১৯৮৫ সালে তৈরি হয়েছিল বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশন। কিন্তু ব্যান্ডেল-কাটোয়া রেলপথের নবদ্বীপ ধাম রেল স্টেশনের কয়েক কিলোমিটার পশ্চিমের এই স্টেশনটির যাত্রীদের ভাগ্যে সুষ্ঠু পরিষেবার শিকে ছেঁড়েনি এখনও। তার পর কেটেছে প্রায় ৩০ বছর। জোটেনি যাত্রী স্বাচ্ছ্যন্দের সামান্য সুবিধাটুকুও। অথচ দৈনিক টিকিট বিক্রির পরিসংখ্যানে নবদ্বীপ ধাম স্টেশনকে কার্যত টেক্কা দিয়ে চলেছে ঠিকাদার পরিচালিত বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনটি।
নবদ্বীপ শহরের পশ্চিমের বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনটি শুধু নামেই স্টেশন। রেল লাইনের ধারে কয়েক মিটারের একটি প্ল্যাটফর্ম ছাড়া যাত্রী পরিষেবার আর কোনও বন্দোবস্ত নেই। অথচ নবদ্বীপ শহরের কিছু গুরুত্বর্পূণ জায়গা যেমন- পোড়ামাতলা, হাসপাতাল, খেয়াঘাট, এই হল্ট স্টেশনের কাছাকাছি হওয়ায় বেশির ভাগ যাত্রীই নবদ্বীপ ধাম স্টেশনকে এড়িয়ে ব্যবহার করেন বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনটি। এ ছাড়াও পর্যটকদের কাছে নবদ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ মহাপ্রভু মন্দির, বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর জন্মভিটে, চৈতন্যদেবের জন্মস্থান আশ্রম-সহ বিভিন্ন মঠ মন্দিরে চটজলদি পৌছতেও বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনটিই সুবিধাজনক। ফলে নবদ্বীপ ধাম স্টেশনের তিন গুণ যাত্রী বর্তমানে এই হল্ট স্টেশন ব্যবহার করছেন। কিন্তু উদাসীন রেল কর্তৃপক্ষ। |
বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশন রেল যাত্রী কমিটির সম্পাদক গোপালচন্দ্র কুণ্ডু বলেন, “রেলের পরিসংখ্যান বলছে গড়ে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার মানুষ এই হল্ট স্টেশন ব্যবহার করেন। অথচ এই স্টেশন থেকে সব স্টেশনের টিকিট বা রিটার্ন টিকিট পাওয়া যায় না। যাত্রীদের জন্য কোনও ছাউনি নেই। হাজার হাজার নিত্য যাত্রী বা ভ্রমণার্থীকে রোদে, বৃষ্টিতে ভিজেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নেই কোনও পানীয় জলের ব্যবস্থা, এমন কী উপযুক্ত শৌচাগারও। যথেষ্ট আলোর ব্যবস্থাও নেই স্টেশনে। আমরা বারবার বলেও রেল কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙাতে পারছি না।” হাওড়া-কাটোয়া সার্বাবান প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শিবু মুখোপাধ্যায় বলেন, “রেলের হিসেব অনুযায়ী ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে ৯ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা, নভেম্বর মাসে ৯ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা, ডিসেম্বরে ১০ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা, ২০১২-র জানুয়ারিতে ৯ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৮ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে এই হল্ট স্টেশন থেকে। তারপরেও রেল কর্তৃপক্ষ কী ভাবে এটি ঠিকাদারের হাতে ফেলে রেখেছেন তা রহস্যজনক। কারণ রেলের আইনেই বলা আছে, এক জন হল্ট স্টেশনের ঠিকাদার মাসে সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন পেতে পারেন। সেখানে প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা কমিশন উপার্জন করার হিসেব থাকা সত্ত্বেও কেন বিষ্ণুপ্রিয়াকে পূর্ণাঙ্গ স্টেশনের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না সেটাই আমাদের প্রশ্ন।” সম্প্রতি বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনকে নিয়ে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বৃহত্তর আন্দোলন করার কথাও বলা হয়। পূর্ব রেলের ডিআরএম পার্থসারথী মণ্ডল বলেন, “দাবি তো সবাই করেন। তবে খতিয়ে দেখতে হবে তা কতটা ঠিক। আর উন্নয়নের জন্য অর্থের প্রয়োজন।” |