” তিনি জানান, আমন ধানের উপযুক্ত দাম পেলে তা বিক্রি করে ওই ঋণের টাকা শোধ করার কথা ভেবেছিল। কিন্তু ধান বিক্রি হয়নি। আবার আলু বিক্রি করেও তার সঠিক দাম পায়নি। এ দিকে মহাজনরা ঋণের টাকা শোধ করার জন্য বাড়িতে এসে বারবার তাগাদা দিতে থাকে। সব মিলিয়ে ঋণের দেনা শোধ করতে না পারার জন্যই ভাই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।”
ওই এলাকায় এখন বিঘা প্রতি জমির মূল্য প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। বাড়ির লোক ঋণের বোঝাকেই তাঁর আত্মঘাতী হওয়ার কারণ হিসেবে তুলে ধরলেও ৬ বিঘা জমির মালিক হিরন্ময়বাবু তো তাঁর ধানি জমির কিছুটা বিক্রি করলেই ঋণের টাকা শোধ করতে পারতেন?
দিবাকরবাবুর কথায়, “গ্রামের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষির পক্ষে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বিঘা দরে জমি কেনার আর্থিক ক্ষমতা কারও নেই।”
স্থানীয় কৃষি সমবায় সমিতির সম্পাদক নিখিল ঘোষও বলেন, “ঋণগ্রস্ত হয়েই ওই চাষি আত্মহত্যা করেছে বলে তাঁর বাড়ির লোক দাবি করলেও সমবায় সমিতির কাছে ওই ঋণের টাকা মকুব করার কোনও আবেদন কিন্তু হিরন্ময়বাবু করেননি। |