এ বারের রেল-বাজেটে জঙ্গলমহলের জন বিশেষ কোনও ঘোষণা ছিল না তৃণমূলের মন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর। আগের রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহু পূর্ব-ঘোষণারও আর উল্লেখ নেই দাবি করে কথা-খেলাপের অভিযোগও তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। তার পরেও রেলকে ধরেই জঙ্গলমহলে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে যেতে চাইছে তৃণমূল। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রকের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় জঙ্গলমহলে এসে কিছু প্রকল্প, বরাদ্দ ঘোষণা করুনএমনটাই চাইছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। তাতে পঞ্চায়েত ভোটে সুফল মিলবে বলেই মনে করছেন তাঁরা।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের বক্তব্য, “মুকুলবাবু জঙ্গলমহলে অনেক বার এসেছেন। এখানকার মানুষের প্রত্যাশা সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। মানুষের প্রত্যাশা পূরণে নতুন রেলমন্ত্রী কার্যকরী পদক্ষেপ করবেন বলেই আমরা আশাবাদী। নতুন রেল-প্রকল্প হলে বহু মানুষের উপকার হবে। জনসমর্থনও বাড়বে।”
তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলের জন্য যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে দলীয়-প্রচারে যথেষ্ট সহায়ক হয়েছিল। মমতার পূর্ব-প্রতিশ্রুতি মতো কয়েকটি নতুন ট্রেন চালুও হয়েছে। জঙ্গলমহলের পরিবর্তিত পরস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল ফল করতে গেলে যে ধরনের সাংগঠনিক শক্তি জরুরি, তা নিয়ে সন্দিহান তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ। দলের প্রথম সারির একাধিক নেতা ঘনিষ্ঠমহলে বলছেন, দলে গোষ্ঠী-রাজনীতি যে ভাবে মাথা চাড়া দিচ্ছে, তা সামলে পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল করতে হলে চাই ‘রেল-দাওয়াই’। রেলমন্ত্রী যদি জঙ্গলমহলে এসে অন্তত আগামী বাজেটে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দের আশ্বাস দেন, তাতে ভাল ফল হবে বলেই আশা জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের।
কী ধরনের রেল-আশ্বাস আগামী পঞ্চায়েত ভোটে দলকে লাভবান করবে? দলীয় বিধায়কদের কথায় সেই ইঙ্গিতও স্পষ্ট। নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু যেমন বলেন, “বেলদা থেকে নয়াগ্রাম হয়ে ওড়িশার বারিপদা পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেলপথটি হলে জঙ্গালাকীর্ণ নয়াগ্রাম ব্লকের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সূচিত হবে। রেল-প্রকল্প রূপায়িত হলে বহু মানুষের সমর্থন পাওয়াটাও সহজ হবে।” গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো বলেন, “আমার বিধানসভা এলাকার মধ্যে পুরো সাঁকরাইল ব্লক এবং ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের কয়েকটি অঞ্চল রয়েছে। ওই সব এলাকার মানুষের স্বার্থে নতুন রেলপথের দাবি জানাব।” সে ক্ষেত্রে মুকুলবাবুর কাছে ঝাড়গ্রাম থেকে নয়াগ্রামের খড়িকামাথানি পর্যন্ত আরও একটি রেলপথের প্রস্তাব করা হবে বলে জানিয়েছেন চূড়ামণিবাবু। দুলালবাবু বলেন, “ঝাড়গ্রাম-খড়িকামাথানি রেলপথ হলে নয়াগ্রাম বিধানসভার অন্তর্গত গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের বাসিন্দারাও উপকৃত হবেন। কারণ, ঝাড়গ্রাম থেকে খড়িকামাথানি রেলপথ করতে হলে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের উপর দিয়েই যেতে হবে।”
লালগড়ে রেলপথ, ঝাড়গ্রাম-পুরুলিয়া রেলপথের সমীক্ষার কাজ শুরুর পাশাপাশি জঙ্গলমহলের জন্য নতুন কিছু রেল-প্রকল্পের দাবি জানিয়ে রেলমন্ত্রীর কাছে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদাও। সুকুমারবাবু বলেন, “ঝাড়গ্রামে কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেনের স্টপেজ দেওয়ার জন্যও রেলমন্ত্রীকে অনুরোধ করব।” |