প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বিরুদ্ধে অভিযান। তবে ভিন্ন মাত্রায়। বাজারে আকস্মিক হানা নয়, সচেতনতা প্রসারে সেমিনার নয়। প্ল্যাকার্ড নিয়ে পদযাত্রাও নয়। দেওয়ালে দেওয়ালে শুধু ছবি এঁকে সাধারণ জনমানসে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার অন্য রকম প্রয়াস। সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা। জলপাইগুড়ি শহরের অন্যতম ব্যস্ত পোস্টঅফিস মোড়। পুরসভার স্যানিটেশন দফতরের দেওয়ালে তুলি দিয়ে রঙ করছেন মহকুমা শাসক। পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক। মহকুমা শাসকের রঙ হয়ে গেলে তিনি তুলি ধরবেন। আশেপাশে ভিড় করে রয়েছেন জলপাইগুড়ি শহরের চিত্র শিল্পীরা। তাঁদের হাতেও রঙ তুলি। এদিন সকালে এমন দৃশ্য দেখে পথ চলতিরা বাসিন্দারাও খানিকক্ষণ দাঁড়িয়েও গেলেন। ছবি আঁকা শেষ হলে দেখা গেল, দেওয়ালে আঁকা সবুজ পৃথিবীকে ক্রমশ কালো রঙের প্লাস্টিক গ্রাস করছে। নদীতে জল শুকিয়ে গিয়েছে, নদীর বুকে থরে থরে জমা প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের জটে আটকে গিয়েছে একটি নৌকা। তিনটে দেওয়ালে তিন রকম ছবি। প্রতিটি ছবির রেখাচিত্র একেঁ দিয়েছেন নর্থইস্ট কনটেমপোরারির আর্টিস্ট গ্রুপের শিল্পীরা। সেই রেখাচিত্রেই রঙ ভরেছেন অনান্যরা। গ্রুপের প্রধান চিত্রশিল্পী নিহার মজুমদার বুঝিয়ে বললেন, “একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে বড় একটি প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে বন্দি হয়ে গিয়েছে দুই কিশোর-কিশোরী। প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে বিপন্ন তাঁদের ভবিষ্যৎ, এটাই বোঝানো হচ্ছে। অন্য ছবিতে একটি গাছে পাতার বদলে ঝুলছে অসংখ্য ক্যারিব্যাগ। পাশেই এক ব্যাক্তির মুখ ক্রমশ ক্যারিব্যাগে ঢুকে পড়ছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর। এই ছবিটির বার্তা সহজেই সাধারণ মানুষ ধরতে পারবেন।” শহরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সুভাষ মঞ্চের উদ্যোগেই এই আয়োজন। |
সংস্থার পক্ষ থেকে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার রুখতে শহর জুড়ে একমাস ধরে দেওয়াল আঁকা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। শহরবাসীর কাছে আবেদন করা হয়েছে, বাড়ির দেওয়ালে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যাবহারে ক্ষতির দিকটি তুলে ধরার। সেরা ছবিগুলিকে পুরষ্কৃত করা হবে বলে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে। সুভাষ মঞ্চের আহ্বায়ক প্রবাল রাহা বলেন, “প্রতিযোগিতা বড় কথা নয়। একমাস ধরে ছবি আঁকার পরে শহরের প্রতিটি অলিগলিতেও অন্তত একটি করে দেওয়ালে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহারের ক্ষতি নিয়ে ছবি থাকবে। তা দেখে মানুষতো কিছুটা সচেতন হবেন। পরিবেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে পারব।” এদিন প্রতিয়োগিতার উদ্বোধন পোস্ট অফিস মোড়ে প্রতীকি ছবি আঁকার সূচনা হয়েছে। সদর মহকুমা শাসক সাগর চক্রবর্তী বলেন, “উদ্যোগকে নৈতিকভাবে সমর্থন জানাতে আমি নিজেও তুলি ধরেছি। সম্ভবত ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় শেষ বার ছবি এঁকেছিলাম। খুব ভাল লাগল।” ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সাধন বসু বলেন, “বাড়ির দেওয়ালেও প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহারের বিরুদ্ধে বার্তা দিয়ে ছবি আঁকাব।” ওয়েলফেয়ারের সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী এবং সার্কিট বেঞ্চ দাবি আদায় কমিটির সম্পাদক আইনজীবী কমলকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় দুজনেই বলেন, “এই উদ্যোগে সামিল হতেই হবে। এই মনোভাব থেকেই এসেছি।” প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের ব্যবহার শহরে নিষিদ্ধ করতে বছরভর প্রচার অভিযান চালাচ্ছে জলপাইগুড়ি পুরসভা। মাঝেমধ্যে বাজারে পুরকর্মীরা অভিযানও চালিয়েছেন। এদিন পুরসভার একটি ভবনের দেওয়ালেই ছবি আঁকা হয়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার রুখতে পুরসভা যেমন অভিযান চালায় তেমনিই সচেতনতা প্রসারের কাজও করে চলেছে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তথা সাধারণ মানুষকেও সচেতনতা প্রসারের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান পুরসভা জানিয়েছে। ছবি একে সচেতনা প্রসারের এ দিন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।” |