চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং দক্ষিণবঙ্গে যে বৌদ্ধ মহাবিহারগুলির কথা বলেছিলেন, তারই কোনও একটির খোঁজ মিলেছে বলে অনুমান করছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগ। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের কাছে মোগলমারিতে আবিষ্কৃত এই বৌদ্ধ প্রত্নস্থলটিতে খননকার্যের দায়িত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অশোক দত্ত। ষষ্ঠ বার উৎখননের পরে তিনি বলেন, “হিউয়েন সাং তাম্রলিপ্ত বন্দরের কাছে যে ১০টি মহাবিহারের কথা বলেছেন, তার সঙ্গে এই বিহারটির মিল আছে। এই এলাকায় এবং এত প্রাচীন আর কোনও বিহার পাওয়া যায়নি।” তবে এখনও ‘বিহার’টির কোনও নামমুদ্রা পাওয়া যায়নি। |
এত বড় ‘বিহার’ অবশ্য বাংলায় কমই পাওয়া গিয়েছে। মূল বৌদ্ধ মন্দিরটির প্রস্থ ও দৈর্ঘ্য ৬০ মিটার করে। সমসাময়িক নালন্দায় যদিও মূল মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৭০ মিটার করে। মোগলমারির প্রত্নস্থলটির আর একটি বৈশিষ্ট্য হল, তার দেওয়ালের অলঙ্করণের বৈচিত্র। চারপাশের প্রাচীরের গায়েও রয়েছে স্টাকো বা চুন-বালির মণ্ড দিয়ে তৈরি অলঙ্করণ। যা খুব কম জায়গাতেই পাওয়া গিয়েছে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের মহানির্দেশক গৌতম সেনগুপ্ত বলেন, “ওই স্টাকোগুলি আমাদের দিলে আমরা তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারি।” |
মূর্তিতত্ত্ববিদ অনসূয়া দাস এই দিন এখানে এসে ‘বিহার’টি দেখে বলেন, “মূর্তির গঠন থেকে বোঝা যাচ্ছে তা তৈরি হয়েছে পঞ্চম থেকে সপ্তম শতাব্দীর মধ্যে। পাল যুগের শিল্পরীতির কোনও প্রভাব নেই। তাই তার ঠিক আগেই এই বিহার তৈরি হয়েছিল বলে অনুমান করা হচ্ছে।” তাঁর কথায়, “এমনিতেই দেখতে সুন্দর করে গড়ে তোলা দেওয়ালের উপরে আবার অলঙ্করণের কাজ করা হয়েছিল। ৪৫ রকমের ইট পাওয়া গিয়েছে এখানে। কোথাও ফুলের নকশা রয়েছে, কোথাও জ্যামিতির আকার।” অশোকবাবু বলেন, “যে কারণে অনুমান করা হচ্ছে, এই বিহার ঘিরে বেশ একটি সমৃদ্ধ জনপদই ছিল।
রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব দফতরের উপ অধিকর্তা অমল রায় বলেন, “হিউয়েন সাং এই এলাকায় যে বিহারগুলির কথা বলেছেন, এই বিহারটি তার অন্যতম হতে পারে। এই ব্যাপারে আমরাও বিশ্ববিদ্যালয়কে সাহায্য করতে পারি।”
|