হাসপাতালের ভিতরেই অবাধে চোলাই-মদ, গাঁজার ঠেক। বহিরাগতেরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা চত্বরে। আউটডোর, এমনকী কখনও কখনও ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকেও তাণ্ডব চালাচ্ছে তারা। আর এ সবেরই জেরে রোগীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে। পরিস্থিতি এমনই যে, রোগীর পরিজনেরা তো বটেই, নার্সদের একাংশও এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ভবনে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই।
সুপার রাঘবেশ মজুমদার জানিয়েছেন, হাসপাতালের মূল ফটক রাত ১০টার আগে বন্ধ হয় না। আর ওই গেটে কোনও নিরাপত্তারক্ষী থাকেন না, তাই যে কেউ ভিতরে ঢুকতে পারে।
তা হলে কি ধরেই নেওয়া হচ্ছে হাসপাতালে যখন-তখন যা খুশি ঘটে যেতে পারে? পুলিশকে জানানো হয়েছে, এটুকু বলেই সুপার তাঁর দায়িত্ব সেরেছেন। স্থানীয় থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে এমন ঘটে চললেও তাঁদের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে দিন কয়েক আগে। সেই অনুযায়ী টহলদারির কথা ভাবা হচ্ছে।
মাস কয়েক আগে পাভলভের এক রোগিণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল হাসপাতালেরই এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর বিরুদ্ধে। নেশা করে ওই কর্মী ওয়ার্ডে ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ। তদন্তের পরে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি। নার্সদের একাংশের অভিযোগ, সন্ধ্যার পরেই হাসপাতাল চত্বরের ছবিটা বদলে যায়। ক্যাম্পাসের ভিতরেই নেশা করে তাঁদের উদ্দেশ্যে টিপ্পনি কাটা হয়। মহিলা ওয়ার্ডের ভিতরে ঢুকেও বহিরাগতেরা একাধিক বার হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। সন্ধ্যা ও রাতের শিফ্টে দুই ওয়ার্ডে যে মহিলা কর্মীরা থাকেন, তাঁরাও নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।
হাসপাতাল চত্বরে সন্ধ্যার পরে গেলেই নজরে পড়বে পুকুরের ধারে পাঁচিলের গা ঘেঁষে গজিয়ে উঠেছে গাঁজা ও চোলাইয়ের ঠেক। হাসপাতাল-কর্মীদের একাংশ তো বটেই, এমনকী বাইরে থেকে মোটরবাইকে চড়ে এসে সেখানে নেশা করছে এক দল যুবক। সঙ্গে চলছে অশ্লীল গালিগালাজও। দিন কয়েক আগে নেশাগ্রস্ত একদল লোক মহিলা ওয়ার্ডের ভিতরেও ঢুকে পড়েছিল বলে অভিযোগ। হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, “ওয়ার্ডে বহু অল্পবয়সী রোগিণী রয়েছেন। ওঁদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা রীতিমতো শঙ্কিত বোধ করছি। এর আগে যখন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর বিরুদ্ধে রোগিণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল, তখন স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো হাসাহাসি শুরু করেছিলেন, যেন মানসিক রোগীদের সম্ভ্রম বলে কিছু থাকতে পারে না। নিরাপত্তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের গয়ংগচ্ছ মনোভাবও আসলে সেই মানসিকতা থেকেই।” |