লয়েডদের দেওয়া টোটকাই আইপিএলে রুডির বাজি
স্যর গ্যারি সোবার্স নাকি রাতে ঘুমনো বড় একটা পছন্দ করতেন না। ভোর চারটে পর্যন্ত পার্টি করতেন। তবু পরের দিন নেটে ঢুকে পড়তেন ঠিক ন’টায়। আর তাঁর প্রশ্নে একটাই উত্তর বাঁধা ছিল, “আমি এ ভাবেই ব্যাটারি রিচার্জ করি!”
ব্রায়ান লারা সময়ে-অসময়ে ছুটতেন তাঁর কাছে। ফর্ম পড়লে অবধারিত ঠিকানা মানে তিনি। ক্রিকেট নয়, গল্ফের গল্প শুনতে!
গ্রেগ চ্যাপেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে পর পর সাতটা শূন্য করার পর ঠিক করে ফেলেছিলেন, খেলাই ছেড়ে দেবেন! ছাড়েননি, ছ’ফুটের এক ভদ্রলোকের ছোট্ট পরামর্শে। মানসিক যন্ত্রণায় ক্লিষ্ট চ্যাপেলকে যিনি ডেকে বলেছিলেন, “তুমি আসলে বল ছাড়া বাকি সব কিছু দেখছ। বলটা দেখো, ফর্মও ফেরত পাবে।”
কথা বলতে গেলে মাথাটা অল্প অল্প দোলে। বয়স বাহাত্তর। কিন্তু তাতে কী? মনের দিক থেকে ইনি এখনও তরুণ তুর্কি। লয়েড থেকে লারা, চ্যাপেল থেকে সহবাগ, মহাতারকাদের সঙ্গে বিভিন্ন সেশনের কোনও স্মৃতিতে আজও ধুলো পড়েনি। গড়গড় করে বলে দেবেন মাঠ আর মাঠের বাইরে লয়েডের দলবল কী করে বেড়াতেন। বলে দেবেন, মানুষ ধোনি কেন তাঁর অত্যন্ত প্রিয়।
ইনিরুডি ওয়েবস্টার। পেশায় ক্রীড়া মনোবিদ এবং নিজগুণে বিশ্ববিখ্যাত। লয়েডের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমের সঙ্গে ছিলেন। দেখেছেন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ। ছিলেন ভারতীয় দলের সঙ্গেও। আপাতত এই প্রথম তিনি আইপিএলের দুনিয়ায়। নাইট রাইডার্সের সংসারে।
যাঁর মস্তিষ্কের দিকে তাকিয়ে নাইটরা। টিম হোটেলে
রুডি ওয়েবস্টার। সোমবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
“লোকে বলে, পরপর দু’বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের দৌরাত্ম্য শুরু। তা কিন্তু নয়। বরং ওরা ‘গ্রেট’-এর পর্যায়ে পৌঁছেছিল তার পর। মনে আছে, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজ হারছে ১-৫! হারার পর আমি আর ক্লাইভ একটা পাবে গিয়েছি। ওখানেই হঠাৎ ক্লাইভ বলল, আমার এই টিম আগামী দশ বছর বিশ্ব ক্রিকেট শাসন করবে। করেও তো দেখাল,” সোমবার শহরের পাঁচতারা হোটেলে সাক্ষাৎকার দিতে বসে আনন্দবাজারকে বলে ফেলেন ওয়েবস্টার। একটু থেমে ফের স্মৃতিচারণ, “ক্লাইভ বড় স্বপ্ন দেখতে ভালবাসত। মাঠের বাইরে ওরা যতই দৌরাত্ম্য করুক না কেন, মাঠে নামলে অসম্ভব সিরিয়াস। আমি শুধু একটা কথা ওদের কানের কাছে বলে যেতাম। তোমাদের শত্রু মাঠের প্রতিপক্ষ নয়, শত্রু শুধু তোমাদের মস্তিষ্ক। আলসেমি এলেই একমাত্র হারতে পারো তোমরা।”
কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট এক জিনিস, আইপিএল আর এক। সেখানে লয়েডদের দেওয়া টোটকা কতটা কাজ করবে? “সেটাই তো চ্যালেঞ্জ। একটা আইপিএল টিমে বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রিকেটাররা আসে। তাদের সংস্কৃতি আলাদা হয়। আমার কাজ হবে নাইটদের এই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য আনা। নাইটদের মধ্যে বিশ্বাসটা গুঁজে দিতে হবে যে, ওদের শত্রু একমাত্র ওরাই হতে পারে। নাইটদের বোঝাব, নিজেদের গর্বটাকে যেন কোনও ভাবে না হারায় ওরা। দরকার আত্মবিশ্বাস,” বলছিলেন ওয়েবস্টার। কীরকম সেটা? এ বার রুডির ব্যাখ্যা, “এখনকার ছেলেরা বড় বেশি পর নির্ভরশীল। কোচ, সাপোর্ট স্টাফ, ফিজিও এদের উপর নির্ভর করে থাকছে। নিজের উপর বিশ্বাস থাকলে এত নির্ভরতার দরকার পড়ে না।”
আইপিএলের মধ্যেই তাঁর নতুন বই ‘থিঙ্ক লাইক আ চ্যাম্পিয়ন’ বেরিয়ে যাচ্ছে। যেখানে অন্যান্য মহাতারকাদের সঙ্গে আছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সাক্ষাৎকারও। কিন্তু ধোনির টিমে বিভাজনের খবর নেই রুডির কাছে। শুনে বরং জিজ্ঞেস করলেন, “তাই নাকি? আমি জানি না তো। ধোনিকে তো আমার দেখে মনে হয়েছিল খুব পরিষ্কার মাথার ছেলে। ২০০৬ সালে প্রথম দেখার পরেই আমি ভারতীয় দলের কোচকে বলেছিলাম, এই ছেলেটার মধ্যে ক্যাপ্টেন হওয়ার সব মশলাই আছে।” একে বিভাজন, তায় বিদেশে টানা হার। তিনি হলে কী ভাবে মেরামত করতেন ধোনির সংসার? “চড়াই-উতরাই তো থাকেই জীবনে। টিম হারলে, বিভাজন দেখা দিলে উচিত ক্রিকেটের বাইরে বাকি জিনিস নিয়ে ভাবা। আমি হলে সেটাই বলতাম। খারাপ সময় আসে, আবার কেটেও যায়।”
বলতে-বলতে তুলনায় টেনে আনেন কেকেআরকে। বলে ফেলেন, “এই যে নাইটরা ফাইনালে যেতে পারেনি এখনও। তা বলে কী পারবে না? নাইটদের অতীতই তো বলে দিচ্ছে যে ওদের ক্ষমতা আছে। নাইটদের সব আছে। শুধু মনের উপর মাঝে মধ্যে জমে যাওয়া আবর্জনাগুলো মুছে ফেলা দরকার। টি-টোয়েন্টির চাপ নিতে শেখা দরকার। গত বার যেমন মুম্বই ম্যাচে বালাজি শেষ ওভারে একুশ রান দিল। অনেকে বলেন নাইটদের স্বপ্ন আসলে ওখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমি থাকলে দু’টো ছয় খাওয়ার পর বালাজিকে বলতাম, ক্যাপ্টেনের সঙ্গে গল্প করো। ব্যাটসম্যানের ছন্দ ভেঙে দাও। যুদ্ধ তো এ ভাবেই জিততে হয়!”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.