কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান পরিবর্তনের কারণ বিশদে জানতে চেয়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিল উচ্চশিক্ষা সংসদ।
২০১০ সালের ১৮ জুন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পান অধ্যাপিকা দেবযানী নাথ। ওই পদে তাঁর মেয়াদ ছিল দু’ বছর। অথচ সেই মেয়াদ ফুরোনোর আগেই গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অন্য এক জন অধ্যাপক আশিসকুমার পাণিগ্রাহীকে প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রধান হিসাবে তাঁরও কার্যকালের মেয়াদ দু’ বছর। এই ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের একাংশ উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছে। পাশাপাশি অভিযোগ জমা পড়েছে উচ্চশিক্ষা সংসদেও। তারই জেরে সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিৎ কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে তিনটি বিষয় জানতে চেয়েছেন। এক, দেবযানীদেবীকে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধানের পদ থেকে সরানো ঠিক হয়েছে কিনা। দুই, ঠিক হয়ে থাকলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়মের বলে করা হয়েছে এবং তিন, ঠিক না হয়ে থাকলে কী ভাবে পুরনো অবস্থায় ফেরা সম্ভব।
দেবযানীদেবীর অভিযোগ, যে ভাবে তাঁকে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধানের পদ থেকে সরানো হয়েছে, তা ‘নিয়মবিরুদ্ধ’ এবং ‘অপমানজনক’। তাঁর বক্তব্য, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ল্যাবরেটরি থেকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চুরি হচ্ছিল। সেটা ঠেকাতে তিনি বিভাগে একটি রেজিস্টার চালু করেন। বিভাগে ঢোকা এবং বেরোনোর সময় সকলকে ওই রেজিস্টারে নাম, ঠিকানা, সময় ইত্যাদি তথ্য লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়। দেবযানীদেবীর আরও বক্তব্য, কয়েক জন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির বই ফেরত দেননি। তাঁদের সেগুলি ফেরত দিতে বলা হয়েছিল। দেবযানীদেবী বলেন, “এতে রুষ্ট হয়ে বিভাগের অধ্যাপকদের কয়েক জন আমার সঙ্গে কাজে অসহযোগিতা করা শুরু করেন। আমি থাকলে তাঁরা পরীক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করবেন না বলে জানিয়ে দেন।” দেবযানীদেবী জানান, এই ভাবে কয়েক মাস চলার পরে ‘অতিষ্ঠ’ হয়ে তিনি বিভাগীয় প্রধানের পদ ছেড়ে দিতে চান। কিন্তু তার আগে বিভাগের সকলকে নিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে একটি বৈঠক করতে চেয়েছিলেন তিনি। সেখানে নিজের সমস্ত কাজের উদ্দেশ্য এবং অসুবিধাগুলি ব্যাখ্যা করার ইচ্ছে ছিল তাঁর। তার পরেই তিনি প্রধানের দায়িত্ব ছেড়ে দিতেন। কিন্তু তিনি সে সুযোগ পাননি। দেবযানীদেবী বলেন, “আমি কয়েক দিন ছুটি নিয়েছিলাম। যে দিন কাজে যোগ দিলাম, সে দিনই দেখলাম অন্য এক জনকে প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অলোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দেবযানীদেবী হয়তো বিভাগের ভালর জন্যই ওই সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলি বিভাগীয় কমিটির বৈঠক ডেকে না নেওয়ায় সিনিয়র অধ্যাপকরা অপমানিত বোধ করেন।” অলোকবাবু আরও জানান, দেবযানীদেবী বলেছিলেন, তিনি ১৫ ফেব্রুয়ারি বৈঠক করে নিজের বক্তব্য জানাবেন এবং তার পরের দিন পদত্যাগ করবেন। কিন্তু ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি বৈঠক করেননি। পরিবর্তে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দিয়ে তিনি ছুটিতে চলে যান। ফিরে এসে অবশ্য তিনি ওই বৈঠক করবেন বলে জানান। এই পরিস্থিতিতে আশিসবাবুকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব নিতে বলা হয়। উপাচার্যের বক্তব্য, “দেবযানীদেবী ছুটিতে যাওয়ার আগে পদত্যাগপত্র না দিলে নতুন বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের ব্যাপারে আমি আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতাম।” এ ব্যাপারে উচ্চশিক্ষা সংসদের চিঠি পেয়েছেন জানিয়ে অলোকবাবু বলেন, “ওই চিঠির যথাযথ জবাব দেওয়া হবে। দেবযানীদেবী যে পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন, সংসদকে জানানো হবে।” |