বহরমপুর শহরের যানজট রুখতে অবশেষে চুঁয়াপুর ও পঞ্চাননতলা রেলগেটের কাছে রাস্তা চওড়া করার কাজ শুরু হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ প্রশাসন ও বহরমপুর পুরসভা যৌথ উদ্যোগে শহরের যানজট কমানোর ব্যাপারে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহণের পরে তা কার্যকরও করে। এর ফলে শহরের মধ্যে যানজট কমেছে।
কিন্তু শহরের ঢোকার মূল প্রবেশপথ চুঁয়াপুর ও পঞ্চাননতলা রেলগেটের যানজটে পুরবাসিন্দাদের প্রতি দিনের যাতায়াত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল। কেননা, ওই দুই প্রান্তের রেলগেটের উপরে এখনও উড়ালপুল তৈরি হয়নি। ফলে বিশেষ করে ট্রেন যাতায়াতের সময়ে প্রতি দিন রেলগেটের যানজটে দীর্ঘ ক্ষণ আটকা পড়ে থেকে দুর্ভোগ পোহাতে হত তাঁদের। এত দিন এ ভাবেই কষ্ট করে যাতায়াতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। এদিকে ওই যানজটের ঢেউ আছড়ে পড়ার ফলে শহরের বিভিন্ন মোড়ের যানজট আরও বেড়ে যেত। এই অবস্থায় মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার ও পুরপ্রধান বৈঠক করে শহরের ওই দু-প্রান্তের রেলগেটকে ঘিরে যানজট কাটাতে উদ্যোগী হয়েছেন। পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “চুঁয়াপুর ও পঞ্চাননতলা রেলগেটের সংস্কার করে রাস্তা চওড়া করার ব্যাপারে পুলিশ সুপার পূর্ব রেলের শিয়ালদহ শাখার ডিআরএম-এর সঙ্গে কথা বলেন। সেই মতো রেল দফতর ওই দুটি রেলগেটের সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। পুরসভার তরফে ওই রাস্তা চওড়া করে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে চওড়া রাস্তা দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে যান চলাচল করবে। এতে শহরবাসীর ভোগান্তি কমবে।” |
রাস্তা পরিদর্শনে পুলিশ সুপার। নিজস্ব চিত্র। |
সিদ্ধান্ত হয়েছেচুঁয়াপুরের রেলগেটের দিকে রাস্তা দু-ধারে আড়াই ফুট করে পাঁচ ফুট বাড়ানো হবে। অন্য দিকে পঞ্চাননতলার দিকে বাড়বে চার ফুট করে আট ফুট। সেই মত চুঁয়াপুরের রেলগেট লাগোয়া রাস্তার উপরেই বিভিন্ন জায়গায় রেল লাইনের খুঁটি পোঁতা থাকায় যাতায়াতে বাধা পেতে হত এবং রাস্তা অসমান অবস্থায় ছিল। ওই খুঁটি তুলে ফেলে রাস্তা সমান করার কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, “শহরের যানজট আগেই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। এখন শহরের ওই দু-প্রান্তের রাস্তা চওড়া হয়ে গেলে রেলগেট ঘিরে যে যানজট তা কাটানো যাবে। বিষয়টি নিয়ে আমি পূর্ব রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। তাঁরা বিষয়টি মেনে নেন। ফলে রেলগেট লাগোয়া এলাকার দ্রুত সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।” এই মুহূর্তে অবশ্য পঞ্চাননতলা রেলগেটের দিকে ৯ মিটার রাস্তা চওড়া রয়েছে আর চুঁয়াপুরের দিকে রয়েছে ৭ মিটার। তা আরও বাড়বে। পুরপ্রধান বলেন, “বহরমপুর কলেজ থেকে বহরমপুর স্টেশন ছুঁয়ে চুঁয়াপুর রেলগেট হয়ে বিদ্যাসাগর মূর্তি পর্যন্ত ম্যাস্টিক রাস্তা তৈরি করা হবে। এর পাশাপাশি রাস্তা আলো দিয়ে সাজানো হবে। করা হবে বৃক্ষরোপণও।”
একই ভাবে বহরমপুর স্টেশন থেকে পুলিশ আবাসন হয়ে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তার অন্ধকার মুছে আলোকময় করে দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে পুরসভার। এদিকে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া খিড়কি সাঁকো থেকে বাবুলবোনা রোড হয়ে পঞ্চাননতলা পর্যন্ত রাস্তা চওড়া করার ফলে যাঁরা অস্থায়ী দোকানঘর করে ব্যবসা করছিলেন, তাঁদের পুনবার্সনেরও বন্দোবস্ত করেছে পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরপ্রধানের কথায়, “রাস্তা দখল করে যাঁরা দোকানঘর খুলে বসেছিলেন, তাঁদের ৭০-৮০ জনের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। রাস্তা চওড়া করতে গিয়ে সাময়িক ভাবে দোকানঘর ভেঙে দেওয়া হলেও ওই চত্বরেই দোতলা মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করে সেখানে তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে।”
সেই সঙ্গে ছোট ও হালকা গাড়ি চলাচলের সুবিধার জন্য বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ধোপঘাটি হয়ে বাবুলবোনা রোডে গিয়ে মিশেছে, সেই রাস্তাও সংস্কার করা হবে। |