|
|
|
|
চুক্তি সিইএসসি-র সঙ্গে |
বিদ্যুতের উন্নতিতে এ বার মার্কিন বিনিয়োগ |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
জমি ও নানাবিধ সমস্যায় যখন পশ্চিমবঙ্গে একাধিক শিল্পে বিনিয়োগের পরিকল্পনা আটকে রয়েছে, তখন রাজ্যের বিদ্যুৎ শিল্পের জন্য সুখবর। কলকাতা ও হাওড়ায় বিদ্যুৎ পরিষেবা উন্নত করতে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল আমেরিকা।
কোনও কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে বেশি ক্ষণ যাতে অন্ধকারে না থাকতে হয়, সে জন্য মহাকরণে ইতিমধ্যেই একটি নতুন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এ বার গোটা কলকাতা ও হাওড়ায় কী ভাবে সেই ব্যবস্থা চালু করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হবে। সে জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’ (ইউএসটিডিএ) প্রায় ৬ লক্ষ ১৮ হাজার মার্কিন ডলার আর্থিক সাহায্য দেবে সিইএসসিকে। ভারতীয় অর্থে যার পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি টাকা। মার্কিন বাণিজ্য সচিব জন ব্রাইসনের নেতৃত্বে এক বড় মাপের বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দল এখন ভারত সফর করছে। আজ ব্রাইসনের উপস্থিতিতেই দিল্লিতে দু’পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি হয়। ২০১০ সালের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভারত সফরের পর থেকে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে যে আদানপ্রদান শুরু হয়েছে, তারই সুফল পেতে চলেছে কলকাতা ও হাওড়া। |
|
দিল্লিতে ফিকির অনুষ্ঠান। রমাকান্ত কুশওয়াহা |
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পরে বিদ্যুৎ দফতরে (সিইএসসি বা রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ) খবর দেওয়া, সেখান থেকে ইঞ্জিনিয়ার পাঠানো, বিভ্রাটের কারণ খুঁজে বের করা, তার পরে ফের বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করা এই গোটা প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় চলে যায়। তত ক্ষণ অন্ধকারে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু এখন সিইএসসি ‘স্মার্ট গ্রিড’ নামে এমন এক স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করেছে, যাতে সিইএসসি-র কন্ট্রোল রুমে বসেই কোথায় গণ্ডগোল, তা জানা যাবে। তা সে ফিউজ উড়ে যাওয়াই হোক বা মাটির নীচের হাই টেনশন লাইনের ‘ফল্ট’। ইঞ্জিনিয়াররা কন্ট্রোল রুমে বসেই একটি সুইচ টিপে বিকল্প লাইনের মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করে দিতে পারবেন। ফলে কার্যত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় থাকবে। মাস খানেক আগে মহাকরণে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এখন কলকাতা ও হাওড়ার গোটা সিইএসসি এলাকায় এই ব্যবস্থা চালু করা কতটা বাস্তবসম্মত, এর ফলে বিদ্যুৎ অপচয় কতটা বন্ধ হবে, তা খতিয়ে দেখতে সমীক্ষা হবে।
হঠাৎ কলকাতাকেই কেন এই আর্থিক সাহায্য? ব্রাইসনের কথায়, “স্মার্ট গ্রিডের মতো নতুন ক্ষেত্রগুলিতেই আমরা এখন পারস্পরিক আদানপ্রদান বাড়ানোর চেষ্টা করব।” সিইএসসি-র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (ডিস্ট্রিবিউশন সার্ভিসেস) দিলীপ সেন বলেন, “স্মার্ট গ্রিড হল এমন এক প্রযুক্তি, যা বিদ্যুৎ, তথ্য-প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ত্রিবেণী সঙ্গম। শুধু মহাকরণ কেন, এসএসকেএম হাসপাতাল বা এই ধরনের জরুরি পরিষেবা ক্ষেত্রগুলিতেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চালু রাখতে এই প্রযুক্তির প্রয়োজন। কিন্তু বাড়তি খরচ, গ্রাহকদের উপর বোঝার মতো দিকগুলিও খতিয়ে দেখা জরুরি।” সিইএসসি-কর্তাদের দাবি, আগে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে তা সারিয়ে ফের পরিষেবা চালু করতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লেগে যেত। এখন সেই সময়টা এক থেকে দেড় ঘণ্টায় নেমে এসেছে। কিন্তু ‘স্মার্ট গ্রিড’ ব্যবস্থায় ওই সময়টাই এক থেকে দেড় মিনিটে কমিয়ে আনা যায়। শুধু গ্রাহকদের সন্তুষ্টি নয়, এর ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ও বাড়বে।
গত বছর একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মার্কিন সফরে গিয়েছিলেন সিইএসসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডিস্ট্রিবিউশন সার্ভিসেস) অনিরুদ্ধ বসু। তখন থেকেই এ নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়। জন ব্রাইসনের এই সফরের মূল লক্ষ্য হল রেল, সড়ক, বিমান, বিদ্যুৎ-এর মতো পরিকাঠামো ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমঝোতা বাড়ানো। তাই এই সফরেই সিইএসসি-র সঙ্গে চুক্তি সইয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। মার্কিন বাণিজ্য সচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্রাইসনের এটাই প্রথম বিদেশ সফর। গত অক্টোবরেই বাণিজ্য দফতরের দায়িত্বে ব্রাইসনকে নিয়ে এসেছেন ওবামা। মার্কিন কূটনীতিকদের বক্তব্য, এ থেকেই স্পষ্ট যে, ভারত-মার্কিন আর্থিক বোঝাপড়ার বিষয়টি ওবামার কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে। সেই বোঝাপড়ার অংশীদার হয়ে রইল কলকাতা-হাওড়াও। |
|
|
|
|
|