বিধানসভা বয়কটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। রবিবার কলকাতা থেকে দার্জিলিং ফেরার পথে এ কথা জানান মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। কিন্তু তরাই ও ডুয়ার্সের একাংশ যদি ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) এলাকায় যায়, আগেভাগে সেই ‘আশঙ্কা’য় ১০-১১ এপ্রিল দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলায় বন্ধের হুমকি দিয়েছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ-সহ ১১টি সংগঠনের ‘তরাই-ডুয়ার্স জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’। স্রেফ ‘যদি’র উপরে ভিত্তি করে ডাকা এ ধরনের আন্দোলন কতটা যুক্তিযুক্ত সে প্রশ্ন উঠছে আমজনতার মধ্যে। রাজনৈতিক দল বা সংগঠনগুলির ‘আত্মঘাতী’ আন্দোলনে নাজেহাল পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সের জনতার উদ্বেগ, আসন্ন পর্যটন মরসুমেও ওই বন্ধের ‘বিরূপ’ প্রভাব পড়তে পারে।
বাগডোগরায় এ দিন বিমল গুরুঙ্গ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আমাদের দাবি মেনে শিলিগুড়ি, তরাই ও ডুয়ার্সের অংশ জিটিএ-তে যুক্ত হবে বলে আমরা আশাবাদী। এখন পাহাড়ের উন্নয়নে কাজ শুরু করতে চাই। সে দিকে তাকিয়েই বিধানসভা বয়কটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমাদের চার বিধায়কই এখন থেকে বিধানসভায় যোগ দেবেন।” |
নাগরাকাটায় এ দিনই ‘তরাই-ডুয়ার্স জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র এক বৈঠকের পরে বন্ধের ডাক দেন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক তথা আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা তেজকুমার টোপ্পো এবং তরাই-ডুয়ার্স নাগরিক মঞ্চের জীবন মিত্র। জিটিএ-তে তরাই ও ডুয়ার্সের কোনও মৌজা অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না দাবিতে এ দিন প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি তথা উত্তর মালদহের সাংসদ মৌসম বেনজির নূরের নেতৃত্বে ডুয়ার্সের ক্রান্তিতে কংগ্রেস কর্মীরাও মিছিল করেন।
১৮ মার্চ মংপংয়ে বিমল গুরুঙ্গ ‘জিটিএ’ নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ধোঁকা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। ওই দিন থেকেই মোর্চার চার বিধায়ক (পাহাড়ের ৩ এবং কালচিনির মোর্চা সমর্থিত নির্দল ১) বিধানসভা বয়কট করবেন বলে জানানো হয়। তরাই ও ডুয়ার্সের মৌজা ‘জিটিএ’-র অন্তর্ভুক্ত না হলে মোর্চা নির্বাচনে যাবে না বলেও ঘোষণা করা হয়। এ দিন অবশ্য মোর্চা সভাপতি বলেন, “জিটিএ-তে আইন মোতাবেক নির্বাচন করাতেই হবে। সেই লক্ষ্যেই দার্জিলিং পার্বত্য পরিষদের এলাকার মধ্যেই জুলাই মাসে নির্বাচন হবে।” গুরুঙ্গের দাবি, “উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরে শিলিগুড়ি, তরাই ও ডুয়ার্সের মৌজাগুলির জিটিএ-তে অন্তর্ভুক্তি হবে। সেখান থেকে মনোনীত প্রতিনিধিরা জিটিএ-তে যোগ দেবেন। রাজ্য সরকার ও মোর্চাদু’পক্ষ মিলে মনোনীত প্রার্থী বাছাই করবে।” ঘটনা হল, আদৌ তরাই-ডুয়ার্সের কোনও এলাকাকে জিটিএ-তে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হবে কি না, তা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির উপরেই নির্ভরশীল। তবে যেহেতু কমিটিতে মোর্চার চার প্রতিনিধি রয়েছেন, সে জন্য রিপোর্টে মোর্চার দাবি একেবারে উপেক্ষিত হবে বলে গুরুঙ্গ মনে করেন না।
আজ, সোমবার দার্জিলিংয়ে চার বিধায়ককে নিয়ে আলোচনায় বসবেন মোর্চা সভাপতি। মোর্চার কালিম্পংয়ের বিধায়ক হরকা বাহাদুর ছেত্রী বলেন, “সোমবার বৈঠক রয়েছে। আলোচনার পরেই প্রয়োজনে আমরা বিধানসভার উদ্দেশে রওনা হব।” জিটিএ-তে তরাই ও ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে এ দিন সুকনার কাছে মেথিবাড়ি থেকে মিছিল করেন মোর্চা-সমর্থকেরা। মিছিলটি পঞ্চনইতে আটকে দেয় পুলিশ। |
পক্ষান্তরে, ‘তরাই-ডুয়ার্স জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র যুগ্ম আহ্বায়ক তেজকুমার টোপ্পো এবং জীবন মিত্র এ দিন বলেন, “শনিবার মহাকরণে ডাকা মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে মোর্চা যে ভাবে খুব সহজে জিটিএ-তে ভোট করার বিষয়টি মেনে নিল, তাতে চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছি। কোনও অবস্থাতেই যে ডুয়ার্স-তরাই জিটিএ-তে যাবে না, তা বোঝাতেই এই বন্ধ ডাকা হয়েছে।” এর আগে ৬-৭ এপ্রিল এই বন্ধ ডাকা হলেও গুড ফ্রাইডের জন্য তা স্থগিত রাখা হয়। কমিটি জানিয়েছে, ৭ এপ্রিল মালবাজার ও ৯ এপ্রিল শিলিগুড়িতে মিছিল হবে। এপ্রিল মাসেই জলপাইগুড়ির জেলাশাসককে ঘেরাও করা হবে।
প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি মৌসমের বক্তব্য, “জিটিএ নিয়ে আমাদেরও সরকারকে অনেক কথা বলার আছে। তাই জিটিএ সংক্রান্ত সরকারি বৈঠকে কংগ্রেসকে সামিল করতে হবে। তরাই-ডুয়ার্সকে পাহাড়ের সঙ্গে যুক্ত করা ঠিক হবে না। জুন মাসে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি যে রিপোর্ট দেবে তা দেখে যুব কংগ্রেস পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবে।” যদিও জলপাইগুড়ি লোকসভা যুব কংগ্রেসের সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কোনও অবস্থাতেই তরাই-ডুয়ার্সকে জিটিএ-র অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। এই দাবিতে দফায় দফায় আন্দোলন হবে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়মন্ত্রী গৌতম দেবের বক্তব্য, “জনজীবন বিপর্যস্ত করে আশা করি কেউ আন্দোলনের পথে যাবেন না।” |