১৯৩৫ সালে ইংলন্ডের রাজা পঞ্চম জর্জের রাজত্বের ২৫ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে তৎকালীন মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারি জমিতে ‘জুবিলি মার্কেট’ তৈরি হয়। শুরুর দিকে নিরাপত্তামূলক বেশ কিছু ব্যবস্থা চালু করা হলেও বর্তমানে তার প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই। বাজারটির মালিকানা নিয়েও অস্পষ্টতা রয়েছে। বাজারটিতে দোকানের জন্য জমির লিজ দেয় ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। এ জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বার্ষিক রাজস্ব আদায় করে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। নিয়ম অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স আদায় করে পুরসভা। কিন্তু বাজারটির সংস্কার ও পুনর্গঠনের ব্যাপারে আজ পর্যন্ত উদ্যোগী হয়নি কোনও পক্ষই। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সাফাই, বাজারের সংস্কার বা পুনর্গঠনের দায়িত্ব পুরসভার উপরই বর্তায়। তা ছাড়া জমির লিজের বন্দোবস্ত নিয়ে ব্যবসায়ীদের একাংশের সঙ্গে ভূমি সংস্কার দফতরের মামলা চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। যে কারণে বেশ কয়েক বছর যাবৎ ব্যবসায়ীদের একাংশের কাছ থেকে জমির লাইসেন্স বাবদ রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না।
আর ঝাড়গ্রাম পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, পুরসভার হাতে বাজারটির মালিকানা না-থাকায় সংস্কার ও পুনর্গঠনের কাজ করা সম্ভব হয়নি। বাজারের বিভিন্ন পট্টির ব্যবসায়ীদের একাধিক সংগঠন থাকলেও এখন সেগুলি খুব একটা সক্রিয় নয়। ব্যবসায়ীদের অবশ্য অভিযোগ, বাজার সংস্কারের ব্যাপারে পুরসভা বা প্রশাসনের আগ্রহ নেই। পক্ষান্তরে, ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “বহু দিন ধরেই তো আমরা বাজারটিকে অধিগ্রহণ করতে চাইছি। কিন্তু ব্যবসায়ীদের একাংশের আপত্তিতে তা করা সম্ভব হচ্ছে না।” ঝাড়গ্রাম মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক তপন মান্না বলেন, “বাজারটির সুষ্ঠু সংস্কার ও পুনর্গঠনের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ঐকমত্য হওয়াটা জরুরি।”
এ দিকে, আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার মতো সব উপকরণই মজুত রয়েছে এই বাজারে। রয়েছে জামা-কাপড়, মনোহারি, বাসনকোসনের দোকান, ফল, মাছ, সব্জি-সহ বিভিন্ন পট্টি। এছাড়াও রয়েছে একাধিক তেল ঘানি ও গোডাউন। আগে দু’টি দোকানের মাঝে কিছুটা ফাঁকা জায়গা রাখা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু এখন দু’টি দোকানঘরের মাঝে চাপাচাপি করে ঘুপচি উঠে গিয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী বেআইনি ভাবে দোতলা বা তিনতলা বানিয়ে নিয়েছেন। বাজারের ফল পট্টি, বাসন পট্টি, মনোহারি পট্টি ইত্যাদি অংশের মধ্যে যোগাযোগকারী রাস্তাগুলিও বেদখল হয়ে গিয়েছে। এমনকী বাজারের ভিতরে সরকারি পাতকুয়ো বুজিয়ে দোকানঘর তৈরি হয়ে গিয়েছে। সঙ্কীর্ণ, ঘিঞ্জি-ঠাসাঠাসি বাজারের মধ্যে দমকলের গাড়ি ঢোকার জায়গা নেই। ১৯৮৮ ও ১৯৮৯ সালে বিধ্বংসী আগুনে জুবিলি মার্কেটের বিস্তীর্ণ এলাকা পুড়ে খাক হয়ে যায়। ফের ২০০৫ সালে শট-সার্কিটের দরুণ কয়েকটি দোকান, একটি তেলঘানি ও গুদাম ভস্মীভূত হয়ে যায়। তবুও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের। বিদ্যুৎ দফতরের বক্তব্য, বাজারটির যা ঘিঞ্জি অবস্থা, তাতে নতুন করে বিদ্যুতের পরিকাঠামো গড়ে তোলা রীতিমতো সমস্যা। ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য “জুবিলি মার্কেটের উন্নয়নের ব্যাপারে সব দিক খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করার” আশ্বাস দিয়েছেন। |