রাজ্যের অন্তত সাড়ে তিনশো হাসপাতাল, নার্সিংহোম, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবোরেটরি এই মুহূর্তে চলছে বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই। সরকারি হিসেবই এ কথা বলছে।
বৈধ লাইসেন্স ও দমকলের ছাড়পত্র ছাড়া রাজ্যে ওই ধরনের কোনও প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা চালাতে দেওয়া হবে না বলে আমরি-কাণ্ডের পরে রাজ্য জানিয়েছিল। সেই ঘোষণার পরে ৩ মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু ওই সাড়ে তিনশো হাসপাতাল, নার্সিংহোম, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবোরেটরির ক্ষেত্রে রাজ্যের নির্দেশিকা কাগজেকলমেই থেকে গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম, ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের কাজ বন্ধ। ওই সাড়ে তিনশো সংস্থা তাদের লাইসেন্স নবীকরণের জন্য আবেদন করেছিল। স্বাস্থ্য ভবন তা মঞ্জুর করেনি। আবার পুরনো লাইসেন্স বাতিলও করা হয়নি। স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম হল, লাইসেন্স নবীকরণ না-হলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল, নার্সিংহোম কিংবা প্যাথোলজিক্যাল ক্লিনিক বন্ধ রাখতে হবে। কোনও মানুষকে সেখানে পরিষেবা দেওয়া যাবে না। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর ওই সব সংস্থাকে বন্ধের নোটিসও দেয়নি। ফলে সেগুলি আগের মতোই ব্যবসা করে যাচ্ছে। আবেদনকারীদের শতকরা ৯৯ ভাগেরই দমকলের ছাড়পত্র নেই বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
লাইসেন্স নবীকরণ না হওয়া ওই সব হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের মালিকরা কী বলছেন? তাঁদের দাবি, স্বাস্থ্য দফতর তিন মাসের বেশি সময় ধরে লাইসেন্স নবীকরণের কাজ আটকে রেখেছে। অথচ আটকে রাখার কারণ তাঁদের অন্তত জানায়নি। পুরনো লাইসেন্স বাতিলও করেনি। এমতাবস্থায় তাঁরা আগের মতোই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। লাইসেন্স নবীকরণ আটকে রেখে স্বাস্থ্য দফতর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে কেন? এক স্বাস্থ্য-কর্তার মন্তব্য, “কোন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কী অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা থাকা উচিত, দমকলের ছাড়পত্রের জন্য কোথায় আবেদন জানাতে হবে, তার কিছুই ঠিক করা যায়নি। গত তিন মাসের মধ্যে দমকলের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করা যায়নি। ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট আইনেও নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই।” সম্প্রতি এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যসচিব দমকল কর্তৃপক্ষকে চিঠিও লিখেছিলেন। কিন্তু উত্তর আসেনি। দমকল কর্তারা আবার বলছেন, “এতে আলাদা করে বলার কী আছে? দমকলের ছাড়পত্র না থাকলে পরিষেবা বন্ধ করাটাই তো নিয়ম। সেটা স্বাস্থ্য দফতরকেই করতে হবে। কিন্তু বেড়ালের গলায় ঘণ্টা কে বাঁধবে, সেটা স্বাস্থ্যকর্তারাই স্থির করতে পারছেন না।” স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করা যাচ্ছে না মূলত দমকলের ছাড়পত্র পাওয়া যাচ্ছে না বলে। এই সমস্যা নিয়ে আমরা ওয়াকিবহাল। ওই সংস্থাগুলিকে পরিষেবা চালাতে দেওয়া হবে কি না, অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ঠিক করার জন্য কত সময় দেওয়া হবে, তত দিন কী কী সাবধানতা নিতে হবে এই সব খুব তাড়াতাড়ি আমরা দমকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে ঠিক করব।” |